ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূলীয় নারীর লোনা জীবনের কথা

শেখ তানজির আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৬ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৮
উপকূলীয় নারীর লোনা জীবনের কথা নৌকায় করে চিংড়ি রেণু আহরণ করছেন উপকূলের নারীরা। ছবি: বাংলানিউজ

সাতক্ষীরা: বনে হিংস্র পশু আর নদীতে সাপ-কুমিরের ভয়। প্রবল স্রোতের সঙ্গে রয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কাও। সেই সঙ্গে রোগ-বালাই তো লেগেই থাকে। 

তারপরও লবণাক্ত গলা পানিতে ভিজে সুন্দরবনের চুনা নদীতে বাগদার রেণু ধরে দিন কাটে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের ফিরোজা খাতুনের (২৫)।  

শুধু ফিরোজা খাতুন নন, সাতক্ষীরা উপকূলের হাজার হাজার নারী এভাবেই রেণু সংগ্রহ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন।

 

জোয়ারের পর ভাটা শুরু থেকে পরবর্তী জোয়ার পর্যন্ত নৌকা ও হাত জাল নিয়ে নদী থেকে নদীতে রেণু সংগ্রহ করেন তারা। সুন্দরবনের গায়ে সুবিধাজনক জায়গায় নৌকা বেঁধে নেমে পড়েন নদী বা কোনো খালে। দৈনিক চার-পাঁচ ঘণ্টা গলা পানিতে ভিজে সুন্দরবনের গাছ ধরে ধরে সংগ্রহ করেন রেণু। যা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দুই থেকে আড়াইশ’ টাকা আয় হয় তাদের।  

গাবুরা গ্রামের আব্দুস সাত্তারের স্ত্রী সাহানারা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আগে এলাকায় কৃষি কাজ হতো। বাড়ির উঠানে শাক-সবজিও হতো। কিন্তু আইলার পর গোটা এলাকা লবণাক্ত হয়ে গেছে। এখন আর কিছুই হয় না। কাজ-কাম নেই। বাধ্য হয়ে রেণু ধরতে গাঙে যেতে হয়। ওর বাপও যায়, আমিও যাই। দু’জনে যা পাই তাতে কোনো মতে দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে চলে।  

পানিতে ভিজে চিংড়ি রেণু আহরণ করছেন উপকূলের এক নারী।

খোলপেটুয়া নদীতে রেণু আহরণরত আনোয়ারা খাতুন বাংলানিউজকে জানান, সারাদিন লোনা পানিতে শরীর ভিজা থাকে। লবণের কারণে প্রায় সবাই রক্তশূন্যতা ও পুষ্টিহীনতায় ভোগেন। পিছু ছাড়ে না আমাশয়, চুলকানি, মাথাব্যথা, ঘা, পাঁচড়া, ডায়রিয়া, গ্যাস ও সাদা স্রাবের সমস্যা। কিন্তু জীবন চালাতে গেলে রেণু আহরণ ছাড়া উপায় নেই তাদের।  

স্থানীয়রা জানান, এলাকায় কাজ না থাকায় অধিকাংশ পরিবারের প্রধানরা জেলার কাজের সন্ধানে বাইরে চলে যান। কিন্তু যাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় অর্থ বা ভরণ-পোষণের জন্য খাদ্যদ্রব্য রেখে যেতে না পারায় নারীরা বাধ্য হয়ে নদীতে রেণু ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন।  

ঠিক একইভাবে চলছে বাঘ বিধবাদের জীবনও। বাঘের আক্রমণে স্বামীর মৃত্যু হলেও ভয়-ডর উপেক্ষা করে সেই সুন্দরবনেই রেণু সংগ্রহে যান বাঘ বিধবারা (বাঘের আক্রমণে নিহতদের স্ত্রী)।  

এভাবে নানা সমস্যার মধ্যে চলছে সাতক্ষীরার উপকূলীয় নারীদের জীবন। নেই বিকল্প কর্মসংস্থান, নেই সুচিকিৎসার ব্যবস্থাও।  

বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের চাদনীমুখা কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার আব্দুল্লাহ আল মানুনের কথায়।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এখানকার বেশির ভাগ মানুষ রক্তশূন্যতা ও পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। রয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব। যেসব নারী নদীতে রেণু ধরেন তাদের চুলকানি ও সাদা স্রাবের সমস্যা খুব বেশি দেখা দেয়। আইলার পরে এটি বেশি হচ্ছে।  

চিকিৎসা প্রসেঙ্গ তিনি বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে স্থানীয়দের চিকিৎসায় ২৮ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। কিন্তু ওষুধের প্রাপ্যতা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে এসে ওষুধ না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যান। এ সমস্যার সমাধান প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৪ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৮
এসআই 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।