বাংলাদেশ দলের সুপার ফ্যান 'টাইগার রবি'কে মারধরের ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। রবির অভিযোগ, কানপুর স্টেডিয়ামে কয়েকজন ভারতীয় সমর্থক দলবেঁধে তাকে শারীরিকভাবে হেনস্থা করেছেন।
বাংলাদেশ দলের প্রায় সব ম্যাচেই গ্যালারি থেকে রবি সমর্থন জুগিয়ে যান। গায়ের রং পরিবর্তন করে টাইগারের মতো করে গ্যালারি থেকে সমর্থন দিয়ে যান তিনি। এবারের ভারত-বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজেও তাকে দেখা যাচ্ছে গ্যালারিতে শান্ত-সাকিবদের উৎসাহ দিতে। কানপুরে তার সঙ্গে ঘটেছে, তা মেনে নিতে পারছেন না দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করার পাশাপাশি দোষীদের শাস্তি দাবি করছেন অনেকে। তবে প্রত্যক্ষদর্শী এক পুলিশ সদস্যের দাবি, শরীরে পানিশূন্যতার কারণে রবি লুটিয়ে পড়েছিলেন। তাকে কেউ শারীরিকভাবে নাকি হেনস্থাই করেনি। অথচ রবি বলছেন, তার শরীরের নিম্নাংশে আঘাত করা হয়েছে।
ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোতেও সংবাদটি বেশ হইচই ফেলে দিয়েছে। সেখানকার অধিকাংশ মিডিয়ায় প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু 'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস' নামের শীর্ষ পর্যায়ের এক সংবাদমাধ্যম এই হামলার ঘটনাকে কটাক্ষের ভাষায় লিখেছে। তাদের বাংলা ভার্সনে সংবাদটির শিরোনাম দেওয়া হয়েছে, 'কানপুরে বেধড়ক ঠ্যাঙানি খেয়ে হাসপাতালে টাইগার রবি, পুলিশ মিথ্যাবাদী বলল বাংলাদেশ সমর্থককে'। তারাই আবার ফেসবুকে সংবাদটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছে, 'পিটুনি খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি বাংলাদেশ সমর্থক, ভারতকে বদনাম করার নয়া ষড়যন্ত্র'।
এর প্রায় এক ঘণ্টা পর তারা আবার একই নিউজ শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছে, 'কানপুরে বিরাট নাটক বাংলাদেশি সমর্থকের, পিটুনি খাওয়ার মিথ্যা অভিযোগে বদনাম করার ষড়যন্ত্র করলেন টাইগার রবি'। এমন ক্যাপশন ও শিরোনামের কারণে ওই পোস্টগুলোতে হামলে পড়ছেন দুই দলের সমর্থকরা। বিষাক্ত বাক্যবাণে বিদ্ধ করছেন একে অন্যকে। ক্রিকেটের গণ্ডি ছাড়িয়ে যাচ্ছে এই কথার লড়াই। অথচ 'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস' নিউজের ভেতরে পুরো ঘটনার ব্যাখ্যা করেনি। বরং পুলিশের বক্তব্যকেি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
অথচ বাংলাদেশি এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া টাইগার রবির বক্তব্য অনুযায়ী, সকাল থেকেই তাকে উদ্দেশ্য করে গালিগালাজ করছিলেন কয়েকজন ভারতীয় সমর্থক। মধ্যাহ্ন বিরতির পরে বাংলাদেশ দলের নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হকের নাম ধরে চিৎকার করছিলেন তিনি। এরপরেই রবিকে ১৪-১৫ জনের ভারতীয় সমর্থকদের একটি গ্রুপ ঘিরে ধরে এবং শারীরিকভাবে হেনস্থা করতে শুরু করে। এক পর্যায়ে রবির টাইগার প্রতীক ও বাংলাদেশের পতাকাও ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করে তারা। রবি বাধা দিলে তাকে মারধর করে ভারতের ওই সমর্থকরা।
গ্যালারির বেলকনিতে একমাত্র বাংলাদেশি সমর্থক হিসেবে হাজির ছিলেন রবি। নিরাপত্তার খাতিরে অন্য কাউকে সেখানে প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু টাইগার রবি বলেন, 'একজন পুলিশ সদস্য আমাকে সেই ব্লকে দাঁড়াতে নিষেধ করছিলেন। কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছিলাম, তাই ওখানে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছিলাম। আমি বলিউডের অনেক সিনেমা দেখেছি বলেই ওরা যে গালিগালাজ করছিল, তা বুঝতে পারছিলাম। আমি নিজের দেশকে সমর্থন করছি, এটা কি আমার অপরাধ?'
টাইগার রবি এর আগে চেন্নাইয়েও একই ধরনের হেনস্থার অভিযোগ করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, তাকে স্টেডিয়ামে জাতীয় পতাকা উড়াতে দেওয়া হয়ন; এমনকি তাকে দেখে 'মওকা মওকা' বিদ্রূপ করেছেন ভারতের কয়েকজন সমর্থক। হিন্দি বুঝলেও চেন্নাইয়ে তামিল ভাষায় গালি দেওয়ায় শুরুতে বুঝতে পারেননি তিনি। পরে একজন বাঙালি তাকে বুঝান যে, তাকে খুবই খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করা হচ্ছে। কিন্তু নিরাপত্তাক্ষীদের সহায়তা চেয়েও নাকি পাননি রবি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৪
এমএইচএম