ইলিশের বংশ বিস্তারের লক্ষ্যে প্রজনন মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরায় ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, কেনাবেচা, মজুদ ও বিনিময় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এর আগে, চলতি বছরের ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল।
পাথরঘাটার উপকূলীয় জেলেরা এক সময় পেটের দায়ে সরকারের এসব নিষেধাজ্ঞার বিরোধীতা করতো। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ইলিশ সম্পদ রক্ষার্থে এবং ইলিশের বংশ বিস্তারের স্বার্থে জেলেরা তা মেনে নিয়েছে। তবে বরাবরের মতো এবারও নিষেধাজ্ঞার সময় পার্শ্ববর্তী ভারতের জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে মাছ শিকার করছে। এজন্য জেলেদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। সুন্দরবন সংলগ্ন বলেশ্বর নদ ঘেঁষা জেলে পল্লি পদ্মা গ্রাম। এখানে শতভাগ মানুষই মৎস্য পেশায় নিয়োজিত। এখানকার জেলেরা দিন-রাত মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সরকারের আইনের প্রতি এখানকার জেলেরা শ্রদ্ধা দেখালেও বিপরীত ভারতীয় জেলেরা। এখানকার জেলেদের অভিযোগ, শুধু নিষেধাজ্ঞার সময়ই নয়, সারা বছরই বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে ভারতীয়রা অবাধে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। বাধা তো দূরের কথা, বাংলাদেশি জেলেদের জাল কেটে ও মাছ লুটে নিয়ে যাচ্ছে। জেলে পল্লি পদ্মা ঘুরে এমন আক্ষেপ শোনা গেল জেলেদের মুখে।
পদ্মা গ্রামের কথা হয় আলমগীর মাঝির সঙ্গে। ৪২ বছরের এ মানুষটি ১০ বছর বয়স থেকেই বাবার সঙ্গে মাছ ধরা শুরু করেন। আজও মাছ শিকার করে সংসার চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, সারা বছরই ভারতীয় জেলেরা আমাদের দেশের মধ্যে ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যায়। প্রতিবাদতো করার সাহসও পাইনা বরং আমাদের ট্রলারের কাছে এসে ভারতীয়রা জাল কেটে মাছ লুটে নিয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, ভারতীয় ট্রলারের অত্যাধুনিক ইঞ্জিনসহ যন্ত্রপাতি থাকায় খুব সহজে মাছ শিকার করে যেতে সক্ষম হয়। তাছাড়া তাদের ট্রলারে ওয়াকিটকি ও ওয়ারলেস থাকায় কোনো সমস্যা মনে করলেই ওয়ারলেসের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে সব এক সঙ্গে এসে মোকাবিলা করে।
পদ্মা স্লুইস ঘাটে গিয়ে এক রকমের জেলেদের রোষানলে পড়তে হয় বাংলানিউজ প্রতিবেদকের। সাংবাদিক দেখা মাত্রই জেলেরা ভিড় করে। এ সময় অনেকে ভারতীয় জেলেদের নিয়ে আক্ষেপ করলেন। বললেন, ভারতীয় জেলেদের সমুদ্রসীমায় দাপটের কথা। প্রতিবাদও করলেন তারা। কিন্তু কে শোনে কার কথা এমনটাই মনে হয়েছে তাদের কথায়। কথা হয় আলম ফিটারের সঙ্গে। তিনি বলেন, পাথরঘাটা থেকে মাত্র ১ ঘণ্টা দক্ষিণে ট্রলার চালিয়ে গেলেই ভারতীয় জেলেদের সঙ্গে দেখা মিলবে। তারা এভাবেই প্রতিনিয়ত মাছ শিকার করে নিয়ে যায়। মোরা সরকারের আইন মানি, কিন্তু দাদারা মোগো মাছ ধইরা নিয়া যায়। গত দুই সপ্তাহে ব্যবধানে ৪৯ ভারতীয় জেলে আটকে তার প্রমাণ করে বলেও তিনি জানান। বাংলাদেশ সরকার দ্রুত এ বিষয় ব্যবস্থা নিবেন এমনটাই মনে করছেন পদ্মা গ্রামের জেলেরা। এ বিষয় বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, সারা বছরই ভারতীয় ট্রলার দেশীয় জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া ইলিশের নিষেধাজ্ঞার সময় আমাদের ট্রলার সাগরে পাঠাচ্ছি না, কিন্তু ভারতের ট্রলার এসে মাছ শিকার করে নিয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, এ বিষয় আমরা অনেকবার আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীসহ মৎস্য মন্ত্রীর কাছেও একাধিকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে অবহিত করেছি।
বরগুনা জেলা ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল মান্নান মাঝি ও সাধারণ সম্পাদক মো. দুলাল মাস্টার বাংলানিউজকে বলেন, আমরা দাবিই করে যাচ্ছি, কিন্তু কোনো কাজের কাজ হয়না। আমরাতো সরকারের নির্দেশনা মেনে চলি, কিন্তু ভারতের জেলেরা তো আমাদের সম্পদ ধরে নিয়ে যায়। আমরা ইতোপূর্বে বহুবার আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। বিগত বছরের ন্যায় এ বছর যাতে নিষেধাজ্ঞার সময় ভারতের জেলেরা মাছ শিকার করতে না পারে এ ব্যাপারে সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয় কোস্টগার্ডের পাথরঘাটা স্টেশন কমান্ডার লে. বিশ্বজিৎবাংলানিউজকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই পাথরঘাটা মৎস্যজীবী এবং মৎস্যজীবী নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা এখন পর্যন্ত এমন কোনো খবর দিতে পারেনি। আমরা নিয়মিত টহল দিচ্ছি তাতে এখন পর্যন্ত ভারতীয় জেলেদের দেশীয় জলসীমায় দেখা যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৯
এসএইচ