মাশরাফি বিন মর্তুজার পায়ে গিয়ে বলটা লাগলো হালকা টার্ন করে। সঙ্গেই সঙ্গেই বাউন্ডারির দিকে দৌড় শুরু করলেন আলিস আল ইসলাম।
বিপিএল অভিষেকে এসে হ্যাটট্রিক করে ফেলেছিলেন। পরে তার বিরুদ্ধে আসে ‘চাকিংয়ের’ অভিযোগ। এবার চার বছর পর বিপিএল প্রত্যাবর্তন হয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে। ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে তিনি ৩ ওভারে খরচ করেন ৩০ রান।
তবুও তার প্রতি আস্থা রাখে কুমিল্লা। আদতে আলিসের চাকিং থেকে ফেরার ‘অনেক লম্বা গল্পের’ পুরোটাজুড়েই ছিলেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। এবারের বিপিএলেও কুমিল্লা ড্রাফট থেকে একজন খেলোয়াড় কম নেয়। সালাউদ্দিন মনে মনে ভেবে রেখেছিলেন আলিসের কথাই।
কিন্তু সেটি প্রকাশ করতে চাইছিলেন না ‘ফেভার’ করছেন এমন অভিযোগ এড়াতে। তবে আলিসকে একটা পরীক্ষায়ও ফেলেন তিনি। তাকে সুযোগ দেন কুমিল্লার নেটে। সেখানে দেখে আলিসকে দলে নেওয়ার কথা বলেন লিটন দাস-ইমরুল কায়েসরা। পরে আইএলটি-টোয়েন্টিতে ব্যস্ত সুনীল নারাইন না আসায় সহজ হয় তাকে নেওয়া।
তাকে দলে নেওয়ার কারণ সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে ম্যাচের পর শোনাচ্ছিলেন সালাউদ্দিন, ‘আমাদের দেশে আসলে রহস্য বোলার খুব কম। ছেলেটা অনেক আগে শুরু করেছিল, অনেক ভালো করছিল। এর মাঝে চাকিংয়ের কারণে অনেক দূরে ছিল। তারপর ওর ফেরাটা খুব কঠিন ছিল। আমরা ওর ওপর বিশ্বাস রেখেছি। ও আমার কাছে অনুশীলন করায় হয়তো আমাদের জন্য একটা সুবিধা ছিল (বিশ্বাস রাখতে)। ’
‘কারণ ওকে কাছ থেকে দেখার সুযোগটা হয়েছে। ওর বলে অনেক বৈচিত্র আছে। এই ধরনের বোলার আমরা অনেক দিন ধরেই খুঁজছি। আমাদের দেশে আসলে টি-টোয়েন্টিতে ভালো করার জন্য রহস্য বোলার দরকার। যেহেতু আমাদের লেগ স্পিনারও ভালো পাচ্ছি না। তাই একজন রহস্য বোলার পেলে দেশের জন্য অনেক লাভ হবে। অবশ্যই তার অনেক বৈচিত্র আছে। সে যদি নার্ভটা ধরে রাখতে পারে, আমার মনে হয় অনেক বড় সম্পদ হতে পারে। ’
‘আমার কাছে যেহেতু ছিল, আমি হয়তো (খেলানোর) সাহস করছি। সে কারণে হয়তো বুঝতে পারছি, টি-টোয়েন্টিতে সে ভালো করতে পারে। বিশেষ করে নতুন বলে সে খুব ভয়ঙ্কর বোলার। তার বলে অনেক বৈচিত্র আছে। যেটা আসলে অনেক সময় দেখা যায় না। ৩-৪ বৈচিত্র আছে, যেটা যে কোনো ব্যাটসম্যানকে বিপদে ফেলতে পারে। আর উইকেটে সাহায্য থাকলে তো আরও বেশি বিপজ্জনক হবে। ’
সবশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও খেলেছেন আলিস। পাঁচ ম্যাচে মাঠে নেমেছিলেন, একটিতে তিন উইকেট নেওয়া ছাড়া বলার মতো তেমন পারফরম্যান্স নেই। এর মধ্যেই ভুগতে হয়েছে ইনজুরিতে। সব প্রতিবন্ধকতা দূরে ঠেলে আলিস পারফর্ম করেছেন শীর্ষ পর্যায়ে।
আলিসের চাকিংটা কি সালাউদ্দিনের কাছেই ঠিক হয়েছে? অ্যাকশনের কারণে কঠিন এই কাজটা অভিজ্ঞ এই কোচই করেছেন। কিন্তু কেন করলেন? এর কারণও বলেছেন হাসতে হাসতে নিজেকে ‘চাকিং স্পেশালিস্ট’ দাবি করা এই কোচ।
তিনি বলেন, ‘গত বছরও সে প্রিমিয়ার লিগ খেলেছে, ভালো খেলেছে। দুইটা ম্যাচ খেলেছে। বেশি ম্যাচ পায়নি। আমার সাথেই ছিল প্রাইম ব্যাংকে। তবে ইনজুরির কারণে অনেক দিন ভুগেছে। হাঁটুতে সমস্যা ছিল। তার আগে চাকিংয়ের সমস্যা ছিল। ’
‘এই ধরনের ছেলেদের আমি সহায়তা করি কেন, কারণ তারা কখনও খেলাটা ছেড়ে দেয় না। একটা ছেলে যদি চেষ্টা করে, তাহলে আমি যত বড় কোচই হই না কেন, ওই ছেলেকে সাহায্য করা আমার দায়িত্ব। ছেলেটা মনেপ্রাণে চেষ্টা করছে। সারাটা বছর চেষ্টা করছে। তার উন্নতি আমি দেখছি। তাকে সাহায্য করা আমার নৈতিক দায়িত্ব। ’
বাংলাদেশ সময়: ১২১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২৪
এমএইচবি/এমএইচএম