নিয়তি তো আসলে এই-ই ছিল! তবুও কেন আফসোস? সম্ভবত প্রত্যাশা। এক দল প্রথম ম্যাচ হেরেছে বড় ব্যবধানে, আরেকটা শুরু করেছে দারুণ জয়ে।
ধর্মশালার পাহাড়ের ভিড়ে আফগানিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশ নিয়ে গিয়েছিল বেশ উঁচুতে। এখন যদি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মুষড়ে পড়ার হতাশা পেয়ে বসে, তা ভোগাবে পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে। এমনিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়নের তকমা গায়ে লাগিয়ে আসা ইংল্যান্ডের কাছে হেরে যাওয়া তেমন অস্বাভাবিক নয়।
কিন্তু সমস্যা হলো হারটা এসেছে ১৩৭ রানের বিশাল ব্যবধানে। প্রথমে ব্যাট করে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ইংল্যান্ড দিচ্ছিল চারশ ছোঁয়ার প্রতিশ্রুতি। কিন্তু এ ম্যাচের দুয়েকটি ইতিবাচক দিকের একটি- শেষের ভালো বোলিংয়ে তাদের থামতে হয় ৩৬৪ রানে। পরে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে ২২৭ রানে।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে কী দারুণ বোলিংই না হয়েছিল। এ ম্যাচেও তাই টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়েই নেমেছে বাংলাদেশ। তবে একাদশে একজন ব্যাটার অর্থাৎ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বসিয়ে নেওয়া হয় মাহেদী হাসানকে। কিন্তু প্রথম উইকেটটা পেতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয় ১৮তম ওভারের পঞ্চম বল অবধি।
মাঝখানে একটি রিভিউ নিয়েছিল বাংলাদেশ, সেটিও বেশ উচ্ছ্বসিত হয়ে। কিন্তু পরে দেখা গেলো বল লেগেছে মালানের জার্সিতে। এরপর থেকে যে মার শুরু করলেন মালান, থামলেনই না। ২০১৪ সালে করা বিরাট কোহলির ইনিংস ছাড়িয়ে ধর্মশালায় ১৬ চার ও ৫ ছক্কায় ১০৭ বলে ১৪০ রান করে মাহেদী হাসানের বলে বোল্ড হন তিনি।
প্রথম উইকেটটা অবশ্য এনে দিয়েছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তিনিও বোল্ডই করেছেন। ফ্লিক করতে গিয়ে সাকিবের স্লোয়ারে বেয়ারস্টো বোল্ড হন ৫৯ বলে ৫২ রান করে। হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনে নামা জো রুটও। বিশ্বকাপে তৃতীয়বারের মতো কোনো দলের তিন টপ-অর্ডার ব্যাটার বাংলাদেশের বিপক্ষে হাফ সেঞ্চুরি ছুন।
পরের গল্পটা শরিফুল ইসলামের। এমনিতে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জশ বাটলারকে ফিরিয়েছিলেন তিনি। পরে জাগিয়ে তোলেন হ্যাটট্রিক সম্ভাবনাও। টপ এজ হয়ে জো রুট ক্যাচ দেন মুশফিকুর রহিম, ততক্ষণে তিনি করেছেন ৬৮ বলে ৮২ রান। পরের বলেই লিয়াম লিভিংস্টোনকে গোল্ডেন ডাক উপহার দেন শরিফুল। হ্যাটট্রিকটা অবশ্য শেষ অবধি পূরণ করতে পারেননি তিনি।
বাংলাদেশের বোলাররা পরে অবশ্য ঘুরে দাঁড়ায় দারুণভাবে। কিন্তু ততক্ষণে একটু বেশিই দেরি হয়ে গেছে। আদিল রশিদের ৭ বলে ১১ কিংবা ক্রিস উইকসের ১১ বলে ১৪ রানের ইনিংসে ইংল্যান্ডের রান সাড়ে তিনশ ছাড়িয়েও গেছে অনেকটুকু দূরে।
বাংলাদেশ যখন জবাব দিতে নেমেছে, স্বাভাবিকভাবেই তখন দলের সবচেয়ে বড় আশা বা ভরসা লিটন দাস। ক’দিন ধরে তার ব্যাটে রান নেই, একটু চাপ তাই তার ছিল। অথচ কী আশ্চর্য, লিটনের চেয়েও বেশি চাপে মনে হলো বাকি ব্যাটারদের।
ইংল্যান্ডের উইকেটের দেখা পেতেও খুব বেশি সময় লাগেনি। মুখোমুখি হওয়া দ্বিতীয় বলেই রিচ টপলিকে খোঁচা দিয়ে তানজিদ হাসান তামিম ক্যাচ দেন দ্বিতীয় স্লিপে, তখন তার রান কেবল এক। এমনিতেই বিপদের শেষ নেই, সেটি আরও বাড়ে পরের বলেই নাজমুল হোসেন শান্ত পয়েন্টে ক্যাচ দিলে।
হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগে টপলির। সাকিব আল হাসান ওই বলে মুখোমুখি হয়ে কিছুই বুঝে উঠতে পারেননি। ইংলিশ সাংবাদিকরা প্রেসবক্সে বসে বেশ আনন্দই পেলেন তাতে। সাকিব অবশ্য পুরো ইনিংসেই সম্ভবত কিছু বুঝে উঠতে পারেননি।
৯ বলে ১ রান করে টপলির যেই বলটিতে তিনি আউট হলেন, সেটিতে ব্যাট নামিয়েও কুল পাননি। চারে খেলতে নামা মিরাজও সুবিধা করতে পারেননি। মার্ক উডের বলে উইকেটের পেছনে বাটলারের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। এরপর তাওহীদ হৃদয়ের সঙ্গে মুশফিকুর রহিমের ৪৫ রানের জুটি কেবল ব্যবধানই কমিয়েছে দুই দলের।
৬৪ বলে ৫১ রান করে টপলির বলে আদিল রশিদের কাছে ক্যাচ দিয়ে মুশফিক আউট হন। শেষ সম্ভাবনা তাওহীদ হৃদয়ও খেলছিলেন ব্যবধান কমানোর জন্য। তার সঙ্গী ছিলেন একাদশে ফেরা মাহেদী হাসান। কিন্তু লিভিংস্টোন বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই ফিরিয়ে দেন হৃদয়কে।
২ চারে ৬১ বলে ৩৯ রান করে তার ফেরার পর কার্যত শেষ হয়ে যায় সব সম্ভাবনাও। এরপর কেবল অপেক্ষা ছিল বাংলাদেশের হারের মুহূর্তটা আসার। ধর্মশালার মায়াবী প্রকৃতি থেকে বিদায় নিতে নিতে বাংলাদেশ এখন একটাই মন্ত্র জঁপতে পারে- টুর্নামেন্টটা অনেক লম্বা!
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০২৩
এমএইচবি/এমএইচএম