জানা যায়, খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে ২০১৬-১৮ সাল পর্যন্ত উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নে অন্তত ১২ বার প্লাবিত হয়। এ ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর কোলা-হিজলিয়া, সুভদ্রাকাটি গ্রামের সোহরাব সানার বাড়ি থেকে সাইদ সানার বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ২০ চেইন বেড়িবাঁধ, কুড়িকাহনিয়া গ্রামের ঋষিপল্লী থেকে রুইয়ারবিল পর্যন্ত প্রায় ৫০ চেইন বেড়িবাঁধ, হরিশখালী গ্রামের স্লুইসগেট থেকে আয়ুব আলীর মৎস্য ঘের পর্যন্ত প্রায় ৩০ চেইন বেড়িবাঁধ, কোলা গ্রামের পুরাতন জামে মসজিদ থেকে হিজলিয়া প্রাইমারি স্কুল পর্যন্ত প্রায় ৬০ চেইন বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
একই অবস্থা শ্রীউলা ইউনিয়নের থানা ঘাটার এলাহি বক্সের মৎস্য ঘের থেকে রফিকের মৎস্য ঘের পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ও থানাঘাটার জামাল মাস্টারের ঘের থেকে হাজরাখালী হয়ে বসিরের মৎস্য ঘের পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধের।
এদিকে, আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট প্রাইমারি স্কুলের সামনে থেকে সাহেব আলীর বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৮০০ মিটার বেড়িবাঁধ, মনিপুর খেয়াঘাট থেকে বাগালী স্লুইসগেট পর্যন্ত প্রায় ৬০০ মিটার বেড়িবাঁধ, কাকবাসিয়া খেয়াঘাট থেকে চেউটিয়া আব্দুল মালেকের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৫০০ মিটার বেড়িবাঁধ ও নয়াখালী জামে মসজিদের সামনে থেকে হাজরাখালী খেয়াঘাট পর্যন্ত ২০০ মিটার বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।
অপরদিকে, খাজরা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে খাজরা বাজার সংলগ্ন কপোতাক্ষ নদের প্রায় ১০০ মিটার বেড়িবাঁধ ও গদাইপুর খেয়াঘাট সংলগ্ন প্রায় ১০০ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে যেকোনো সময় গোটা এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি থেকে মুক্ত নয় আশাশুনি সদর ইউনিয়নও। উপজেলা সদর থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে দয়ারঘাট গ্রামে খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধে মারাত্মক ভাঙন দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৯০ সাল থেকে ক্রমান্বয়ে ভাঙতে ভাঙতে জেলেখালী ও দয়ারঘাট গ্রাম দু’টির বেশিরভাগ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এছাড়াও উপজেলার কুল্যা ইউনিয়নের বেতনা নদীর গাবতলা ও বুধহাটা ইউনিয়নের বুধহাটা বাজার পয়েন্ট এবং কেয়ারগাতি গ্রামে মরিচ্চাপ নদীর বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
প্রতাপনগর ইউনিয়নের কোলা গ্রামের আজিজুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবছর জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে লবণ পানিতে গোটা এলাকায় প্লাবিত হয়। এতে খাল বিল ও পুকুরের মিষ্টি পানির মাছসহ এলাকার সবুজ বেষ্টনী ধ্বংস হচ্ছে। এলাকার ফলদ, বনজ ও ঔষধিবৃক্ষ এখন বিলুপ্ত প্রায়। এছাড়াও ম্লান হয়ে যাচ্ছে সরকারের সব উন্নয়ন কর্যক্রম। লবণাক্ততায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো।
প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমার ইউনিয়ন তিন দিক থেকে খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদ বেষ্টিত হওয়ায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। সর্বশেষ চাকলা গ্রামের বাঁধ ভেঙে কয়েক’শ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে প্রায় ৫০০ বিঘা জমি বাদ দিয়ে রিংবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি কোনোমতে আটকায়। কিন্তু ওই ৫০০ বিঘা জমিতে বসবাসকারী দুই শতাধিক পরিবারের বসত ভিটায় আজো জোয়ার-ভাটা খেলছে।
শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা সাকিল বাংলানিউজকে বলেন, জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বারবার জানানোর পরও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এজন্য বর্ষা মৌসুম এলে চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন কাটাতে হয়।
আনুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর আলম লিটন বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবছরই নদীর বাঁধ ভেঙে ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। নদী থেকে পিছিয়ে রিংবাঁধ দিতে দিতে গ্রামের বাসযোগ্য জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এর স্থায়ী সুরহা হওয়া দরকার।
এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও আবুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এলাকার বেড়িবাঁধগুলো বহু আগে নির্মিত। বর্তমানে এগুলোর অবস্থা খুবই জরাজীর্ণ। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু বেড়িবাঁধগুলো সংস্কারে এখন পর্যন্ত কোনো বরাদ্দ মেলেনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০১৯
এনটি