২৪ বছর পর আবারও বাংলাদেশে কার্টলি অ্যামব্রোস। পেশাটা অবশ্য বদলে গেছে।
বিপিএলে জয় দিয়ে শুরু করলেও পরের তিন ম্যাচে হার জুটেছে ঢাকা ডমিনেটর্সের কপালে। দলের এমন দুর্দশা সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে যাচ্ছেন তাসকিন। সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে গতকাল ৪ ওভারে কেবল ১২ রান দিয়ে তার শিকার এক উইকেট। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ম্যাচ শেষে অ্যামব্রোসের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলতে দেখা যায় তাকে। পরে সেখানে যোগ দেন সিলেট অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও।
ক্রিকেট এখন পুরোপুরি ব্যাটারদের হয়ে গেছে বলে মত অ্যামব্রোসের। তিনি বলেন, ‘ক্রিকেট অনেক পাল্টে গেছে। আমি যখন খেলেছি তখন ভিন্নরকম ছিল। অবশ্য তখন টি-টোয়েন্টি ছিল না। শুধুমাত্র ওয়ানডে ও টেস্ট ছিল। এখন খেলার ধরনও বদলে গেছে। বলতে দ্বিধা নেই, খেলাটা এখন ব্যাটারদের হয়ে গেছে। তারা প্রভাবশালী, বোলারদের জন্য কাজটা কঠিন গেছে। উইকেটও পরিবর্তন হয়েছে বেশ। ’
‘সারাবিশ্বেই বছর বছর উইকেট কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনি সেখানেই ভালোমানের উইকেট পাবেন, যেখানে বল বাউন্স হবে এবং সেই বাউন্সের বিপরীতে ব্যাটসম্যান স্ট্রোকস খেলবে, লো এবং স্লো উইকেটে যা কঠিন। সঙ্গে সেখানে বোলারদের জন্য কিছু থাকবে। আসলে ব্যাট-বলের পরীক্ষা হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এখনকার দিনে খেলাটা একতরফা হয়ে যাচ্ছে। ’
এরপর তাসকিনের প্রসঙ্গে টানেন মাশরাফি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে অ্যামব্রোস বলেন, ‘বিদেশের মাটিতে পারফর্ম করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি ক্রিকেটারদের বিচার করি সারাবিশ্বে তারা কোথায় কোথায় পারফর্ম করেছে। কেউ কেউ ঘরের মাঠে খুব শক্তিশালী কিন্তু দেশের বাইরে ভুগতে থাকে। সেরা ক্রিকেটার হতে হলে তোমাকে অবশ্যই যেকোনো কন্ডিশনে টিকে থাকতে হবে এবং সারাবিশ্বে ঘুরে ফিরে পারফর্ম করতে হবে। এবং তুমি (তাসকিন) সঠিক পথেই আছো। ’
টি-টোয়েন্টির যুগে খেলার মাত্রাটা অনেক বেড়ে গেছে। একইসঙ্গে ফাস্ট বোলারদের জন্য ফিটনেস ধরে রাখাটা দিনকে দিন চ্যালেঞ্জের হয়ে যাচ্ছে। অনেকেই জিমে যাচ্ছেন। তবে এতে কোনো আপত্তি নেই অ্যামব্রোসের। কিন্তু বডিবিল্ডার হওয়া চলবে না বলে তাসকিনকে সাফ জানিয়ে দিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৬৩০ উইকেট নেওয়া এই কিংবদন্তি।
তিনি বলেন, ‘আমি খেয়াল করেছি অনেক খেলোয়াড় জিমে প্রচুর সময় দেয়। আমার তাতে একটা অভিযোগ আছে। জিমে যাও। নিজেকে শক্তিশালী করো। কিন্তু বডিবিল্ডার হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ফাস্ট বোলার হিসেবে তোমাকে সাবলীল এবং নমনীয় থাকতে হবে। ওয়েট ট্রেনিংয়ে আপনি কেবল নিজেকে শক্তিশালী করতে পারেন। মনে রাখতে হবে জিমে কেবল প্রচুর দৌড়াতে হবে। ’
‘মাঠে অনেক বোলিং করতে হবে। জিমে গিয়ে পেশিশক্তি বাড়িয়ে তুমি ফিট হবে কিন্তু ম্যাচে ফিট হওয়ার জন্য তোমাকে প্রচুর দৌড়াতে হবে, প্রচুর বোলিং করতে হবে। তাতে তুমি ভেতর থেকে শক্তিশালী হবে। যেটা দিয়ে তুমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পুরস্কৃত হবে। আমি বলছি না যে তোমাকে জিমে যেতে হবে না। কিন্ত ওখানে গিয়ে তোমাকে শক্তিশালী হতে হবে। সব সময় মনে রাখবে, প্রচুর দৌড়াতে হবে ও বোলিং করতে হবে। ’
পেসারদের জন্য পা কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটাও বোঝালেন অ্যামব্রোস, ‘আমি অনেক দেখেছি, জিমে যাচ্ছে, বডি বানাচ্ছে কিন্তু ৪ ওভার বোলিং করার পর তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। পেসারদের জন্য পা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তোমার কাঁধ কখনো ক্লান্ত হবে না। তুমি যদি ক্লান্ত হয়ে যাও তাহলে এক সপ্তাহও বোলিং করতে পারবে না। সেজন্য দুই পায়ের শক্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ। তোমার পা যতটা শক্তিশালী হবে তত তুমি শক্তিশালী হবে। ’
দ্রুততম দৌড় নাকি দীর্ঘতম দৌড়। তাসকিনের এমন প্রশ্নের উত্তরে অ্যামব্রোস বলেন, ‘১০ সেকেন্ডে ১০০ মিটার দৌড়াতে হবে না তোমাকে। এটা তোমার কাজ নয়। কিন্তু অনেক দৌড়াতে হবে, স্ট্যামিনা বাড়াতে হবে এবং পা শক্তিশালী করতে হবে যেন শরীরের ভার বইতে পারে। পাশাপাশি প্রচুর বোলিং করতে হবে। তাহলের শরীরের সব পেশি অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২৩
এএইচএস