ঢাকা, বুধবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূলের জেলে জীবন

অল্প বয়সেই দক্ষ কারিগর!

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯
অল্প বয়সেই দক্ষ কারিগর!

বিহঙ্গদ্বীপ সংলগ্ন বাঁধ থেকে ফিরে: সুন্দরবন ঘেঁষা বিহঙ্গদ্বীপ ঘেঁষে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বিপন্ন জনপদ। হাজারও জেলের বসবাস এখানে। পৈত্রিক পেশাকে এখনও ধরে রেখেছেন সাহসি জেলেরা। সকালের আলো ফোটার আগেই নেমে পড়েন আবাল, বৃদ্ধ-বনিতা। তবে শিশুকাল থেকেই এ অঞ্চলের মানুষ শিক্ষা না নিয়ে পেশাটিতে জড়িয়ে পড়ায় নিজেদের অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে।

এ জনপদে শিক্ষার আলো পৌঁছালেও শিশুদের মধ্যে শিক্ষাগ্রহণের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। লেখাপড়া করানোর টাকা নেই বলে জেলেরাও তাদের শিশুদের পড়াশোনা করাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

এ কারণে জনপদটির অধিকাংশ শিশুরা কম বয়সেই দক্ষ জেলে এবং দক্ষ জাল বোনার কারিগর বনে যায়। এ উপকূলের বয়স্কদের সঙ্গে সঙ্গে শিশু-কিশোররাও দক্ষ জেলের পাশাপাশি দক্ষ জাল বোনার কারিগর হয়ে উঠছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে আর পেটের টানে বর্তমানে এ কাজ ভিন্ন অন্য তেমন কোনো বিকল্পও নেই উপকূলের বাসিন্দাদের। ফলে প্রতিদিনই কোমল হাতে ঝূঁকিপূর্ণ মাছ শিকারে জড়িয়ে পড়ছে অঞ্চলটির শিশুরাও। পরিবারে অভাব-অনটনে শিক্ষাক্ষেত্রে ঝরে পড়া শিশুরাই এ শ্রমে ঝুঁকে পড়ছে বেশি। মাছ ধরার ফাঁকে ফাঁকে দৈনিক ভিত্তিতে জালও বুনছে ওরা...। ছোট থেকেই নিজেদের দক্ষ জাল বোনার কারিগর করে তুলেছে।

প্রতিনিয়তই এমন চিত্র দেখা যায়, বিষখালী, বলেশ্বর নদের পাড়ের বাসিন্দাদের। বেড়িবাঁধ তীর ঘেঁষা এক বিপন্ন জনপদ পদ্মা, রুহিতা, চরলাঠিমারার। নদীভাঙনে দিশেহারা ওই জনপদে এক সময় সব থাকলেও এখন সম্বলহারা মানুষের বসতি ছাড়া কিছুই নেই। সেখানকার অধিকাংশ বসতি জেলে। নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা।

বই খাতা, আর খেলাধুলা নিয়ে শিশুদের মেতে ওঠার কথা থাকলেও যেন এ অঞ্চলের চিত্র ভিন্ন। এখানকার শিশুরা খেলা করছে নৌকা নিয়ে। নিজেদের তৈরি নৌকা ও ট্রলার ভাসিয়ে দিচ্ছে নদীতে। আধুনিক সভ্যতা থেকে পিছিয়ে পড়া এ জনপদে অভিভাবকদের অসচেতনতা ও নদীভাঙনের কারণেই শিক্ষাগ্রহণ করতে পারছে না শিশুরা।

এখানকার শিশুদের এখন সময় কাটে সাগরে মাছ শিকার করে, পরিবারের ভরণপোষণের চিন্তায়। ক্রমান্বয়ে বয়স্কদের দেখাদেখি কিশোর আর কিশোরদের দেখাদেখি শিশুরাও ভিড়েছে মাছ শিকারে। সারাদিনের হাড়ভাঙা খাটুনিতে চলে তাদের সংসার।

কথা হয় মাত্র ১৮ বছরের যুবক বাবুর সঙ্গে। শুধু বাবু নয়, অনেক। তাদের দেখে অনেক শিশু নেমেছে মাছ শিকারে। এই জেলেদের ছোট্ট কাঁধে বর্তেছে পরিবার নির্বাহের বড় দায়িত্ব।

বাবু আরও বলেন, ছোট থেকেই মাছ শিকার করি। বাপ-দাদার সঙ্গে যেতে যেতে শিখেছি। পড়ালেখা কতদূর করেছেন, সেটি বলা মাত্র বলে উঠলেন, ক্লাস টু পর্যন্ত পড়েছি। বাপের সংসারের অভাবে লেখাপড়া ছেড়ে কাজে ধরেছি।

কথা হয় ২০ বছরের ফাইজুলের সঙ্গে। ১৮ বছর পূর্ণ হতে না হতেই বিয়ে, এরপর সংসারের বোঝা তার। কোনো কিছু বোঝার আগেই বিয়ে করে এখন সংসারের বোঝা টানতেই জীবনের ঝুঁকির কাজ নিতে হয় তার। এরইমধ্যে আবার পুত্র সন্তানের বাবা হয়ে গেলেন ফাইজুল।

ফাইজুল বাংলানিউজকে বলেন, বাপের সংসারের অভাব দেখেছি ছোটবেলা থেকেই। যখন বুঝতে শেখেছি, তখন থেকেই নদীতে মাছ ধরি। এখন যাই গভীর সাগরে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯
টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।