পাঁচ দিনের অর্ধেক অর্থাৎ আড়াই দিন ভেসে গেল বৃষ্টিতে। বাকি অর্ধেক সময়ের মধ্যেই কী একটা টেস্ট জেতা সম্ভব? একসময় এটা অসম্ভব মনে হলেও 'বাজবল'-এর যুগে সম্ভব।
কানপুর টেস্টের প্রথম দিনের অর্ধেকের বেশি সময় বৃষ্টি বাধায় খেলা হয়নি। এরপর দিনের শেষ ভাগে মাত্র ৩৫ ওভার খেলা মাঠে গড়ায়। যেখানে ৩ উইকেট হারিয়ে ১০৭ রান করে বাংলাদেশ। পরের দুই দিন খেলাই সম্ভব হয়নি।
আর চতুর্থ দিনের খেলা শুরু হয় নির্ধারিত সময়েই। ব্যাট করতে নেমে একের পর এক উইকেট হারায় বাংলাদেশ। কিন্তু একপ্রান্তে দেয়াল হয়ে দাঁড়ান মুমিনুল। তার ১৫ মাস পর পাওয়া টেস্ট সেঞ্চুরির পরও দলীয় ১০৭ থেকে ২৩৩ রান পর্যন্ত যেতেই বাকি সব উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
এরপরেই 'বাজবল' ক্রিকেট শুরু করে ভারত। ওয়ানডে নয়, রীতিমতো টি-টোয়েন্টির গতিতে রান তুলতে শুরু করেন দলটির দুই ওপেনার যশস্বী জয়সোয়াল ও রোহিত শর্মা। শুরু থেকেই চড়াও হন বাংলাদেশের দুই পেসার হাসান মাহমুদ ও খালেদ আহমেদের ওপর। তবে বড় ঝড়টা বয়ে যায় হাসানের ওপর দিয়েই। তার করা প্রথম ওভারেই তিন চারে ১২ রান নেন জয়সোয়াল।
পরের ওভারে খালেদ আহমেদের বলে দুই ছক্কা মারেন রোহিত। ওভারে আসে ১৭ রান। ভারতের দলীয় সংগ্রহ দাঁড়ায় দুই ওভারে ২৯ রান। হাসানের পরের ওভারে রোহিত ও জয়সোয়াল মিলে নেন ২২ রান। আর তাতেই তিন ওভারে ৫০ পেরিয়ে যায় ভারতের সংগ্রহ।
এটিই টেস্টে দ্রুততম দলীয় ফিফটি। এর আগে ট্রেন্টব্রিজে এ বছরের শুরুর দিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৪.২ ওভারে দলীয় ফিফটি করেছিল ইংল্যান্ড। ৫ বা তার কম ওভারে দলীয় ফিফটির আরও দুটি কীর্তি আছে ইংল্যান্ডের। ১৯৯৪ সালে ৪.৩ ওভারে এবং ২০০২ সালে ৫ ওভারে দলীয় ফিফটি ছুঁয়েছিল তারা।
রোহিত ১১ বলে ২৩ রান করে বিদায় নিলেও জয়সোয়ালের ব্যাটে রানের ফোয়ারা ছুটেছে। মাত্র ৩১ বলে তুলে নিয়েছেন ফিফটিও। যা ভারতের জার্সিতে টেস্টে যৌথভাবে তৃতীয় দ্রুততম ফিফটি। ১০ম ওভারে মিরাজের বলে ছক্কা হাঁকান জয়সোয়াল। এটি ভারতের চলতি বছরে ৯০তম ছক্কা। এক বছরে এর চেয়ে বেশি ছক্কা আর কোনো দলের নেই। ২০২২ সালে ৮৯ ছক্কা মেরে শীর্ষে উঠেছিল ইংল্যান্ড। তাদের দুইয়ে নামালো ভারত।
দুজনের ব্যাটে ১০.১ ওভারে ১০০ পার হয় ভারতের। এটিও একটি রেকর্ড। এর আগে ২০২৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিপক্ষে ১২.২ ওভারে ১০০ করেছিল ভারত। সেটিই ছিল এত দিন দ্রুততম দলীয় সেঞ্চুরি। একইভাবে দেড় শ রানের রেকর্ডেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ মুক্তি পেয়েছে। ১২৭ বলে তাদের বিপক্ষে দ্রুততম ১৫০ রানের রেকর্ড গড়েছিল ভারত। এবার বাংলাদেশের বিপক্ষে ১১০ বলে দেড় শ রান করে নতুন রেকর্ড গড়েছে ভারত।
এত দিন ২০০ রানের রেকর্ডের মালিক ছিল অস্ট্রেলিয়া। ২০১৭ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৬৯ বলে সিডনিতে করেছিল তারা। এবার তাদের সেই রেকর্ড নিজের করে নিয়েছে ভারত। ১৪৮ বলে দ্রুততম ২০০ রানের রেকর্ড গড়েছে ভারত। বাদ যায়নি দ্রুততম ২৫০ রানের কীর্তিও।
২০২২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্রুততম আড়াই শর রেকর্ড গড়েছিল 'বাজবল' ক্রিকেটের উদ্ভাবক ইংল্যান্ড। ২০৪ বলে করা তাদের সেই রেকর্ড ২১ বল বাকি থাকতেই ভেঙেছে ভারত। ১৮৩ বলে দ্রুততম ২৫০ রানের কীর্তি গড়েছেন রোহিত-বিরাট কোহলিরা। তবে ভারতের ইনিংস অনেকদূর যেতে দেননি সাকিব ও মিরাজ। দুজনেই ৪টি করে উইকেট তুলে নিলে ভারত ৯ উইকেটে ২৮৫ রান তুলেই ইনিংস ঘোষণা করে।
ভারতের প্রথম ইনিংসের লিড ছিল মাত্র ৫২ রানের। এর জবাব দিতে নেমে ১১ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ২৬ রান তুলে চতুর্থ দিন শেষ করে বাংলাদেশ। আর আজ পঞ্চম দিনে মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে যাওয়ার আগেই মাত্র ১৪৬ রানে অলআউট হয়ে যায় সফরকারীরা। ৯৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে তেমন একটা বেগ পেতে হয়নি ভারতকে।
সিরিজের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে স্বাগতিকরা। লক্ষ্যে পৌঁছাতে তাদের লেগেছে মাত্র ১৭.২ ওভার। এই ছোট রান তাড়ায়ও ফিফটির দেখা পেয়েছেন জয়সোয়াল। ৪৫ বলে ৫১ রান করেছেন তিনি। টানা দুই ইনিংসেই ফিফটির দেখা পেলেন এই ভারতীয় ওপেনার। ৮টি চার ও ১টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি। শেষদিকে ৩৭ বলে ৪ ছক্কায় ২৯ রান করে অপরাজিত থাকেন কোহলি। এত সহজ জয় মাত্র আড়াই দিন খেলেই, ভারত আদতে বাংলাদেশকে 'বাজবল' কী জিনিস, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখালো।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে ভারত আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেও নিজের শীর্ষস্থান মজবুল করলো। তাদের লক্ষ্য আসরের ফাইনাল। যে কারণে জেতার জন্য উন্মুখ ছিল ছিল তারা। মাত্র ৫২ রানের লিড নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করা, ব্যাটে ঝড় তোলা, আগ্রাসী ফিল্ডিং সেটআপ ও নিয়ন্ত্রিত বোলিং; সবমিলিয়ে ভারতের এই জয়টা দুর্দান্ত 'বাজবল প্যাকেজ'।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০২৪
এমএইচএম