উপকূল থেকে ফিরে: উপকূলীয় জনপদ পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালি উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ‘চর মন্তাজ’।
নদী ভাঙ্গনের কারণে ভূমিহীন, সহায়হীন, আশ্রয়হীন এখানকার বাসিন্দাদের জন্য ২০০৫ সালে সাড়ে সাত একর জমির ওপর গড়ে ওঠে উপকূলীয় আশ্রায়ন কেন্দ্র।
একশ’ পরিবারের এই আশ্রায়ন কেন্দ্রের অবস্থা এখন বড়ই করুণ। ফলে অনেকেই এখানকার বাস গুটিয়ে বেড়ি বাঁধে গিয়ে ঘর বাঁধার কথা ভাবছেন।
বুড়ো গৌরাঙ্গ নদীর পাড় ঘেষা স্লুইস গেট বাজারের খাল পাড়ে এই আশ্রায়ন কেন্দ্র তৈরি হয়েছিল সরকারি খাস জমির ওপর। কয়েকটি লাইনে উঠেছিল টিনের ঘর। তৈরি হয়েছিল পরিকল্পিত ‘পাকা ল্যাট্রিন’। একশ’ পরিবারের জন্য বসানো হয়েছিল ৫টি গভীর নলকূপ। পরিবারগুলোর জন্য ছিল ২টি পুকুর। ঘরগুলোও ছিল তুলনা মূলক প্রশস্ত। কিন্তু এর সবই এখন অতীত স্মৃতি। আশ্রায়ন কেন্দ্র এখন কেবল বাসিন্দাদের দীর্ঘশ্বাস আর বঞ্চনার প্রতীকে রূপ নিয়েছে।
ঘরের চালের অবস্থা খুবই করুণ। নিম্নমানের টিন ব্যবহার করায় টিনের রং আর মরিচার তফাত বোঝা দায়। বেড়া খুলে পড়ছে কোথাও, কোথাও খুলে পড়েছে দরজা অথবা জানালা। একটু বৃষ্টি হলেই ঘরের মধ্যে পানি পড়ে একাকার হয়। ল্যাট্রিন নষ্ট হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়েছে অনেক আগেই। চারটি নলকূপ এখন কেবল স্মৃতি। মুছে গেছে সেগুলোর চিহ্ন পর্যন্ত। পুকুর দুটি দখলে চলে গেছে প্রভাবশালীদের। এবার চলছে জমি দখলের পাঁয়তারা। এরই মধ্যে আদালতে জমির দখল চেয়ে মামলাও করেছে একটি মহল। বসবাস অযোগ্য ঘরে বাস করতে না পেরে খোলা স্থানে ঘর তুলতেও টাকা দিতে হচ্ছে ওই মহলকে।
চর মন্তাজের এই আশ্রায়ন কেন্দ্রের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেনের ভাষায়, ‘এই ঘর থুইয়্যা অবদায় থাহা ভালো ছেলে (ছিলো)। ’ আনোয়ার হোসেনের মতোই একই অভিমত শাহিনুর বেগম ও লুৎফর মোল্যার। বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপ কালে যেমন তারা বলছিলেন, ‘ঘরে থাকা যায়না। একটু বৃষ্টি হলেই সারা ঘর পানিতে ভেসে যায়। দুর্যোগের রাতগুলোতে সারা রাত বসে কাটাতে হয় কাকভেজা হয়ে। কতোবার কতোজন এসে আমাদের এইসব দেখে গেলো, ছবি তুলে নিয়ে গেলো। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়না। দুর্ভোগ কমেনা আমাদের। ’
মমতাজ বেগম বলছিলেন, একশ’টা পরিবারের জন্য এখন মাত্র একটি টিউবওয়েল আছে। তাতেও লবণ পানি ওঠে। আশ্রায়ন কেন্দ্রের পুকুর দুটোতে আমরা যেতে পারি না। এগুলো দখলে চলে গেছে। খালের পানি ব্যবহারের ফলে রোগ-বালাই লেগে আছে।
এখানের বাসিন্দাদের জীবন আসলে এমনই অসহায়ত্বে মোড়া। স্থানীয় ফিরোজ হাওলাদার ও জাহাঙ্গীর মাতুব্বর এখন গিলে খেতে চাচ্ছে অসহায় এই মানুষগুলোর শেষ আশ্রয়টুকুকেও। এরই মধ্যে তারা আশ্রয়কেন্দ্রের জমি নিজেদের দাবি করে আদালতে মামলা ঠুকেছে। তাই ঘর সংস্কার বা ফাঁকা জায়গায় নতুন ঘর তুলতে তারা এখানকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে আদায় করছে নগদ টাকা। যেমন এই আশ্রয় কেন্দ্রের বাসিন্দা তানিয়া বলছিলেন, তাদের বসবাস করা ঘরের অবস্থা করুণ হওয়ায় নতুন ঘর তুলতে গেলে বাধা আসে ফিরোজ হাওলাদারের তরফে। তখন নগদ ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিষয়টির সুরাহা করেন তানিয়ার ভাই।
এই আশ্রায়ন কেন্দ্রের পাশেই বাড়ি শাজাহান হোসেনের। বাংলানিউজকে তিনি বলছিলেন, এখানকার অনেকেই দুর্ভোগের ভয়ে ঘর ছেড়ে বাঁধে গিয়ে ঘর তুলেছেন। যারা আছেন, তাদের অবস্থাও ঘর ছাড়ার মতো। সরকারি এই সম্পত্তি সুরক্ষা ও সংস্কারের দায় সরকারের। এই সব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে প্রশাসনকেই উদ্যোগ নিতে হবে’ দাবি তার।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৬
আরএম/আরআই