ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আদালত

১১ বছর পর ‘সৎসঙ্গ বাংলাদেশ’র পক্ষে আদালতের রায়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৭ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৮
১১ বছর পর ‘সৎসঙ্গ বাংলাদেশ’র পক্ষে আদালতের রায় জজ কোর্ট, পাবনা

পাবনা: পাবনায় শতবর্ষী ও ঐতিহ্য মন্ডিত ধর্মীয় দীক্ষা ও উপাসনালয় শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকুল চন্দ্রের আশ্রম। এ আশ্রমের জমি নিয়ে ছিলো আইনি জটিলতা। দীর্ঘ ১১ বছর ধরে আইনি লড়াইয়ের পর ঠাকুরের জন্মস্থান রূপে চিহ্নিত ১৫ শতক জমি ‘সৎসঙ্গ বাংলাদেশ’ ফিরে পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩১ মে) পাবনার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারক মো. আতিকুর রহমান এ রায় দেন।

রায়ে বলা হয়েছে, পাবনার হেমায়েতপুরে শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকুল চন্দ্রের জন্মস্থান রূপে চিহ্নিত ১৫ শতক জমির দাবিদার হিসাবে বাংলাদেশে একমাত্র বৈধ সংগঠন ‘সৎসঙ্গ বাংলাদেশ’।

মামলা সূত্রে জানা যায়, শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকুল চন্দ্র চক্রবর্তী পাবনার হেমায়েতপুরে ‘সৎসঙ্গ’ প্রতিষ্ঠা করে আধ্যাত্মিক কর্মকাণ্ডসহ নানারূপ জনকল্যাণমূলক কাজ শুরু করেন। এ অবস্থায় ১৯৪৬ সালে শারীরিক বায়ু পরিবর্তনের জন্য ভারতের দেওঘরে যান তিনি। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর ঠাকুল আর ফিরে আসেননি। তিনি দেওয়ঘরেই পুনরায় সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তদানীন্তন পূর্বপাকিস্তান সরকার পাবনার হেমায়েতপুরে ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত সৎসঙ্গের সব জমিজমা ও স্থাপনাদি অধিগ্রহণ করে পাবনা মানসিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে।  

সে সময় শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকুল চন্দ্রের নির্দেশে পাবনার ‘সৎসঙ্গ’ টাঙ্গাইল জেলার পাকুটিয়াতে স্থানান্তরিত হয়। সেখান থেকে পূর্বপাকিস্তান সৎসঙ্গের সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতে থাকে। তখন সৎসঙ্গের সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন রাসবিহারী আদিত্য। তিনি তখন থেকেই শ্রী শ্রী ঠাকুরের জন্মস্থান রূপে চিহ্নিত ১৫ শতক জমি ফিরে পাওয়ার জন্য তৎকালীন সরকারের কাছে আবেদন করেন। পরবর্তীতে রাসবিহারী আদিত্য মারা গেলে তার বড় ছেলে ধৃদিব্রত আদিত্য ‘সৎসঙ্গ বাংলাদেশ’র সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন। ধৃদিব্রত আদিত্যও ওই জমি ফিরে পাওয়ার জন্য সরকারের কাছে বিভিন্ন সময় আবেদন করেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর সরেজমিনে তদন্ত করে সরকারের অধিগ্রহণ করা জমির মধ্যে মানসিক হাসপাতালের অব্যবহৃত ১৫ শতক জমি প্রত্যার্পণের আদেশ হয়।  

ওই আদেশে সৎসঙ্গ বাংলাদেশের পরিবর্তে ‘সৎসঙ্গ পাবনা’ বরাবর প্রত্যার্পণের আদেশ দেওয়া হয়। পরে সৎসঙ্গ বাংলাদেশ’র সাধারণ সম্পাদক ধৃদিব্রত আদিত্য বাংলাদেশে ‘সৎসঙ্গ বাংলাদেশ’ একমাত্র বৈধ সৎসঙ্গ সংগঠন হিসাবে ঘোষণার প্রার্থনা করেন। পাবনার জেলা প্রশাসককে বিবাদি করে পাবনা সদর থানার সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং অ:প্র:৫১/২০০৭।

ওই মামলায় শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকুল চন্দ্র সৎসঙ্গ হেমায়েতপুর এবং পুরুষত্তম শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকুল চন্দ্র জেরুরিয়া খুলনা বিবাদি শ্রেণী ভক্ত হয়ে মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
 
দীর্ঘ ১১ বছর মামলাটি চলার পর অবশেষে বৃহস্পতিবার উভয় পক্ষের শুনানি শেষে সৎসঙ্গ বাংলাদেশের পক্ষে আদেশ দিয়েছেন আদালত।

বাদী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন- প্রবীণ আইনজীবী গোরা চাঁদ ঘোষ, পাবনা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহম্মদ মহিউদ্দিন, আহাদ বাবু, রণধীশ ভট্রাচার্য্য, আব্দুল হামিদ (৩), মোহম্মদ আলী।  

বিবাদি পক্ষের আইনজীবী হোসেন শহিদ সরওয়াদ্দী জানান, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।  

মামলার বাদী সৎসঙ্গ বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ধৃদিব্রত আদিত্য আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, সত্যের জয় হয়েছে, সৎসঙ্গীরা ন্যায় বিচার পেয়েছেন। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ঠাকুর আমাদের সেবার কথা বলেছেন। ঠাকুরের বাণী প্রচার করে মানুষের সমাজের আর রাষ্ট্রের কল্যাণ করতে চাই।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৭ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৮
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।