ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কর্পোরেট কর্নার

প্রয়োজনের মুহূর্তে মানবতার পাশে বিকাশ

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৪
প্রয়োজনের মুহূর্তে মানবতার পাশে বিকাশ

ঢাকা: একদিন মাঝ রাতে হঠাৎ শোরগোলে ঘুম ভেঙে গেল সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরের আলেয়ার। উঠেই দেখলেন বাসার মেঝে অবধি পানি চলে এসেছে।

স্বামী মাঝ হাওড়ে, সন্তানরাও ছোট ছোট। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। এমন সময় এক আত্মীয়ের সহায়তায় সন্তানদের নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। তখন আশ্রয় মিললেও বন্যা শেষে হারিয়েছেন ভিটেমাটি আর পোষা গরু-ছাগলগুলো।

আলেয়ার মতো লাখ লাখ মানুষ প্রতিবছর বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, পাহাড় ধস, নদীভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হচ্ছেন। জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয় অফিস (ওসিএইচএ)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে গত মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত চার মাসে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ১ কোটি ৮৩ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বছরের প্রথম বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় রিমাল। গত ২৬ মে এটি উপকূলে আঘাত আনে, ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৪৬ লাখ মানুষ। দ্বিতীয় ও সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্যোগ এ বছরের বন্যা। বিগত ৩৪ বছরে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে এটি সবচেয়ে ভয়ংকর বন্যা। এবারের বন্যায় দেশের দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৫৯ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।

এভাবেই বাংলাদেশের মানুষের জীবনে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। মোটামুটি প্রতিবছরই নানা দুর্যোগ বহু মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত করে, ধ্বংস করে অবকাঠামো। কিন্তু এ দুর্যোগের মুখেও দেশের মানুষ সাহস, সংগ্রাম ও অভিযোজনের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন।

দুর্যোগ মুহূর্তে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও স্থানীয় জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রস্তুতি নেয়। আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলা, ত্রাণ সামগ্রী মজুদ করা, উদ্ধারকারী দল গঠন করাসহ বিভিন্ন প্রস্তুতির কারণে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়। আবার দুর্যোগের পরেও ত্রাণ বিতরণ, অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ, স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রেও সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে।

তবে এসব উদ্যোগের জন্য প্রয়োজন হয় তাৎক্ষণিক অর্থের জোগান, যা দুর্যোগের সময় অন্যতম বড় একটি চ্যালেঞ্জ। দুর্যোগকবলিত এলাকায় ব্যাংকিং ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়ে পড়ায়, আর্থিক সহায়তা পৌঁছানো কঠিন হয়ে যায়। এ সময় দেশের যেকোনো প্রান্তে, দ্রুত ও সবচেয়ে সহজে আর্থিক লেনদেন করার সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে বিকাশ-এর মতো ডিজিটাল আর্থিক সেবা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনের সুবিধার কারণে এখন মানুষ তার হাতে থাকা মোবাইলের মাধ্যমেই তাৎক্ষণিক টাকা পাঠিয়ে দিতে পারছেন। আর সেই টাকা নিকটস্থ এজেন্টের কাছ থেকে তুলে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা করতে পারছেন দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষরা।

অনেকেই দেশের শীর্ষ দাতব্য ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে অর্থ সহায়তা পাঠানোর মাধ্যমে দুর্যোগকবলিত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসতে চান। তাদের জন্যও সুযোগ করে দিয়েছে বিকাশ। বিকাশ অ্যাপ থেকে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ত্রাণ তহবিল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ত্রাণ তহবিল, ব্র্যাক, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, বাংলাদেশ নৌবাহিনী (বিএনএফডব্লিউএ ডোনেশন ফান্ড), বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কল্যাণ ট্রাস্ট, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন, অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন, আনঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম, মাস্তুল ফাউন্ডেশন, প্রথম আলো ট্রাস্টসহ বিভিন্ন দাতব্য ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানে অনুদান দিতে পেরেছে সর্বস্তরের মানুষ। এ বছর শুধু বন্যার সময় ১৫ লাখ বিকাশ গ্রাহক এক বা একাধিকবার অনুদান পাঠিয়েছেন এসব প্রতিষ্ঠানে। শুধু দেশের মানুষই নয়, অনেক প্রবাসীরাও এ সুবিধা ব্যবহার করে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

দুর্যোগের সময় যখন মানুষের জীবন ও জীবিকা বিপন্ন হয়ে পড়ে তখন তাদের সাহায্যের জন্য দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। সঠিক তথ্যের অভাবে অনেক সময় সাহায্য যথাযথভাবে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সাহায্য পৌঁছে দেওয়া এবং সাহায্যকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে নিয়মিত তথ্য দেওয়া ও সচেতনতা তৈরিতে বিভিন্ন সামাজিক ও গণমাধ্যমে প্রচারণা চালায় বিকাশ।

শুধু তাই নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে বিকাশ নিজেও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দুর্যোগকবলিত মানুষের পাশে থেকেছে। রিমাল-এ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে ৫০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে বিকাশ, যা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ২ হাজার ৫০০ পরিবারের অন্তত দুই সপ্তাহের খাবারের জোগান দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা অনুদানের এ অর্থ সরাসরি তাদের বিকাশ অ্যাকাউন্টে গ্রহণ করেছেন। নিকটস্থ বিকাশ এজেন্ট পয়েন্ট থেকে কোনো চার্জ ছাড়াই অনুদানের এ অর্থ ক্যাশ আউট করেছেন তারা।

এবারের বন্যায় দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে বিকাশ-এর সব কর্মী তাদের একদিনের বেতন অনুদান দিয়েছেন। এছাড়া বন্যার্তদের সহায়তায় গঠিত প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে ৫০ লাখ টাকা, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিকে ১৫ লাখ টাকা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীদের জরুরি ও উন্নত চিকিৎসাসেবায় অংশ নিতে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে ২০ লক্ষ টাকা অনুদানও দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কেবল দুর্যোগ-দুর্বিপাকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অন্যতম আর্থিক সেবার মাধ্যম হিসেবেই নয়, সময়ের প্রয়োজনে দেশের জন্য প্রতিটি পরিবারের সদস্য হিসেবে বিকাশ নিজেও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মানবতার পাশে থাকার চেষ্টা করে আসছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৪
আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।