সপ্তাহ দুয়েক আগেও শামার জোসেফকে চেনার মতো লোক ক্রিকেট বিশ্বে খুব কমই ছিল। কিন্তু গতকালের পর যেন ক্রিকেটেরই সমার্থক হয়ে উঠেছেন এই ক্যারিবিয়ান পেসার।
অনভিজ্ঞতায় ভরপুর যে দলটিকে নিয়ে কেবল সমালোচনাই শোনা যাচ্ছিল চারপাশে। সে দলটিকে নিজের কাঁধে টেনে নিয়ে ইতিহাসের জন্ম দিলেন তিনি। ২৭ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জয় তার আগুনে ঝরা বোলিংয়ে ভর করেই। ২১৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে ২০৮ রানেই গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। টানা ১১.৫ ওভারের স্পেলে ৬৪ রান খরচে একাই ৭ উইকেট শিকার করেন জোসেফ।
এরপর আর কী! চারিদিকে কেবল প্রশংসা আর বন্দনা গুনছেন জোসেফ। কারও কারও মতে, তার হাত ধরেই পুনর্জাগরণ ঘটবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। কিংবদন্তি অস্ট্রেলিয়ান স্টিভ ওয়াহর চোখে তো তিনি টেস্ট ক্রিকেটের ত্রাণকর্তা।
জোসেফের এই অর্জনে আনন্দের সাগরে ভাসছে তার পরিবার ও পুরো গ্রাম। যে গ্রামের সঙ্গে ইন্টারনেটের পরিচয় হয়েছে কেবল ছয় বছর আগে। গায়ানার মূল শহর থেকে কাঞ্জে নদী ঘেঁষা সেই বারাকারা গ্রামে যেতে দুই দিন পর্যন্ত সময় লেগে। এমন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে এসে মাত্র দুই টেস্ট খেলে আজ রীতিমত তারকা বনে গেছেন জোসেফ।
অথচ তিন বছর আগেও কাঠুরে হিসেবে কাজ করতেন জোসেফ। গাছ কাটতে গিয়ে একবার নিজের বিপদও ডেকে আনেন। অল্পের জন্য রেহাই পান মৃত্যু থেকে। উন্নত জীবনের আশায় এরপর কাছের শহর নিউ অ্যামস্টারডামে নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কাজ করেন তিনি। তবে ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা তার শুরু থেকে। এমনকি লেবু-পেয়ারাকে প্লাস্টিকে মুড়িয়ে বোলিং করেছেন। তাই উচ্চতা স্বাভাবিকের তুলনায় কম সত্ত্বেও তার গতি বিস্মিত করেছে অনেককে।
সেই সহজাত প্রতিভাই খুলে দিয়েছে জাতীয় দলের দরজা। এরপর বল হাতে ক্রিকেট বিশ্বের সামনে পরিচয় করিয়ে দিলেন নিজের গ্রামকে।
ব্রিসবেনে ঐতিহাসিক জয়ের পর গায়ানিজ সংবাদমাধ্যম স্টাব্রোক নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জোসেফের বোন সারাফিনা জোসেফ বলেন, 'আমরা তার অর্জনে আনন্দিত। তার সাফল্য দেখে কেঁদে দিয়েছেন আমাদের মা। যদিও সে নিরাপত্তা প্রহরী ছিল, কিন্তু ক্রিকেট খেলেই তার বেশিরভাগ সময় কেটেছে। আজ সকালে গ্রুপ কলে কথা বলেছি তার সঙ্গে এবং সবাই খুব খুশি ছিল। কষ্টের দিনগুলোতে একসঙ্গে ছিলাম আমরা, তবে সেই দিনগুলো সে কাটিয়ে উঠেছে এবং আমরা তাকে নিয়ে খুবই গর্বিত। '
গায়ানার রাষ্ট্রপতি ইরফান আলী, যিনি নিজে একজন সাবেক ক্লাব ক্রিকেটার। জোসেফের সাফল্য গর্বে ভাসিয়েছে তাকেও। তিনি বলেন, 'শামারের অবিশ্বাস্য প্রতিভা রয়েছে। তাকে প্রথম দিন দেখেই আমি বুঝেছিলাম তার মধ্যে সহজাত গতি ও গুণাবলি আছে বিশ্বের অন্যতম সেরা পেসারের পাশাপাশি কার্যকরী ব্যাটার হওয়ার। '
'ক্যারিয়ারের শুরুটা স্বপ্নের মতো হয়েছে। তবে আমি তাকে বলেছি, চোখ সবসময়ে পুরস্কারের দিকে রাখতে হবে। অবশ্যই তার সামর্থ্য আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের কিংবদন্তি হওয়ার। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও গায়ানার সমস্ত লোকের মতো আমিও শামারের সাফল্য উদযাপন করছি। আমরা তোমাকে (শামার) নিয়ে গর্বিত। আমি তার ধারাবাহিক সাফল্য কামনা করি। '
শুধু রাষ্ট্রপতি নন, জোসেফকে নিয়ে মেতে উঠেছেন বিরোধী দলীয় নেতাও। অবশ্য ক্যারিয়াবিয়ান পেসারের পারফরম্যান্সকে নজরহীন করার সাধ্যই বা এখন কার আছে!
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৪
এএইচএস