ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

বাইক্কা বিলের প্রতিবেশ ক্ষতি করে মৎস্যখামার!

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২১
বাইক্কা বিলের প্রতিবেশ ক্ষতি করে মৎস্যখামার! বাইক্কা বিল সংলগ্ন অংশে মাটিতে ফেলে ভূমির ক্ষতিসাধন। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: ব্যক্তি পর্যায়ে মৎস্যখামার তৈরির উদ্যোগে বাইক্কা বিল সংলগ্ন সীমানায় গাছ কেটে প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। মাটি কেটে বাইক্কা বিল অংশের মধ্যে ফেলে সামগ্রিক প্রতিবেশ ব্যবস্থাও বিনষ্ট করে চলেছে প্রভাবশালীরা।

এ ব্যাপারে জোর আপত্তি জানালেও তা নিচ্ছেন না আমলে।

বড়গাঙ্গিনা সম্পদ বাস্তবায়ন সংগঠন (আরএমও) সূত্র জানায়, ১৬ ফেব্রুয়ারি আরএস দাগ নম্বর- ১০০১ এর ভূমিতে বনায়নের সীমানা দিয়ে মৎস্য খামার প্রতিষ্ঠার জন্য জনৈক আলী ইমাম বড়গাঙ্গিনা খাল জলমহালের পাড়ে মাটি কাটার মেশিন প্রবেশ করিয়ে বাইক্কা বিলের রোপিত গাছ কেটে মৎস্য খামার তৈরি করছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাইক্কা বিল সংলগ্ন জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি করা হচ্ছে। ফলে সরকার ঘোষিত স্থায়ী মৎস্য অভয়াশ্রম বাইক্কা বিলের প্রতিবেশ ব্যবস্থা হুমকির সম্মুখীন। এছাড়াও সামগ্রিকভাবে হাইল হাওরের জীববৈচিত্র্যের উপর পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। মাটি কাটার যন্ত্র ব্যবহারের ফলে শব্দদূষণসহ পাখিদের প্রতিবেশ ব্যবস্থার ক্ষতি হচ্ছে।

বড়গাঙ্গিনা সম্পদ বাস্তবায়ন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মিন্নত আলী বাংলানিউজকে বলেন, এই ভূমি নিয়ে জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজার মহোদয় বাদী হয়ে যে মামলাটি করেছেন তা চলমান। যার মামলা নম্বর ল্যান্ড সার্ভে মামলা ৩২৫/২০১৬। কোনো ভূমি নিয়ে বিচারাধীন মামলায় কীভাবে আলী ইমাম ভূমিতে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন?

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বাইক্কা বিল সংলগ্ন মৎস্যখামারের মালিক আলী ইমাম বাংলানিউজকে বলেন, আমার জায়গার দাগ নম্বর ১০০১। ভূমি অফিস থেকে আমি ফিশারি করার জন্য অনুমোদন নিয়ে সেই দাগে প্রস্তুতিমূলক কাজ করছি। আরএমও সংগঠন আমার জায়গা গাছপালা লাগিয়ে তাদের বলে দাবি করছে। আমি আমার জায়গা কাজ করতে গেলে তাদের আপত্তি থাকবে কেন?

১০০১ নম্বর দাগে কোনো মামলা নেই। মামলা হয়েছে ১০৪৯ নম্বর দাগে। মামলাটি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ফারাজুল কবির বাংলানিউজকে বলেন, আরএমও সংগঠন আমার কাছেও অভিযোগ করেছে। বিষয়টি আমি যতটুকু বুঝেছি যে, বাইক্কা বিলের যে দাগ অর্থাৎ ১০০১ দাগ নিয়ে সমস্যা রয়েছে, সেটা নতুন করে সরকারি সার্ভেয়ার নিয়ে পুরো সীমানাটি মাপতে হবে। তাহলেই জানা যাবে সত্যিকার অর্থে সেই দাগের মালিক কে? সরকার? নাকি কোনো ব্যক্তি?

তিনি আরো বলেন, সেই দাগটি যদি সরকারি জায়গায় হয় তাহলে সেখানে মাটি কাটা বা মাটি ভরাট করা কিংবা গাছকাটাসহ ভূমির প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করা- এ সবই অন্যায়ের শামিল। আর দাগটি যদি আলী ইমামের হয় তাহলে তিনি যা করছেন তার জায়গাতেই করছেন।

যেহেতু বাইক্কা বিল আমাদের অন্যতম জাতীয় জলাভূমি সম্পদ। তাই এর প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করা যাবে না বলে জানান সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। আমাদের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ছুটিতে আছেন। তিনি এলেই আমি বাইক্কা বিল সংলগ্ন সেই জায়গাগুলো মাপজোকের জন্য পাঠাবো। আশা করি, তখনই বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২১
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।