ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূল থেকে উপকূল

জাহাজ চলে স্কুল মাঠে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৬
জাহাজ চলে স্কুল মাঠে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

লক্ষ্মীপুর: কিছুদিন আগেও যে মাঠে ছাত্র-ছাত্রীরা খেলাধূলা করতো। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমাবেশ হতো।

প্রায় প্রতি বিকেলে স্থানীয় ক্লাবগুলোর ক্রিকেট/ফুটবল খেলা দেখতে দর্শকদের ভিড় জমতো। সেই মাঠে এখন উত্তাল ঢেউ। জাহাজ চলে, জেলেরা ইলিশ ধরে।  

এটি লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার ফলকন উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ। মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে স্কুল মাঠ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ভেঙে গেছে স্কুলে যাতায়াতের রাস্তাটিও। বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নিলামে দেওয়া হয়েছে স্কুল ভবনটি।
১৯৭২ সালে স্থানীয়দের উদ্যোগে ফলকন উচ্চ বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮৫ সালে বিদ্যালয়টি এমপিভুক্ত হয়। ভয়াবহ ভাঙনের কারণে চলতি বছরের ২৮ মে পাকা ভবনের বিদ্যালয়টি বন্ধ করে অন্যত্র পাঠদান কার্যক্রম চালু করা হয়।  

ফলকন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু জাকের বলেন, বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আগে ৭৩০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ফলকন ইউনিয়ন পরিষদের পাশে একখণ্ড জমি কিনে বিদ্যালয়টি স্থান্তরিত করা হয়। টিনের ঘরে বর্তমানে শিক্ষার্থীদের পাঠাদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

কমলনগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও কাদির পণ্ডিতের হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম ইকবাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৩ সালে কাদির পণ্ডিতের হাট উচ্চ বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ভাঙনের ফলে পশ্চিম চর লরেন্স গ্রামে বিদ্যালয়টি সরিয়ে আনা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ভাঙনে স্থানান্তরিত বিদ্যালয়গুলোর বর্তমান অবকাঠামো খুবই নাজুক। সে কারণে ওই সব বিদ্যালয়ে দ্রুত একাডেমিক ভবন নির্মাণ জরুরি।

একই পরিস্থিতি হয়েছে সফিকগঞ্জ বাজার দাখিল মাদ্রাসা, ফলকন সিদ্দিকিয়া দাখিল মাদ্রাসা, চর কালকিনি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও জগবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের।

ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে দক্ষিণ চর কালকিনি হাজী এছাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মতিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর চর কালকিনি কে আলম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ-পূর্ব চর লরেন্স সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তালতলি বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্যচর জগবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর-পশ্চিম চর জগবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লরেন্স খানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর জগবন্ধু মুন্সিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম লরেন্স সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর জগবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডিএস ফলকন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এছাড়া, ভাঙনের মুখে পড়ায় দক্ষিণ-পূর্ব চর জগবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও লুধূয়া ফলকন ফয়েজুন নাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। হুমকির মুখে রয়েছে চর জগবন্ধু ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা ও মতিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়।
উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে মেঘনার ভাঙনে উপজেলার ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪টি উচ্চ বিদ্যালয় ও ৩টি মাদ্রাসা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি মাদ্রাসা ও ২টি উচ্চ বিদ্যালয়।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি কামরুল হাসান বলেন, ভয়াবহ ভাঙনের কারণে দিন-দিন উপজেলা ছোট হয়ে আসছে। একাধিকবার ভাঙনের শিকার হয়েছে কয়েকটি বিদ্যালয়। এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কমলনগর উপজেলা মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভাঙনের মুখে পড়া বিদ্যালয়গুলো স্থান্তরিত করা হয়েছে। এ অবস্থায়ও শিক্ষার্থীরা যাতে ঝরে না পড়ে সে ব্যাপারে শিক্ষা অফিস ও শিক্ষকরা কাজ করছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৬
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।