এ জনপদে শিক্ষার আলো পৌঁছালেও শিশুদের মধ্যে শিক্ষাগ্রহণের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। লেখাপড়া করানোর টাকা নেই বলে জেলেরাও তাদের শিশুদের পড়াশোনা করাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
প্রতিনিয়তই এমন চিত্র দেখা যায়, বিষখালী, বলেশ্বর নদের পাড়ের বাসিন্দাদের। বেড়িবাঁধ তীর ঘেঁষা এক বিপন্ন জনপদ পদ্মা, রুহিতা, চরলাঠিমারার। নদীভাঙনে দিশেহারা ওই জনপদে এক সময় সব থাকলেও এখন সম্বলহারা মানুষের বসতি ছাড়া কিছুই নেই। সেখানকার অধিকাংশ বসতি জেলে। নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা।
বই খাতা, আর খেলাধুলা নিয়ে শিশুদের মেতে ওঠার কথা থাকলেও যেন এ অঞ্চলের চিত্র ভিন্ন। এখানকার শিশুরা খেলা করছে নৌকা নিয়ে। নিজেদের তৈরি নৌকা ও ট্রলার ভাসিয়ে দিচ্ছে নদীতে। আধুনিক সভ্যতা থেকে পিছিয়ে পড়া এ জনপদে অভিভাবকদের অসচেতনতা ও নদীভাঙনের কারণেই শিক্ষাগ্রহণ করতে পারছে না শিশুরা।
এখানকার শিশুদের এখন সময় কাটে সাগরে মাছ শিকার করে, পরিবারের ভরণপোষণের চিন্তায়। ক্রমান্বয়ে বয়স্কদের দেখাদেখি কিশোর আর কিশোরদের দেখাদেখি শিশুরাও ভিড়েছে মাছ শিকারে। সারাদিনের হাড়ভাঙা খাটুনিতে চলে তাদের সংসার।
কথা হয় মাত্র ১৮ বছরের যুবক বাবুর সঙ্গে। শুধু বাবু নয়, অনেক। তাদের দেখে অনেক শিশু নেমেছে মাছ শিকারে। এই জেলেদের ছোট্ট কাঁধে বর্তেছে পরিবার নির্বাহের বড় দায়িত্ব।
বাবু আরও বলেন, ছোট থেকেই মাছ শিকার করি। বাপ-দাদার সঙ্গে যেতে যেতে শিখেছি। পড়ালেখা কতদূর করেছেন, সেটি বলা মাত্র বলে উঠলেন, ক্লাস টু পর্যন্ত পড়েছি। বাপের সংসারের অভাবে লেখাপড়া ছেড়ে কাজে ধরেছি।
কথা হয় ২০ বছরের ফাইজুলের সঙ্গে। ১৮ বছর পূর্ণ হতে না হতেই বিয়ে, এরপর সংসারের বোঝা তার। কোনো কিছু বোঝার আগেই বিয়ে করে এখন সংসারের বোঝা টানতেই জীবনের ঝুঁকির কাজ নিতে হয় তার। এরইমধ্যে আবার পুত্র সন্তানের বাবা হয়ে গেলেন ফাইজুল।
ফাইজুল বাংলানিউজকে বলেন, বাপের সংসারের অভাব দেখেছি ছোটবেলা থেকেই। যখন বুঝতে শেখেছি, তখন থেকেই নদীতে মাছ ধরি। এখন যাই গভীর সাগরে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯
টিএ