ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

শান্ত-হৃদয়-মুশফিকের ব্যাটে ৩২০ রান তাড়া করে জিতলো বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫২ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২৩
শান্ত-হৃদয়-মুশফিকের ব্যাটে ৩২০ রান তাড়া করে জিতলো বাংলাদেশ

শুরুটা করেছিলেন হাসান মাহমুদই। কিন্তু ওই পথে পরে চলতে পারেননি বোলাররা।

হ্যারি টেক্টর সেঞ্চুরি করেন, দারুণ ব্যাটিংয়ে তাকে সঙ্গ দেন জর্জ ডকরেল; আয়ারল্যান্ড পায় বড় রানের সংগ্রহ।

জবাব দিতে নেমে শুরুতে বেশ চাপেই পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। অধিনায়ক তামিম ইকবাল ফিরেছিলেন চতুর্থ ওভারে, বড় রান করতে পারেননি লিটন দাস-সাকিব আল হাসানও। এরপরই শুরু নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহীদ হৃদয়ের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের। চাপ সামলে খেলতে থাকেন দারুণ সব শট। শান্ত ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান, হাফ সেঞ্চুরি পাড় করেন হৃদয়ও। তাদের বিদায়ে ম্যাচ কিছুটা জমে উঠলেও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে চড়ে শেষ অবধি জিতেছে বাংলাদেশই।

শুক্রবার ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ডে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয়টিতে আয়ারল্যান্ডকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩১৯ রান করে আইরিশরা। শেষ ওভারে গিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচ জেতান মুশফিকুর রহিম।  

টস জিতে বোলিংয়ে নামা বাংলাদেশকে প্রথম ওভারেই সাফল্য এনে দেন হাসান মাহমুদ। তার ভেতরে ঢোকা এক বল স্টার্লিংয়ের ব্যাটে লেগে যায় মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। আম্পায়ার আউট না দেওয়ায় রিভিউ নেয় বাংলাদেশ, শূন্য রানে ফিরতে হয় স্টার্লিংকে। হাসান মাহমুদের হাত ধরেই বাংলাদেশ পায় দ্বিতীয় সাফল্যও।  

এবার তিনি ফেরান আরেক উদ্বোধনী ব্যাটার স্টিফেন ডোহানিকে। ২১ বলে ১২ রান করা এই ব্যাটার পয়েন্ট অঞ্চলে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে ক্যাচ দেন। এরপর হ্যারি টেক্টরের সঙ্গে ভালো একটা জুটি গড়ে তুলেছিলেন অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবার্নি। ১০৪ বলে তাদের ৯৮ রানের জুটি ভাঙেন শরিফুল ইসলাম।  

৫৭ বলে ৪২ রান করে তার ওভারে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন আইরিশ অধিনায়ক। মাঝে লরকান টাকারকে শরিফুল ও কার্টিস ক্যাম্পারকে আউট করেন তাইজুল ইসলাম। কিন্তু তখনও ক্রিজের একপাশে ছিলেন হ্যারি টেক্টর। এক পর্যায়ে তিনি বাংলাদেশের বোলারদের তুলোধোনা শুরু করেন।

তাতে তাকে দারুণ সঙ্গ দেন জর্জ ডকরেল। তাইজুলের ৩৭তম ওভার থেকে ১৬, শরিফুলের করা পরের ওভারে আসে ২৪ রান। প্রতি ওভারেই ১০ এর বেশি করে রান নিতে থাকে ডকরেল-টেক্টর জুটি। তাদের দুজনের জুটিতে ৬৮ বলে আসে ১১৫ রান। অবশেষে সেটি ভাঙেন এবাদত হোসেন। ৭ চার ও ১০ ছক্কায় ১১৩ বলে ১৪০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে তার বলে বোল্ড হন টেক্টর।  

ওয়ানডে ক্যারিয়ারে চতুর্থ সেঞ্চুরি পেলেও দল হেরেছে টেক্টরের, তার আগের তিন সেঞ্চুরিতেও ঘটেছিল একই ঘটনা। টেক্টরের বিদায়ের পরও দলের ইনিংস টেনে নেন ডকরেল।  এই ব্যাটার ৩ চার ও ৪ ছক্কার ইনিংসে ৪৭ বলে ৭৪ রান করে শেষ অবধি অপরাজিত থাকেন। ৮ বলে ২০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন আট নম্বরে নামা মার্ক অ্যাডায়ার। বাংলাদেশের পক্ষে ৯ ওভারে ৪৮ রান দিয়ে হাসান মাহমুদ, সমান ওভারে ৮৩ রান দিয়ে দুই উইকেট নেন শরিফুল ইসলামও।

বড় রান তাড়া করতে নেমে লিটন দাসকে নিয়ে সাবধানী শুরুর চেষ্টা করেন তামিম ইকবাল। জশ লিটলের প্রথম ওভার থেকে কেবল এক রান নেয় বাংলাদেশ, যার চারটি বল খেলেন তামিম। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই তামিমের বিরুদ্ধে রিভিউ নিয়েও সফল হয়নি আয়ারল্যান্ড।  

ওই ওভার থেকে বাংলাদেশ ছয় রান তুলতে পারে। পরে তৃতীয় ওভার থেকে নেয় তিন রান। পরের ওভারের তৃতীয় বলেই আউট হয়ে যান তামিম। মার্ক অ্যাডায়ারের হাফ ভলিতে মিডউইকেটে ক্যাচ দেন তিনি। ১৩ বল খেলে বাংলাদেশ অধিনায়ক করেন কেবল ৭ রান।  

এরপর লিটন দাসকে দেখে স্বাচ্ছন্দ্যই মনে হচ্ছিল কিছুটা। কিন্তু ২ চার ও ১ ছক্কার ইনিংসে ২১ বলে ২১ রান করে গ্রাহাম হিউমের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। পরে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ৬১ রানের জুটি গড়ে উঠে নাজমুল হোসেন শান্তর। ২৭ বলে ২৬ রান করে কার্টিস ক্যাম্পারের বলে সাকিব আউট হলে ভেঙে যায় এই জুটি। এরপর ক্রিজে আসেন তাওহীদ হৃদয়।  

শান্তর সঙ্গে তার জুটি জমে ওঠে বেশ। দুজন মিলে মারতে শুরু করেন। খেলছিলেন দুর্দান্ত সব শটও। হৃদয়ের কবজির ব্যবহার ছিল চোখে পড়ার মতো। জর্জ ডকরেলের বল তুলে মারতে গিয়ে আউট হন তিনি। ততক্ষণে ১০২ বলে ১৩১ রানের দারুণ এক জুটি হয়ে গেছে। ৫ চার ও ৩ ছক্কার দারুণ ইনিংসে ৫৮ বলে ৬৮ রান করেন হৃদয়।

তার আগে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন শান্ত।   এই ব্যাটারকে ফিরতে হয়েছে কার্টিস ক্যাম্পারের শর্ট বলে, ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে। ১২ চার ও ৩ ছক্কায় ৯৩ বলে ১১৭ রান করেন শান্ত। একসঙ্গে দুই সেট ব্যাটারকে হারিয়ে কিছুটা বিপাকে পড়ে যায় বাংলাদেশ, সেটি আরও বাড়ে মেহেদী হাসান মিরাজের বিদায়ে। ৩ চারে ১২ বলে ১৯ রান করে জর্জ ডকরেলের বলে এলবিডব্লিউ হন তিনি।

এরপর দলের হাল ধরেন মুশফিকুর রহিম। তিনি অবশ্য রান নাগালের ভেতর রাখতে তাইজুল ইসলামকে নিয়মিতই স্ট্রাইক দিয়ে যাচ্ছিলেন। ৪৪তম ওভারে তাইজুল আউট হওয়ার পর ব্যাটিংয়ে এসে প্রথম বলেই চার হাঁকান শরিফুল। শেষ ওভারে সমীকরণ দাঁড়ায় পাঁচ রানের।  

এর মধ্যে তৈরি হয় নতুন নাটকীয়তা। মার্ক অ্যাডায়ারের প্রথম দুই বল ডট খেলেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু তৃতীয় বলটি তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন তিনি। তবে রিপ্লে দেখে আম্পায়াররা সেটিকে নো বল ঘোষণা করেন। ফ্রি হিটের বলে চার মেরে ম্যাচ শেষ করেন মুশফিক। তিন ম্যাচ সিরিজের দুই ম্যাচ শেষে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচটি মাঠে গড়াবে আগামী রোববার।

বাংলাদেশ সময় :০১৫২ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২৩
এমএইচবি

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।