তীর রক্ষা বাঁধে বেশ কয়েকবার ধসের পর ভাঙনের মুখে পড়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, বর্ষা মৌসুম এলেই ভাঙন ভয়াবহ রূপ নেয়।
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে ঝড়-বৃষ্টির কারণে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আতঙ্ক উৎকণ্ঠা যেন আরও বেড়েছে। এর আগে গত দেড় বছরে তীর রক্ষা বাঁধে অন্তত আট থেকে ১০ বার ধস নামে। তবে সংস্কারে সেভাবে উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
সাহেবেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের বাংলানিউজকে বলেন, আমার ইউনিয়নের বেশির ভাগ অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এজন্য অনেক পরিবার বেড়িবাঁধের পাশে অন্যের জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে গত ঈদও ভালো কাটেনি তাদের।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অনিয়ম ও নিম্নমানের কাজ করায় ওই বাঁধে বারবার ধস নামে। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু না হওয়ায় এবং বাঁধে ধস নামার পর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নেওয়ায় বাঁধের এক কিলোমিটার এখন বিলীন হওয়ার পথে। যে কারণে স্থানীয়দের মাঝে ঈদের আনন্দ ছিল না; ছিল দুঃশ্চিন্তা আর চরম হতাশা।
কমলনগরের চর ফলকন, সাহেবেরহাট, পাটারিরহাট, চর কালকিনি ইউনিয়নে মেঘনা নদীর তীরে তীব্র ভাঙন ধরেছে। মাতাব্বরহাট তীর রক্ষা বাঁধের বিভিন্ন অংশে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীর ঢেউ আর জোয়ারের পানির আঘাতে ব্যাপকভাবে প্রতিনিয়তই ভাঙছে বাঁধ।
ভাঙন ঠেকানো না গেলে পুরো বাঁধ বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। তারা বলেন, একবার ভেঙে গেলে অরক্ষিত হয়ে পড়বে কমলনগর। হুমকিতে পড়বে উপজেলা কমপ্লেক্সসহ সরকারি-বেসরকারি বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
উপজেলার চরফলকন ইউনিয়নের বাসিন্দা বেলায়েত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ভাঙতে ভাঙতে নদী বাড়ির কাছে চলে এসেছে। সম্প্রতি ফণীর আঘাতে বাঁধটাও বিধ্বস্ত। যে কারণে আমরা আতঙ্কিত, কখন আবার বাড়িটাও চলে যায় নদীগর্ভে।
এদিকে ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে বিভিন্ন সময় বেশ কয়েকটি সংগঠন জনগণকে নিয়ে নদী ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে মানববন্ধন, প্রধানমন্ত্রীর স্মারকলিপি দেওয়া ও সড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করেছে।
পরবর্তীতে মেঘনা নদীভাঙন রোধে রামগতি ও কমলনগর এলাকায় বাঁধ নির্মাণে এক হাজার ৩৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। ২০১৪ সালের ৫ আগস্ট প্রথম পর্যায়ে ১৯৮ কোটি টাকার প্রকল্প বরাদ্দ দেওয়া হয়।
প্রথম পর্যায়ের বরাদ্দ টাকায় রামগতিতে এক কিলোমিটার, আলেকজান্ডারে সাড়ে তিন কিলোমিটার ও কমলনগরে এক কিলোমিটার বাঁধ বাস্তবায়ন করা হয়। কিন্তু কমলনগর রক্ষায় মাত্র ১ কিলোমিটার বাঁধ যথেষ্ট নয়। এখানে অন্তত আরও ৮কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুসা বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে নদীর তীর রক্ষা বাঁধের ক্ষতি হয়েছে। ধস ও ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ (বালুভর্তি বিশেষ ব্যাগ) ডাম্পিং করা হয়েছে। এছাড়া ভাঙন ঠেকাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এদিকে সম্প্রতি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মেঘনা নদীভাঙন কবলিত মাতাব্বরহাট এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় পথসভায় তিনি বলেন, কমলনগরকে আর ভাঙতে দেওয়া যাবে না, ভাঙন থেকে রক্ষা করা হবে।
‘দ্রুত সময়ের মধ্যে কমলনগরে ৬০০ মিটার ও রামগতিতে ৭০০ মিটার বাঁধের কাজ করা হবে। এছাড়া নদীর তীর রক্ষায় আরও ১৫ কিলোমিটার কাজ বাস্তবায়নে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হবে। ’
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ তিন যুগের বেশি সময় ধরে কমলনগরে মেঘনা নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট, হাজার হাজার একর ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আশ্রয়কেন্দ্রসহ বহু স্থাপনা। হুমকির মুখে রয়েছে কমলনগর উপজেলা কমপ্লেক্সসহ সরকারি বেসরকারি বহু প্রতিষ্ঠান।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে লক্ষ্মীপুর-৪ (কমলনগর-রামগতি) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মেজর (অব.) আবদুল মান্নান বলেন, সারাবছর ধরে মেঘনার ভয়াবহ ও অব্যাহত ভাঙনে কমলনগর ও রামগতির মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। এ ভয়াবহ ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১৯
এসআর/এমএ