ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

দুবলার চরের রাসমেলা থেকে জেসমিন পাপড়ি

সুন্দরবনে আরও ২ র‌্যাব ক্যাম্প হবে

জেসমিন পাপড়ি, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৫
সুন্দরবনে আরও ২ র‌্যাব ক্যাম্প হবে

দুবলার চর (সুন্দরবন) থেকে: পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দবরবনকে বনদস্যু মুক্ত করতে বনের ভিতরে আরও দু’টি র‌্যাব ক্যাম্প করা হবে বলে জানিয়েছেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।

বুধবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বঙ্গোপসাগরের বুকে কুঙ্গা ও মরা পশুর নদীর মোহনা এবং সুন্দরবনের পাশের ছোট্ট দ্বীপ দুবলার চরে আয়োজিত রাসমেলা উদ্বোধনকালে তিনি বিষয়টি জানান।



হিন্দু ধর্মাবলম্বী পূণ্যার্থীরা এ সময়ে পূণ্যস্নানের জন্য এ চরে আসেন। এটা দীর্ঘদিনের রেওয়াজ। তবে এ উৎসব এখন আর শুধু হিন্দুদের নেই। নানা ধর্ম, বর্ণের মানুষের সমাগম ঘটে এখানে। আছে বিদেশি পর্যটকও।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বেনজীর আহমেদ বলেন, সুন্দরবন আমাদের সম্পদ। বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশর জন্য প্রকৃতির অনন্য আশীর্বাদ। এখানে নির্বিঘ্নে চলাফেরা, জীবনধারণ, এখানকার জেলে বা বনজীবীদের রাষ্ট্রীয়,  সাংবিধানিক অধিকার। বনদস্যুরা কোনোভাবেই তা কেড়ে নিতে পারে না।

তিনি বলেন, বনদস্যু দমনে বঙ্গোপসাগরে বুকে বাংলাদেশের প্রায় শেষ প্রান্তে র‌্যাবের একটি ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। দফায় দফায় যৌথবাহিনীর অভিযানে বনদস্যুদের দৌরাত্ম্য এরই মধ্যে অনেকাংশে কমেছে। তবে তাদের নিশ্চিহ্ন করতে আরও দুটি র‌্যাব ক্যাম্প সুন্দরবনে করা হবে।

র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, কোনো বনদস্যুকে ছাড় দেওয়া হবে না। কোনো গরিব মৎস্যজীবী যাতে আর ডাকাতের হাতে জিম্মি না হয়, সেজন্য তাদের দমনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

তিনি বনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা যখন যেভাবে কোনো বনদস্যুর অস্তিত্বের কথা জানবেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে খবর দিন। যে খবর দেবে, তার নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের।

তিনি রাসমেলা সম্পর্কে বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িকতার ইতিহাস। এদেশ অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। এই রাসমেলা তার প্রমাণ। সনাতন সম্প্রদায়ের পূজা হলেও উৎসবটা সার্বজনীনভাবে পালন হচ্ছে।

বেনজীর আরও বলেন, পাহাড়ি সম্প্রদায়ের বিজুসহ এ ধরনের অনুষ্ঠান আরও বড় পরিসরে আয়োজন করা হবে, যেখানে লাখ লাখ দেশি পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদেরও সমাগম ঘটবে।

সরকারি হিসেবে গত বছর দেড় লাখ সুন্দরী কাঠ চুরি হয়েছে উল্লেখ করে  রাসমেলার আয়োজক মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন আহমেদ দাবি করেন, এ তথ্য ঠিক নয়। আমাদের হিস‍াব বলছে, প্রায় চার লাখ সুন্দরী গাছ এ সময় কাটা হয়েছে। সুন্দরবন রক্ষায় সরকারের নজরদারি আরও বাড়াতে হবে।

একইসঙ্গে তিনি গাছ না কাটার জন্য জেলেদের প্রতিও অনুরোধ জানান।

জিয়াউদ্দিন বলেন, মাছের মৌসুমে বনদস্যুদের উৎপাত বাড়ে। তারা জেলেদের জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা আদায় করে।

তাই এ সময়টা নিয়মিত টহলের পাশাপাশি হেলিকপ্টার দিয়ে টহল বাড়ানোর জন্য র‌্যাবের কাছে অনুরোধ জানান তিনি।

এদিকে রাসমেলা কেন্দ্র করে দু’দিন আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা দুবলার চরে উপস্থিত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) পূর্ণিমা তিথিতে পূণ্যস্নানের মধ্যদিয়ে শেষ হবে রাস উৎসব। বাংলা কার্তিক মাসের শেষে বা অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিকের ভরা পূর্ণিমার সময় এ রাসমেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ রাতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পূর্ণিমার জোয়ারের নোনা পানিতে স্নান করবেন। এতে তাদের পাপ মোচন হয়ে মনের কামনা পূর্ণ হবে বলেই বিশ্বাস করেন তারা।

এ উপলক্ষে নানান পূজা-অর্চনার করছেন তারা। এরই ফাঁকে ওড়ানো হবে ফানুসও।

স্থানীয়রা জানান, দুবলার চরের রাসমেলার ইতিহাস বহু পুরনো। বিভিন্নজন এ মেলার ইতিহাস নিয়ে শোনালেন নানান কাহিনী।

গত ত্রিশ বছর ধরে প্রতিবছর এ মেলায় অংশগ্রহণকারী একজন কথিত গল্প থেকে জানালেন, ১৯২৩ সালে ঠাকুর হরিচাঁদের অনুসারী হরি ভজন নামে একজন হিন্দু সাধু এ মেলা শুরু করেছিলেন। চব্বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সুন্দরবনে গাছের ফল-মূল খেয়ে অলৌকিক জীবন-যাপন করতেন সেই সাধু।

আবার একটি মতে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অবতার শ্রীকৃষ্ণ শত বছর আগের কোনো এক পূর্ণিমা তিথিতে পাপমোচন এবং প‍ূণ্যলাভে গঙ্গাস্নানের স্বপ্নাদেশ পান। সেই থেকে শুরু হয় রাস মেলার।

আবার কারও কারও মতে, শারদীয় দুর্গোৎসবের পর পূর্ণিমার রাতে বৃন্দাবনবাসী আটজন গোপীর সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের রাসনৃত্য মাতা উপলক্ষে দুবলার চরে এ রাস উৎসব পালিত হয়ে আসছে।

এর আগে মেলায় অংশ গ্রহণকারীরা জানান, এদিন সূর্য ওঠার আগেই দুবলার চরের সমুদ্র সৈকতে প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রার্থনায় বসবেন প‍ূণ্যার্থীরা। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রের জোয়ার শুরু হয়। জোয়ারের পানি পূণ্যার্থীদের ছুঁয়ে দিলেই তারা স্নানে নামেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৫
জেপি/এএ

** ‘কাজের মেয়ে’ নয়, ওরা এখন স্কুলে যায়
** ওই যায় হেলিকপ্টার...
** ‘চাঁদের আলোয়’ রাসযাত্রা শুরু
** বন বিভাগের অনুমতি নিতেই রাত পার

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।