হাজারো সংকটে ভরা উপকূলের শৈশব-কৈশর। এখানকার জনপদে প্রত্যেকের, বিশেষ করে মেয়েদের শৈশব-কৈশরের অপরিহার্য বিষয় অপুষ্টি আর অশিক্ষা।
উপকূলের প্রান্তিক জনপদ ঘুরে: কেবল সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে তানিয়া আক্তার। কোনো কিছু বুঝে না উঠতেই শিশু বয়সে নিজের মত না থাকা সত্ত্বেও বাবা-মায়ের মতেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বাধ্য হয় সে। সংসারের ধকল বইয়ে বেড়াতে গিয়ে নিজের চাওয়া-পাওয়ার কথা মনে নেই। মনের কোণে কোনো আকাঙ্ক্ষা জমাট বাঁধেনি। সুযোগও হয়নি। বিয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই শ্বশুর বাড়ির কাজে প্রবেশ।
দেখতে যেমন মায়াবী ঠিক কথাবার্তায় অসম্ভব বুদ্ধিমত্তার ছাপ তানিয়া আক্তারের মধ্যে। শ্বশুরবাড়ির সংসারের সব কাজ সামাল দেয়। তারপরে আবার মৎস্য শ্রমিক স্বামী বশিরের সেবা-যত্ম। বাড়তি শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা, দেখাশোনা। তারপরেও কিশোরী এ বধূর ওপর শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামীর সু-নজর পড়েনি। বিয়ের সময় তানিয়ার বাবার বাড়ি থেকে সাধ্য অনুযায়ী উপহার সামগ্রী দিয়ে শ্বশুরবাড়িতে তুলে দেয়। কিন্তু তাতেও মন ভরেনি শ্বশুরবাড়ির লোকজনের। পাষণ্ড স্বামীও তানিয়াকে প্রতিনিয়ত নির্যাতন করতো যৌতুকের জন্য।
তানিয়ার বিয়ের এক বছর পূরণ না হতেই আবার বাবার বাড়িতে আসতে বাধ্য হয়। একটিমাত্র কানের গহনা দিতে না পারায় তানিয়ার সুখের সংসারে যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। একটি মাত্র কানের স্বর্ণের গহনার কারণে তানিয়ার জীবনে কালো অধ্যায়ের সূচনা হবে তা জানতো না সে। এটা কতখানি সুখ কিংবা দুঃখের, সেটা ভেবে দেখার সময়ও হয়তো পায়নি তানিয়া। তবে, তার চোখে-মুখে দৃশ্যমান সব কষ্টের ছাপ।
পাথরঘাটা উপজেলার তাফালবাড়িয়া গ্রামের মো. লিটন মিয়ার একমাত্র মেয়ে তানিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৪ সালের মার্চ মাসে বাবা-মায়ের জন্যই বিয়ে বসতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে প্রতিনিয়ত নির্যাতন করতেন। বিয়ের সময় স্বর্ণালঙ্কারসহ উপহার সামগ্রী দিলেও কানের জিনিস না দেওয়ায় অনেকবার বাবার বাড়িতে পাঠায়। কিন্তু শেষমেস কানের স্বর্ণালঙ্কার না দেওয়ায় বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তালাক দেওয়া হয় তানিয়া আক্তারকে।
তানিয়া আক্তার বাংলানিউজকে বলে, ওরা আমার জীবনকে নষ্ট করে দিয়েছে। একটি ভুলের জন্য আজ আমার এ অবস্থা। আমার মতো কোনো মেয়ে যেন এ পথে পা না বাড়ায়, আর যেন কোনো মেয়ের জীবন অকালে নষ্ট হয়ে না যায়।
তবে, তানিয়া পুনরায় তার জীবনকে গড়তে চায়। তাই, বিয়ের ৮ মাসের মাথায় তালাক হওয়ার পর বাড়ির পাশে একটি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে তানিয়া। এখন সে নিয়মিত বিদ্যালয়ে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৫
পিসি
** অপরিণত বয়সেই মা
উপকূল থেকে উপকূল
উপকূলের জীবন
তানিয়ার বিবাহ বিচ্ছেদ অতঃপর...
শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।