ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

খোলা আকাশের নিচে দিন কাটছে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৮ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২১
খোলা আকাশের নিচে দিন কাটছে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের

ভোলা: ভোলায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আঘাত করেনি। কিন্তু ইয়াসের প্রভাবে লণ্ডভণ্ড উপকূলের বেশিরভাগ জনপদ।

ঝড়ের ৫ দিন কেটে গেলেও স্বাভাবিক হতে পারেনি ক্ষতিগ্রস্তরা। খোলা আকাশের নিচে অনেকেই মানবেতন দিন কাটাছে। রান্নার চুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অকেকে ঘরে ঠিকমত রান্না চলছে না।  

এদিকে দুর্গত এলাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এতে চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন উপকূলের ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা। এখন পর্যন্ত সরকারি যেসব ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে তার প্রয়োজনানুগ তুলনায় খুবই অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
 
তবে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে ত্রাণ ও শুকনো খাবার খাবার দেওয়া হচ্ছে।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভোলার উপকূলের ঢালচর, চর পাতিলা, মদনপুর, চর নিজাম, চর শাহজালাল, কলাতলীর চর, কচুয়াখালীর চর, মাঝের চর, রামদাসপুর, চর মোজাম্মেল, চর জহির উদ্দিন, চর নাসরিন, হাজিপুরসহ জনবসতিপূর্ণ অন্তত ৪০টি চরে জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে পুকুরে ও মাছের ঘের। বিধ্বস্ত হয়েছে শত শত বাড়ি।  

তজুমদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পল্লব কুমার হাজরা বাংলানিউজকে জানান, উপজেলার সবগুলো চর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ১ পরিবারকে আমরা ১০ কেজি করে চাল এবং শুনো খাবার বিতরণ করেছি। চরে নিখোঁজ গরু-মহিষের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

ভোলা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান জানান, সদরের ক্ষতিগ্রস্ত ভেদুরিয়া, মাঝের চর, রাজাপুর ও ভেলুমিয়া এলাকায় ৬০০ পরিবারের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও এসব এলাকায় ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের নগদ টাকাও বিতরণ করা হবে।  

ঢালচরের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের নাছির বলেন, ঝড়ে ঘর ভেঙে গেছে, সব মালামাল ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। রান্নাঘরের থালা-বাসনও ভেসে গেছে। ঘরে কিছুই নাই। ৫ দিন ধরে খোলা আকাশের নিচে আছি। টাকাও নেই যে নতুন করে ঘর তুলবো। সহায় সম্বল বলতে শুধু ঘরটাই ছিলো। কিন্তু সেটা ভেঙে গেছে, এখন আর কিছুই অবশিষ্ট কিছু নেই। স্ত্রী ও দুই-ছেলে মেয়ে নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।

ক্ষতিগ্রস্ত রিপন জানান, ঝড় এবং জোয়ারে ঘর ভেঙে ঘরের সব মালামাল ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। পরিবারের ৯ সদস্য নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে। ঘর তোলার সামর্থ্য নেই।

জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন অফিসের তথ্যে জানা যায়, ঝড়ে জেলায় ১১ হাজার ৩০৯টি ঘর বিধস্ত হয়েছে। এরমধ্যে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৩ হাজার ৫৭৯টি ঘর এবং আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৭ হাজার ৭৩০টি ঘর। অন্যদিকে, ঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে ১০ কোটি ৯৭ লাখ টাকার মাছ এবং আরো ১০ কোটি টাকার মৎস্য অবকাঠামো। জেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে ২ হাজার গরু-মহিষ নিখোঁজ রয়েছে। বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৬ কিলোমিটার। ঝড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও শতাধিক গবাদি পশু মারা গেছে।   

ভোলা সদরের ক্ষতিগ্রস্ত কন্দকপুর গ্রামের মাছ ওহাব আলীসহ অন্যরা জানান, জলোচ্ছ্বাসে  মাছ ভেসে গেছে। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন মাছ চাষিরা। অনেকেই এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে মাছের চাষ করেছিলো। কিন্তু জোয়ারের সব ভেসে গেছে।  

জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মো. মোতাহার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, প্রাথমিসকভাবে আমরা ১১ হাজার ৩০৯টি ঘর সম্পূর্ণ ও আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে বলে একটি তালিকা তৈরি করেছি। জেলার ৫১টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সেখানে শুকনো খাবারের পাশাপাশি প্রতি ইউনিয়ন আড়াই লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে।  

এ ব্যাপারে ভোলার জেলা প্রশাসক তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা ও দ্বীপচরের পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়-তালিকা তালিকা তৈরির কাজ চলমান আছে। বিভিন্ন এলাকায় ইতোমধ্যে দুর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ক্ষয়-ক্ষতির তালিকা সম্পূর্ণভাবে নিরূপণ হলে সরকার পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।