ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

আশার আলো তাসকিন-হাসান/

স্পিন থেকে যেভাবে পেস নির্ভর বোলিং আক্রমণের যুগে বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০২৩
স্পিন থেকে যেভাবে পেস নির্ভর বোলিং আক্রমণের যুগে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ দলের বোলিং আক্রমণ একসময় ছিল পুরোপুরি স্পিন নির্ভর। দীর্ঘদিন যার নেতৃত্ব দিয়েছেন মোহাম্মদ রফিক।

এরপর অনেকেই ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। কিন্তু স্পিন নির্ভরতা কাটেনি। একটা সময় স্পিন নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠেন সাকিব আল হাসান। তার বাঁহাতি স্পিন দীর্ঘদিন ধরে দলকে দারুণ সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। পরে তাতে যুক্ত হয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ, নাসুম আহমেদ, তাইজুল ইসলাম এবং শেখ মেহেদীর মতো তরুণরা।

কিন্তু সময় বদলেছে। দলে বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ স্পিনার থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ দলের বোলিং এখন পেস নির্ভর। নিয়মিতই দলের জয়ে অবদান রাখছেন তারা। তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, এবাদত হোসেন, শরিফুল ইসলাম, খালেদ আহমেদ এবং সর্বশেষ তানজিম সাকিব- দলে এখন পেসারের অভাব নেই। দুয়েকজন ইনজুরিতে পড়লেও বিকল্প তৈরি থাকছে। এমনকি দলে এত পেসার থাকায় নির্বাচকদের জন্য সেরা একাদশ বাছাই নিয়েই মধুর সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এমনটা কয়েক বছর আগেও কল্পনা করা যেত না।

কীভাবে এত বদলে গেল টাইগারদের বোলিং আক্রমণ? এর পেছনের উত্তর খুঁজে পাওয়া যায় বর্তমান ফাস্ট বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডের কথায়। বাংলাদেশ দলের বর্তমান পেস আক্রমণ নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সিতে ৬০০ উইকেট নেওয়া ডোনাল্ড বলেন, 'এটা দারুণ ব্যাপার যে, আমাদের দলে কয়েকজন আছে যারা অনেক ক্ষুধার্ত এবং তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু তারা একে অন্যের জন্য কাজ করছে। তারা বলকে সুইং করাতে সক্ষম। তারা কব্জির টার্নওভারের ক্ষেত্রেও অনন্য। '

বোলিংয়ে দীর্ঘদিন বাংলাদেশ দলের স্পিনাররাই মূল পার্থক্য গড়ে দিতেন। ঘরের মাঠে তো একসময় একজন বিশেষজ্ঞ পেসার নিয়েও খেলতে দেখা গেছে। কারণ ঘরের মাঠে স্পিন-বান্ধব পিচ বানানো একসময় নিয়মে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু সেই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে দেশের ক্রিকেট। এখন স্পোর্টিং উইকেটের দিকেই বেশি আগ্রহ সবার। আর তাতে পেসারদের গুরুত্বও বেড়েছে দলে। যার ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে হাতেনাতেই।  

গত ১২ মাসে ওয়ানডে ম্যাচগুলোতে দলের ৬০ শতাংশ উইকেট পেয়েছেন পেসাররা। যদিও ৪৮ শতাংশ ওভার করেছেন তারা। অধিকাংশ ম্যাচই আবার ঘরের মাঠে খেলেছে বাংলাদেশ। যেখানে অধিকাংশ সময় স্পিন-বান্ধব পিচই পেয়েছেন পেসাররা। ফলে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে তাদের। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা সাফল্য পেয়েছেন নিয়মিতই। আরেকটা তুলনা করলে পেসারদের উন্নতির একটা চিত্র পাওয়া যেতে পারে। গত এক বছরে ইংল্যান্ডের পেসাররা ওয়ানডেতে দলের ৪০ শতাংশ উইকেট পেয়েছেন।  

এই ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই ২০২৩ বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। আগামীকাল মঙ্গলবার এই ম্যাচটি দলের পেসারদের জন্যও বড় পরীক্ষা। কারণ ইংলিশ ব্যাটাররা পেস বোলিংয়ে বেশ সাবলীল। যদিও ডোনাল্ড বেশ আশাবাদী। কারণ টাইগার পেসারদের মাইন্ডসেট এখন একেবারেই আলাদা। এ ব্যাপারে তার মন্তব্য, 'সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল তাদের নিজেদের নিয়ে ভাবনায় পরিবর্তন আনা এবং গ্রুপ হিসেবে কীভাবে আরও বেশি আক্রমণাত্মক হওয়া যায় তা নিয়ে কাজ করা। আগে তারা অনেক বেশি ফলাফল নিয়ে ভাবতো- প্রত্যেক বলে তারা ভুল করার ভয়ে থাকতো। এই ভাবনায় পরিবর্তন আনার জন্য অনেক সময় লেগেছে: চার ছক্কা হজম করা বড় ব্যাপার নয়, কারণ খেলাটা এগিয়ে নিতে হবে। '

মাশরাফি-রুবেল হোসেন যুগের পর মোস্তাফিজুর রহমান সামলেছেন কিছুদিন। তবে পেস বোলিংয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দলের অঘোষিত নেতা এখন তাসকিন আহমেদ। ৯ বছর আগে ওয়ানডে অভিষেক হওয়া তাসকিন ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার এই ফরম্যাটের বিশ্বকাপ খেলছেন। ২৮ বছর বয়সী এই পেসার এ বছর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সেরা সময় কাটাচ্ছেন। ইনিংসের যে কোনো পর্যায়ে বোলিং করছেন তিনি। ডোনাল্ডও তাই প্রিয় শিষ্যকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন, 'সে চমৎকার একজন মানুষ। সে মাখনের মতো নরম, কিন্তু মাঠে সে একেবারেই আলাদা। বোলিংয়ের সময় তার প্যাশন এবং উইকেট পাওয়ার পর তার উচ্ছ্বাস দেখলেই তা বোঝা যায়। '

দলে পেস বোলিং আক্রমণের নেতা হিসেবে তাসকিনের উত্থান নিয়ে ডোনাল্ড বলেন, 'সে (তাসকিন) অনেক প্রশ্ন করে এবং দেড় বছর আগে যখন নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলছিলাম, সে পুরোপুরি তাতে ঢুকে পড়েছিল। সে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে আগ্রহী ছিল। সে সেরাটা দিতেই মাঠে নামে। '

তবে তাসকিনকে ফিট রাখা যে খুবই চ্যালেঞ্জিং সে কথাও মনে করিয়ে দেন ডোনাল্ড। পুরো আসরে তাকে ফিট হিসেবে পাওয়া যাবে কি না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে তার। তিনি বলেন, 'সে (তাসকিন) ঘোড়দৌড়ের ঘোড়া নয়। তার এনার্জি লেভেল যদি ঠিকঠাক রাখা যায়, তাহলে তার কাছ থেকে সেরাটা পাওয়া সম্ভব। এই বিশ্বকাপটা অনেক লম্বা সময়ের এবং তাসকিনকে ম্যানেজ করা অগ্রাধিকারের দিক থেকে প্রথমদিকে থাকবে। '

তাসকিন ছাড়াও পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো অগ্রগতি হয়েছে হাসান মাহমুদের। ২৩ বছর বয়সী এই পেসার ধীরে ধীরে নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। যদিও দলের অন্য পেসারদের মতো তার বলের গতি ঠিক ফাস্ট বোলারদের মতো নয়। কিন্তু তার লাইন-লেন্থ দারুণ কার্যকর। ডোনাল্ডের চোখে হাসান মাহমুদ মানুষ হিসেবে অনেক শান্ত প্রকৃতির। তিনি নিজের আবেগকে দমিয়ে রাখতে পারেন এবং প্রতিপক্ষকে বেশি কিছু বুঝতে দেন না।  

হাসান মাহমুদের বোলিং দক্ষতা নিয়ে ডোনাল্ড বেশ উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেন, 'সে ভেতরে এবং বাইরে দুইভাবেই বল করতে পারে, সে তুখোড় বাউন্সার এবং গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে উইকেট তুলে নিতে পারে। সে ক্রিকেট উপভোগ করে এবং সে খুবই সাধারণ ছেলে। '

বাংলাদেশ এর আগে কোনো বিশ্বকাপে তিন ম্যাচের বেশি জিততে পারেনি। ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলাই সর্বোচ্চ সাফল্য। সেবারও পেসারদের দাপুটে পারফরম্যান্স নজর কেড়েছিল সবার। মাশরাফি বিন মর্তুজা, রুবেল হোসেন ও তাসকিন আহমেদের বোলিং ঝলকে সেবার ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই তিন জনের মধ্যে এখন আছেন কেবল তাসকিন। তবে এবার সঙ্গে পেয়েছেন কয়েকজন তরুণ ও আগ্রাসী পেস সতীর্থ।  

ব্যাটিংয়ে কিছুটা নড়বড়ে অবস্থায় আছে বাংলাদেশ। তাই পেসারদের সাফল্যের ওপর টাইগারদের সাফল্য নির্ভর করছে অনেকখানি। আগামীকাল তাসকিনদের 'ইংলিশ পরীক্ষা'। এমনিতেই আসরের নিজেদের প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে বিধ্বস্ত হয়ে ব্যাকফুটে চলে গেছে ইংল্যান্ড। আর বাংলাদেশ শুরু করেছে আফগানিস্তানকে হারিয়ে। প্রত্যাশার জায়গাটাও তাই স্বাভাবিকভাবেই বেশি বাংলাদেশকে ঘিরেই।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০২৩
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।