ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

ভাঙা বাঁধ সংস্কার না হওয়ায়

দিনে ২ বার ভাসছে উপকূলের নিম্নাঞ্চল

সুমন সিকদার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৭ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৫
দিনে ২ বার ভাসছে উপকূলের নিম্নাঞ্চল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

উপকূলের নিম্নাঞ্চল ঘুরে: বর্ষার শুরুতেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে উপকূলের নদ-নদী। দিনে দুইবার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে ভাসছে বরগুনাসহ উপকূলের নিম্নাঞ্চল।

সিডর, আইলা, মহাসেনের আঘাতে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ পুরোপুরি সংস্কার না হওয়ায় ভাসছে গ্রামের পর গ্রাম।

বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ভোলাঝালকাঠিসহ উপকূলের বিভিন্ন জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণ ও ভাঙা বেড়িবাঁধ ও কিছু কিছু এলাকায় বেড়িবাঁধ না থাকায় সাগরের অস্বাভাবিক জলোচ্ছ্বাসের আতঙ্কে রয়েছে উপকূলের লাখ লাখ মানুষ। বার বার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ায় উপকূলবাসীর এ আতঙ্ক বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

উপকূলীয় জেলা বরগুনার বেতাগী, আমতলী, তালতলী ও পাথরঘাটাসহ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে অর্ধ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দিনে রাতে দুই বার বুক সমান পানিতে ভাসছে দুর্গত এসব গ্রামের মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বরগুনা কার্যালয়ের বৃষ্টি পরিমাপক শাখার কর্মকর্তা আবদুল মতিন বাংলানিউজকে জানান, ২০ জুন  থেকে জেলার সর্বত্র হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এক সপ্তাহে জেলায় ৪৫৪ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। শনিবার ১৮ মিলিমিটার, রোববার ১৬ দশমিক ৩ মিলিমিটার, সোমবার ৪১ মিলিমিটার, মঙ্গলবার ৯০ মিলিমিটার, বুধবার ১৩৩ মিলিমিটার, বৃহস্পতিবার ৪৪ মিলিমিটার, শুক্রবার (২৬ জুন) দুপুর একটা পর্যন্ত ১১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে, এ পরিমাণ আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জেলার নদ-নদীতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দেড়-দুই ফুট বেশি উচ্চতার জোয়ার দেখা দিচ্ছে বলে জানান মতিন।

এদিকে, প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট তীব্র জোয়ারের পানি ঢুকে পাথরঘাটা উপজেলার পদ্মা, রুহিতা, জিনতলা, বাদুরতলা, কোড়ালিয়া, নিজ লাঠিমারা, ছোট টেংরা এবং গাববাড়িয়া গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

বেতাগী উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ মেরামত না হওয়ায় জোয়ার ও বর্ষণে পানিতে ভাসছে ঝোপখালী, ভোলানাথপুর, জগাইখালী, কালিকাবাড়ি, গাবতলী, আলিয়াবাদ, জোয়ার করুণা, গেরামর্দন গ্রামের মানুষ।

আমতলী উপজেলার পশুরবুনিয়া, পশ্চিম ঘটখালী, গুলিশাখালী, আমতলী সদর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া একই উপজেলার পৌর শহরের শহর রক্ষা বাঁধে বুড়িশ্বর নদীর জোয়ারের চাপে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে ঝুঁকিতে রয়েছেন পৌর শহরের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।  

রাখাইন অধ্যুষিত তালতলী উপজেলার জয়ালভাঙা, নলবুনিয়া এবং তেঁতুলবাড়িয়া গ্রাম জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে এসব এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ভাঙন কবলিত বড়ইতলা গ্রামের বাসিন্দা ফোরকান বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে আতঙ্কে থাকি কখন জোয়ারের পানিতে সবকিছু ভেসে যায়। প্রতিদিন দুই বার জোয়ারের পানিতে ভাসতে হচ্ছে আমাদের। কিন্তু সরকার এই বাঁধগুলো মেরামতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে নি।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, প্রবল বর্ষণ ও অধিক জোয়ারের চাপে পাথরঘাটা উপজেলার পদ্মা, রুহিতা এলাকার বেশ কয়েকটি স্থানে বাঁধ ভেঙে গেছে। আবার বেশ কিছু এলাকায় ভাঙা বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় সেসব স্থান দিয়ে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য পদ্মা, রুহিতা ও জিনতলা এলাকার বাঁধ মেরামতে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। পানি কমে এলে কাজ শুরু হবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মীর জহুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, জোয়ার ও প্রবল বৃষ্টিতে পাথরঘাটায় ভাঙন কবলিত এলাকা আমি পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিকভাবে সেখানে ক্ষতিগ্রস্তদের শুকনা খাবার ও চাল বিতরণ করা হয়েছে। বরগুনার বাঁধগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেগুলো স্থায়ীভাবে মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৫     
এমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।