ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

বিশ্বকাপ ভ্রমণের গল্প

শুধুই ‘নামের কাশ্মিরে!’ 

মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, দিল্লি থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০২৩
শুধুই ‘নামের কাশ্মিরে!’ 

দিল্লির অভিজ্ঞতা এমনিতে খুব একটা ভালো না। এক কথায় বললে- ধান্ধাবাজ লোকজনে ভরা।

একটু সরল অঙ্ক হয়ে গেলো কি না কে জানে, পুরো শহর তো আর ঘুরে বেড়াইনি; তবে অভিজ্ঞতাটুকু তেমন ভালো না। একটা দিক অবশ্য স্বস্তি পাওয়ার মতো- দিল্লির যানজট ঢাকার তুলনায় সহনীয়।

ইন্ধিরা গান্ধী বিমানবন্দর থেকে আমাদের মূল গন্তব্য ছিল ধর্মশালা। কিন্তু পাহাড়ি এলাকার বাস খুঁজে পাওয়াই মুশকিলের বিষয়। পরে যখন ওখানে গিয়েছি, তখন আরও বেশি করে উপলব্ধি করেছি সেটি। এমনিতে দেখতে সুন্দর, কিন্তু পাহাড়ের আঁকাবাঁকা রাস্তায় মাথা ঘুরানো নিয়মিত ঘটনা; বাস পাওয়ার মতো কাজ করাও মুশকিল।  

এয়ারপোর্ট থেকে শুরুতে টেক্সি নিয়ে তাই আসতে হলো কাশ্মির গেট নামে এক জায়গায়। প্রথমে নামটা শুনে ভীষণ রোমাঞ্চ হলো। কাশ্মির দেখার কপাল তো হবে বলে আপাতত মনে হচ্ছে না। অদূর ভবিষ্যতে ওখানে খেলা হওয়ার সম্ভাবনাও তেমন নেই। কাশ্মিরী ঝলক দেখার ভালো সুযোগ হতে পারে ভাবনা নিয়ে এগোচ্ছি পুরো পথ জেগে থেকেই। প্লেন জার্নি, এর আগের সময়ের ধকলের ক্লান্তি ছিল; তবুও না ঘুমানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে সফল হওয়া গেলো।  

টেক্সি ড্রাইভারের শহর নিয়ে তেমন একটা ধারণা নেই, ঝাড়খণ্ড থেকে আসা ভদ্রলোক আশেপাশের ওপর এমনই রেগে থাকেন; তার সঙ্গে কথা বলাও মুশকিল হয়ে যায়। তাই ইংরেজিতে বড় বড় অক্ষরের লেখা পড়ে বুঝতে হলো দিল্লির কোথায় কী আছে। কয়েকদিন আগে হয়ে যাওয়া জি-২০ সম্মেলনের ছোঁয়াই বেশি। ‘ইন্ডিয়া গেট’ দেখলাম খুব দূর থেকে। মন ভরার মতো না অবশ্যই।  

সব ছাপিয়ে রোমাঞ্চ অবশ্য তখনও কাশ্মির গেটকে ঘিরে। নামের সঙ্গে কাশ্মির থাকলে অজান্তেই মনের ভেতর একটা ঐশ্বরিক সৌন্দর্যের ব্যাপার চলে আসে। জায়গাটাতে ঢোকার আগেই আগেই এসে বাধলো যানজট- এমন বিরক্তি এলো, আরে ভাই, কাশ্মির দেখতে যাওয়াতেও তোর বাধা হতে হলো!

ঢোকার পর মনে হলো, অপেক্ষাটা আর কখনো না ফুরালেই বোধ হয় ভালো হতো। কীসের কাশ্মির আর কীসের সৌন্দর্য, এ দেখি আসলে বাসস্ট্যান্ড। এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে বাংলাদেশের গাবতলী বা সায়েদাবাদের মতো। ভীষণ পরিপাটি, গোছানো বাসস্ট্যান্ড। মেট্টোরেল দেখার শখ দেশেই মিটিয়ে এসেছি, এখানে এসে তাই অবাক লাগেনি।

তবে এই কাশ্মির গেট বাসস্ট্যান্ডের ভেতরই মেট্টোরেল স্টেশন। লোকজন লাগেজ-টাগেজ নিয়ে ট্রেন থেকে নামছেন, বাসে উঠছেন। আরেক দল করছেন উল্টোটা। সামনেই একটা ছোটখাটো হোটেলের মতো। ওখানেই প্রথম ভারতীয় খাবারের স্বাদ নেওয়া। ডাল মাখনী আর বাটার চিকেনে কিছুটা হলেও বিরক্তি মিটেছিল বোধ হয়।  

বাস স্ট্যান্ড ঢোকার পর আরও কিছুটা। বাংলাদেশী যেমন ভিড় খাট্টা আর হই-হুল্লোড় ভাবনা চলে আসে বাস স্ট্যান্ডের কথা শুনলে- তেমন একদমই না। মানুষজন তেমন একটা নাই। লিফট, চলন্ত সিঁড়ি সবই আছে; মেট্টোরেল স্টেশনের কথা তো আগেই লিখেছি।

এমনিতে অবশ্য জায়গাটার সঙ্গে কাশ্মিরের সংযোগ আছে। এখান থেকেই নাকি কাশ্মিরে যাওয়ার রাস্তা শুরু হয়েছে, এজন্যই এর নাম ’কাশ্মির গেট’। ওই জায়গাটুকু দেখলে অবশ্য শুধুই নামের কাশ্মির না বলে উপায় নেই।  

একটু দূরে গেলে একটা গেট আসলেই আছে। ১৮৩৫ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার রবার্ট স্মিথ তৈরি করেছিলেন সেটি। বছর ১৩ পরে ব্রিটিশদের সঙ্গে এখানেই যুদ্ধ হয়েছিল, তাতে আনুষ্ঠানিকভাবে পতন হয় মুঘলদের। কাশ্মির গেট ওই যুদ্ধে জিততে সহায়তা করেছিল ব্রিটিশদের।

পরে জায়গাটা হয়ে ওঠে ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল। ১৯৩১ এর দিকে এসে নয়া দিল্লি তৈরির পর তাতে কিছুটা ভাটা পড়ে। এর আগে অবধি কাশ্মির গেটই ছিল দিল্লির প্রাণকেন্দ্র।  

প্রকৃতির মায়া দেখার আশা যে গুড়ি বালি হয়েছে, ওই আফসোস এসব জানার পর একটু কমেছে। কল্পনার সীমানা টেনে নিয়ে গেছে সেই দুইশ বছর দূরে। এজন্যই বোধ হয় কথায় আছে, ‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই; পাইলেও পাইতে পারো...’ 

কাশ্মির গেটে এসে প্রকৃতি না পাই, ইতিহাস তো পাওয়া গেলো- এই বা কম কী!

বাংলাদেশ সময়: ২১৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০২৩
এমএইচবি/এমএইচএম/আরইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।