এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন জেলা জজদের সার্কুলার পাঠিয়েছেন। যেখানে অনলাইনে ছুটি প্রবর্তনের বিষয়ে তিনটি উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছে।
অনলাইনে ছুটির উদ্যোগের প্রথম ধাপ
গত বছরের ২৪ অক্টোবর এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেন হাইকোর্ট বিভাগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন) মোহাম্মদ কামাল হোসেন শিকদার।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘২০১৫ সালের ২ জুন সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে দ্রুত বিচার নিষ্পত্তির লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন আদালতে কর্মরত সকল পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও কর্মস্থলে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ কারণে বিচারকরা কর্মস্থল ত্যাগসহ নৈমিত্তিক ছুটি গ্রহণের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারকে অবহিত করলেও আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া দ্রুত তথ্যসেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। সে কারণে অধস্তন আদালতের বিচারকদের কর্মস্থল ত্যাগসহ নৈমিত্তিক ছুটি গ্রহণের বিষয়ে দ্রুত ও কার্যকরভাবে নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যে ই-অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার চালু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ই-অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার প্রস্তুত করা হয়েছে’।
‘প্রাথমিকভাবে সফটওয়্যারটি বাংলাদেশের সকল আদালতে প্রয়োগ না করে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগের জন্য ২১ জেলা বাছাই করা হয়েছে। পরবর্তীতে সকল আদালতে ই-অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার চালু করা হবে’।
জেলাগুলো হচ্ছে- কক্সবাজার, নোয়াখালী, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, ফেনী, মৌলভীবাজার, সিলেট, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোর, গাজীপুর, ঢাকা, পাবনা, নারায়ণগঞ্জ, নাটোর, চাপাইনবাবগঞ্জ ও হবিগঞ্জ।
দ্বিতীয় ধাপ
পরবর্তীতে জানুয়ারি থেকে দেশের সকল জেলা জজের ছুটি অনলাইনে করা হয়।
এ বিষয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে প্রধান বিচারতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ‘সম্প্রতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উদ্যোগে অধস্তন আদালতের বিচারকদের ছুটি ও কর্মস্থল ত্যাগের বিষয়টি সহজীকরণের লক্ষ্যে ই-অ্যপ্লিকেশন সফটওয়্যার চালু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২১টি জেলায় এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং ১ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে এর কার্যক্রম শুরু হবে’।
এ পদ্ধতির সুবিধা সম্পর্কে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘নতুন এ পদ্ধতির মাধ্যমে ছুটির এ ব্যবস্থা হওয়ায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে ছুটির বিষয়টি জানা যাবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কতোদিন ছুটিতে থাকছেন এ বিষয়ে হিসাব রাখা সহজ হবে। এতে করে অধস্তন আদালতের বিচারকদের ভোগান্তি কমবে’।
শেষ ধাপ
গত ০৯ ফেব্রুয়ারি অধস্তন আদালতের বিচারকের অনলাইনে ছুটির বিষয় নিয়ে হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার সার্কুলার জারি করেন।
যাতে বলা হয়, ‘প্রাথমিকভাবে সফটওয়্যারটি দেশের সকল জজশিপে প্রয়োগ না করে ২১ জেলায় ও পরবর্তীতে ৪৩ জেলাসহ ৬৪ জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা জজদের জন্য প্রয়োগ করা হয়। বর্তমানে ৬৪ জেলায় জেলা জজদের জন্য ই-অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার সফলভাবে কাজ করছে। এখন ৬৪টি জেলার জেলা জজ সমপর্যায়ের সকল বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের (মহানগর দায়রা জজ, বিভাগীয় স্পেশাল জজ, বিশেষ জজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, পরিবেশ আপিল ট্রাইব্যুনাল, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল, জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও সাইবার ট্রাইব্যুনাল এর বিচারকরা) জন্য এ সফটওয়্যারটি কার্যকর করা হচ্ছে। তাদের প্রত্যেকের জন্য আলাদা আইডি, পাসওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে’।
‘এ অবস্থায় সারাদেশের অধস্তন আদালতে কর্মরত জেলা ও সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে নৈমিত্তিক ছুটি ও কর্মস্থল ত্যাগের আবেদন দ্রুত ও কার্যকরভাবে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে প্রচলিত নিয়মে না পাঠিয়ে ই-অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার প্রয়োগ করে পাঠানোর অনুরোধ করা হলো’।
তবে শিগগিরই সারাদেশের সকল বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য এ সফটওয়্যার চালু করা হবে বলে সুপ্রিম কোর্ট সূত্র জানিয়েছে।
এই ই-অ্যপ্লিকেশন সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে বিচারকদের ছুটির প্রয়োজন হলে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে গিয়ে নির্দিষ্ট পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সফটওয়ারে প্রবেশের পর ছুটির কারণ ও সময় লিখে অনুমতি চাইলে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে সঙ্গে সঙ্গে উত্তর পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৭
ইএস/এএসআর