টাকা ও ক্ষমতা, যুক্তরাষ্ট্র শুনলে আপনার কল্পনায় ভেসে আসবে এসব অথবা অন্য কিছু। তবে আর যাই আসুক, ক্রিকেট যে আসবে না; এটা মোটামুটি নিশ্চিত।
লম্বা তালিকার শেষদিকে কোথাও ক্রিকেট পেতে হলে, সময় নিয়েই বসতে হবে আপনাকে। অথবা আপনি খোঁজখবর না রাখলে এ নিয়েও দ্বিধায় পড়ে যেতে পারেন- যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেট নিয়ে এত কথা হচ্ছেই বা কেন!
একটা কারণ তো সবারই জানা- সামনের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হবে দেশটিতে। আরেকটি কারণ অ্যারন জোন্স। ভদ্রলোককে আপনি হয়তো চিনতে পারবেন না। যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় ক্রিকেট দলের সহ-অধিনায়ক আছেন এবারের বিপিএলে। রংপুর রাইডার্সের হয়ে খেলছেন তিনি।
নিউইয়র্কেই জন্ম জোন্সের। দাদা ক্রিকেট ভালোবাসতেন পাগলের মতো। অনুপ্রেরণা অবশ্য বন্ধুরা; তাদের সঙ্গে নানা খেলায় মেতে থাকতেন, শেষ অবধি প্রেমে পড়ে গেছেন ক্রিকেটের।
পরে ফিরে গিয়েছিলেন বার্বাডোজে। বাবা-মার আদি বাস সেখানে। বহুদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজ জাতীয় দলের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখেছেন। পরে উপলব্ধি করেছেন, পথটা ভীষণ কঠিন। একসময় সবকিছু থামিয়ে ফিরে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। হয়েছেন দেশটির ক্রিকেটের ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর’দের একজন।
শনিবার মিরপুরের মূল মাঠে যখন বিপিএল ম্যাচের ব্যস্ততা। তখন দলকে হোটেলে রেখে নিভৃতে একাডেমি মাঠে অনুশীলন করছিলেন জোন্স। সঙ্গী হয়েছিলেন কেবল দুই থ্রোয়ার আর সতীর্থ বেনি হাওয়েল; ছিল না কোনো নেট বোলারও। জোন্স প্রায় ঘণ্টা চারেকের অনুশীলন পর্বের বেশির ভাগ সময়ই শুনেছেন হাওয়েলের পৃথিবীজুড়ে খেলে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা।
সব কিছু শেষ করে যখন এলেন; তখন জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্নের ব্যাপারে জানতে চাইতেই তিনি বলছিলেন, ‘সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে। ছোটবেলায় যখন ক্রিকেট খেলতাম, স্বপ্ন ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলবো। এখন আমার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন বিশ্বকাপে খেলা। আমাদের ওই সুযোগ কিন্তু আছে। এ বছর যদি ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলতে পারি...এরপর আগামী বছর তো এমনিতেই সুযোগ পাবো। ’
‘লক্ষ্য বা স্বপ্ন যা-ই বলুন, আরেকটার কথা বলতে পারি; লম্বা সময় খেলতে চাই। যুক্তরাষ্ট্রের তরুণদের অনুপ্রাণিত করতে চাই খেলাটায়। আমার মনে হয় তাদের গাইড করার কাজটা আমি ভালোই পারবো। এটা এখন জীবনের অন্যতম বড় লক্ষ্য। ’
জোন্স এমনিতেও যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটের বড় নাম। তার নাম লেখা থাকবে দেশটির ক্রিকেট ইতিহাসে। ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তাদের ইতিহাস গড়া দিনের একটি। পাপুয়া নিউগিনিকে হারিয়ে সেদিন প্রথম ওয়ানডে জেতে তারা। ৩ চার ও ২ ছক্কায় ১১৭ বলে ৭৭ রানের ইনিংসে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটা পেয়েছিলেন জোন্স।
ওই গল্প শোনাচ্ছিলেন তিনি, ‘জয়টা আমাদের জন্য ছিল অবিশ্বাস্য। খুব ভালো অনুভূতি অবশ্যই। যখনই আপনি জাতীয় দলের হয়ে খেলবেন; রেকর্ড গড়তে চাইবেন, দলের জন্য ভালো কিছু করার তাড়না থাকবে। একটা দেশের প্রথম জয় এসেছে আপনার হাত ধরে; এই অনুভূতি অনন্য। ’
বার্বাডোজের হয়ে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন, লিস্ট-এ ক্রিকেট খেলছেন নিয়মিত। তবুও জোন্সের কাছে বিশেষ যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে তার সেঞ্চুরি। দেশটির ক্রিকেটকে একটু একটু করে এগিয়ে যেতে দেখছেন তিনি।
জোন্স বলছিলেন, ‘ক্রিকেট ওখানে ছড়িয়ে পড়ছে আস্তে আস্তে। দিন দিনই বাড়ছে সবকিছু। আপনাকে এটুকু বলতে পারি, যখন প্রথম খেলা শুরু করি, এত সুযোগ-সুবিধা ছিল না, এখন যতটা আছে। কয়েক বছর আগে যেখানে ছিল, এখন তো অবশ্যই আগের চেয়ে ভালো। ’
কিন্তু খেলাধুলার দিক থেকে যে দেশের নাম শুনলে চোখের সামনে ভেসে বেড়ায় এনএফএল ও বেসবল। এদিক থেকে ক্রিকেটের স্থান বহু দূরে। সেখানে ক্রিকেট কি ডালপালা মেলতে পারবে?
তিনি বলছিলেন, ‘কেন পারবে না? অনেক ব্যবসায়ীরাই ক্রিকেটে আগ্রহ দেখাচ্ছে। তারা খেলাটাতে টাকা ঢালতেও রাজি আছে। কয়েক বছরের মধ্যেই দেখবেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেট কতটুকু এগোয়। আশা করি খুব শিগগিরই আমরা বড় দল হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবো। ’
‘আমাদের বেশির ভাগ ছেলে বিভিন্ন দেশে পেশাদার ক্রিকেট খেলেছে। ভারতের আছে, আমি ক্যারিবীয়ান থেকে গিয়েছি...দুয়েকজন অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার আছে। আসলে পুরো পৃথিবীর ক্রিকেটারই আছে। দুয়েকজনের কথা বলতে পারি, যারা যুক্তরাষ্ট্রেই বেড়ে উঠেছে। তবে জাতীয় দলে খেলার আগে অবধি পেশাদার ছিল না। ’
জোন্সের বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন হয়তো পূরণ হবে অথবা না। তবে তিনি বলছেন, ‘বাংলাদেশের স্পিন খেলা সাহায্য করবে। ’ জোন্স উন্নতি করবেন, পৌঁছাবেন সাফল্যের শিখরে কিংবা না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেটে নামটা যে টিকে থাকবে, এটুকু বলতে দ্বিধার দরকার নেই।
বাংলাদেশ সময়: ২০০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০২৩
এমএইচবি/এমএইচএম