সাহেদা বেগম বলেন, মোর কপাল পোড়া, এতোদিন পোলাডার অপেক্ষায় আছিলাম। এই বুঝি আইয়া পড়ছে।
বলছি স্বামীহারা স্ত্রী, পিতৃহারা সন্তান, আর সন্তানহারা পিতা-মাতার বসবাসের গ্রাম বাদুরতলার কথা। এমন কষ্ট, দুঃখ-বেদনা এখানকার মানুষের প্রতিদিনের। এখানকার জেলেরা যখনই সাগরে মাছ ধরতে যায়, তখনই চির বিদায় নিয়ে যায় স্বজনদের কাছ থেকে। এমনিভাবেই এক বছর আগে স্বজনদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছিল বাদুরতলা গ্রামের ১০ জেলে।
স্বজনদের কাছ থেকে প্রতিদিনের মতো বিদায় নিয়ে গেলে শেষবারের মতো বিদায় হবে এটি হয়তো কেউ জানতেন না। ২০১৮ সালের ২১ জুলাই সকালে হঠাৎ গভীর সমুদ্রে প্রচণ্ড ঝড়ের কবলে পড়ে শাহিন ফিটারের একটি মাছ ধরা ট্রলার। ওই ট্রলারে থাকা ১৮ জেলে নিখোঁজ হয়। ১৮ জনের মধ্যে একই গ্রামের ১০ জনের আজও খোঁজ মেলেনি। তাদের সবার পরিবারেই চলছে আহাজারি।
মিনিট, ঘণ্টা, দিন আর মাস গুনতে গুনছে বার মাস অতিবাহিত হয়ে গেল তাদের জীবন থেকে। দিন আসে দিন যায় কিন্তু নিখোঁজ স্বজনরা আর ফিরে আসে না। সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া জেলেদের স্বজনদের আহাজারি এখনো চলছে। ওই গ্রামে গেলে বোঝা যায় স্বজন হারানোর বেদনা যে কতো কষ্টের। প্রতিক্ষণ, প্রতি মুহূর্ত তারা উপলব্দি করে, শুধু স্বজনরাই নয়, গ্রামের মানুষ তাদের শোকে শোকাহত।
নিখোঁজ হওয়ার এক বছর অতিক্রান্ত হওয়ার দিন জেলে পল্লী বাদুরতলা গ্রামে গিয়ে পা রাখতেই বোঝা যায় স্বজন হারানো পরিবারের সদস্যদের আওয়াজ। সাংবাদিকের কথা শুনতেই আশপাশ থেকে মুহূর্তের মধ্যেই হাজির হয়ে যান ১০ পরিবারের মধ্যে অন্তত ৮ পরিবারের সদস্যরা। এটা তাদের প্রতিদিনের কাজের রুটিন। নতুন কোনো মুখ বা পরিচিত-অপরিচিত লোক এলেই তাদের মনে হয় কোনো ভালো সংবাদ নিয়ে এসেছে। এই বুঝি কারো স্বামী, কারো বাবা বা কারো ছেলের খবর নিয়ে এসেছে।
কথা হয় নিখোঁজ জেলে বাবুলের মা সাহেদা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, পোলাডার শোকে ওর বাপেও মইরা গেছে। নিখোঁজ হওয়ার দুই মাস পর স্ট্রোক করে মারা যায় বাবা কাঞ্চন মিয়া। কান্না জড়িত কণ্ঠে সাহেদা বেগম আরও বলেন, মোরে আল্লায় ক্যা বাঁচাই রাখছে। মুই স্বামী আর পোলাডার কষ্ট সইতে পারিনা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৯
আরএ