ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

রোদ্রে পুড়ি, বৃষ্টিতে ভিজি খোঁজ নেয় না কেউ

সুমন সিকদার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৬
রোদ্রে পুড়ি, বৃষ্টিতে ভিজি খোঁজ নেয় না কেউ

প্রান্তিক উপকূলের আশ্রয়ন প্রকল্প ঘুরে: বৃষ্টি নামলে পোলাপাইন লইয়া ঘরের এক কোনায় ঘাপটি মারি থাহি কহন বৃষ্টি থামবো। বৃষ্টি না থামলে কখনো কখনো সারারাতও জাইগ্গা কাডাইয়া দেওন লাগে।

এমনই পোড়া কপাইল লইয়া জন্মাইছি রোদ্রে পুড়ি আবার বৃষ্টিতেও ভিজি, হেরপরো মোগো খবর নেয় না কেউ।

এভাবেই পোটকাখালী আশ্রয়ন প্রকল্পে কষ্ট করে বসবাসের কথা বললেন আবদুস সালাম নামের এক সবজি বিক্রেতা। পরিবার পরিজন নিয়ে এভাবে এখানে বসবাস যে কতো কষ্টের তা যারা বসবাস করছে তারা ছাড়া আর কেউ বলতে পারবে না।

উপকূলের চরাঞ্চলে ও বেড়িবাঁধের বাইরে নির্মিত আশ্রয়ন প্রকল্পগুলো নির্মাণের পর এখন পর্যন্ত মেরামতের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। দীর্ঘদিন মেরামত না হওয়ায় ঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তবুও শেষ আশ্রয়স্থল এ আশ্রয়নেই থাকতে হচ্ছে তাদের।
 
আশ্রয়ন প্রকল্পে সরেজমিন দেখা যায়, প্রকল্পের ঘরগুলোর খুঁটি (পিলার) মরিচা ধরে খসে পড়ছে। সামনে থেকে ঘরগুলোর অবস্থা  মোটামুটি ভালো দেখা গেলেও ভিতরে ঢুকলে দেখা যায় মাথার উপরের টিনে মরিচা ধরে অসংখ্য ছিদ্র হয়ে গেছে। ঘরের দরজা, জানালা, বেড়া ভাঙা। সামান্য বৃষ্টি হলে চালের ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ে। ঘরে থাকা চাল, ডাল, শুকনো খাবারসহ জামা কাপড় ভিজে যায়। বর্ষাকালে রাতে বৃষ্টি হলে সারারাত জেগে চৌকির (খাটের) উপর পলিথিন দিয়ে ছেলে মেয়েদের নিয়ে কোন মতে বসে থাকেন তারা।  

অভাবের সংসারে পরিবার পরিজনের ভরণ-পোষণ জোগাড় করাই কঠিন হয়ে পড়ে। এরপর ভাঙা ঘর মেরামত করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। এ অবস্থাতেই রোদ্রে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে আশ্রয়ন প্রকল্পের অসহায় মানুষগুলো অনেক দুঃখ কষ্ঠের মধ্যে কোন রকমে জীবন কাটাচ্ছেন।

পোটকাখালী আশ্রয়ন প্রকল্পের আবদুস সালাম, সোনা মিয়া, কেরামত আলী, শহিদুল ইসলাম ও ফরহাদ মাঝি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গরিব মানুষ দিন আনি দিন খাই। সরকার আমাগো আশ্রয়ন প্রকল্পে আশ্রয় দিছে। এহন হ্যা হইছে দুর্ভোগের আরেক নাম। ঘরগুলোর উপরের টিনের চাল মরিচা ধইরা ছিদ্র হইয়া গেছে। বর্ষাকালে বৃষ্টি হইলে ঘরে থাকা যায়না। উপর থেইকা পানি পইড়া ভিজ্জা যায়। পোলাইন নিয়া খুব কষ্টে আছি। আমরা বেকেরে জানাইছি। ভোট আইলে বেকে দেইখা যায়। ভোট শেষ হলে আমাগো ভুইলা যায়। আমাগো দেহার যেন কেউ নাই।

বরগুনা জেলা প্রশাসক ড. মো. বশিরুল আলম ঘরগুলো মেরামতের আশ্বাস দিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, মাঠ পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ভূমি কর্মকর্তারা সরেজমিন আশ্রয়ন প্রকল্পগুলোর খোঁজখবর নিচ্ছেন। তাদের প্রতিবেদন হাতে পেলেই এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের কাছে বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠানো হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৬
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।