মো. মোস্তফা বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নের দক্ষিণ চরদুয়ানী গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত আলতাফ হোসেন হাওলাদার।
সংসারের তাড়াতে শিশুকাল থেকেই ওই পেশার হাল ধরতে হয়েছে তাকে। বাবার সঙ্গেই নদী ও সাগরে মাছ শিকার শুরু করেন তিনি। সংসারের অভাব থাকায় শিশু থেকেই বঞ্চিত হয়েছেন লেখাপড়া থেকে ওই মৎস্য শ্রমিক। অনেক বছর ধরে অন্যের ট্রলার শ্রমিক (জেলে) হিসেবে মাছ শিকার করতেন। রোদ আর লবণ পানিতে শরীর যেন আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। ট্রলারের গরম ইঞ্জিনের ছ্যাঁকায় হাত-পায়ের কিছু অংশ সাদাও হয়ে গেছে। এত কষ্ট যেন পেটের দায় মেনেই নিয়েছেন, মেনে নিতেও হবে। বয়সের কারণে এত কষ্ট আর সহ্য হয় না, ইচ্ছা ছিল নিজেই ট্রলার মালিক হবেন। কিন্তু প্রকৃতি যেন মোস্তফার ওপর বিরুপ হয়েছেন।
কষ্টার্জিত কিছু অর্থ আর ধারদেনা করে ১০ লাখ টাকা খরচ করে বড় একটি ট্রলার (ফিশিং) গড়েছেন। জেলেদের দাদনও দিয়েছেন আরও তিন লাখ টাকা। দীর্ঘ ২২ দিন ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা শেষে তাড়াহুড়ো করে ট্রলার পাঠাতে হবে সাগরে এ কারণে নতুন ট্রলারটির নামও রাখতে পারেননি তিনি। ৩০ অক্টোবর রাত ১২টার পর নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় মনে অনেক স্বপ্ন নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা দিয়েই ১০ জেলেকে নিয়ে রওয়ানা হলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সাগরে নোঙর করা ট্রলারটি শুক্রবার (১ নভেম্বর) রাত ৩টার দিকে হঠাৎ ঝড়ো বাতাসে ডুবে যায়। মুহূর্তের মধ্যেই ট্রলারে থাকা ১০ জেলের ডুবে যান।
কিছুক্ষণ পর নয় জেলেকে পার্শ্ববর্তী একটি ট্রলারে উদ্ধার করলেও মো. সুমন নামে এক জেলেসহ ট্রলারটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। নতুন ট্রলারটি তৈরি করে সাগরে ভাসিয়েই সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেলো। ট্রলারসহ সুমন নামে এক জেলেও নিখোঁজ রয়েছে। সুমনের বাড়ি মঠবাড়িয়া উপজেলার দক্ষিণ বেতমোর গ্রামে।
ট্রলার মালিক ও মাঝি মো. মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে ধারদেনা করে একটি ট্রলার কিনেছিলাম। কিন্তু সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। এখন আমি পথে বসে গেছি। আগে অন্যের ট্রলারে শ্রমিক হিসেবে মাছ শিকার করতাম।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, মোস্তফার বিষয়টি খুবই নির্মম। নিখোঁজ জেলে ও ট্রলার উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৯
এএটি