ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

সাকিবের বিশেষ সাক্ষাৎকার

মূল লক্ষ্য ছিল সুপার টেনে ওঠা, গ্যালারি চাপ নয়

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০১৪
মূল লক্ষ্য ছিল সুপার টেনে ওঠা, গ্যালারি চাপ নয় ছবি: শোয়েব মিথুন/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বাংলাদেশের মাটিতে চলছে ক্রিকেটের ক্ষুদ্র সংস্করণ টি-টোয়েন্টির বিশ্বকাপ। কিন্তু মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে হারের মধ্য দিয়েই শেষ হয়ে গেছে স্বাগতিক টাইগারদের বিশ্বকাপ মিশন।



বিশ্বকাপ শুরুর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ ও এরপর এশিয়া কাপের ব্যর্থতার পর বিশ্বকাপে টাইগারদের হতাশাজনক পারফরমেন্স নিয়ে চলছে নানারকম বিশ্লেষণ।

কেউ বলছেন, প্রত্যাশার চাপ, কেউ বলছেন দলীয় পারফরম্যান্সের অভাবেই বাংলাদেশ দলের মুষড়ে পড়া। খোদ দলের ক্রিকেটাররা কীভাবে দেখছেন দলের পারফরমেন্স?

বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।

সাকিবের ভাষ্যমতে, বাংলাদেশ দলের মূল লক্ষ্য ছিল সুপার টেনের খেলা। সেটা পূরণ হয়েছে। আর দর্শকরাই খেলার প্রাণ, গ্যালারি চাপ নয়। দর্শকের উৎসাহই ব্যক্তি থেকে শুরু করে প্রতিটি দলকে আরও ভাল খেলায় উদ্বুদ্ব করে।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরমেন্স নিয়ে তিনি বলেছেন, প্রত্যাশার চাপেই এমন নড়বড়ে পারফরমেন্স তা বলা মুশকিল। তবে প্রত্যাশার চাপে এমনটি মনে হতেও পারে।

বিশেষ সাক্ষাকা্রটি নিয়েছেন বাংলানিউজের স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট সোহানুজ্জামান খান নয়ন। ছবি তুলেছেন সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট শোয়েব মিথুন।

বাংলানিউজ: বাংলাদেশ দলের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিশন তো শেষ। দলের পারফরমেন্স নিয়ে আপনার বিশ্লেষণ কী?

সাকিব: এশিয়া কাপে আমরা খুব একটা ভাল খেলিনি। তারপর টি-টোয়েন্টির বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচের দু’টি খেলায় আমরা ভালভাবে জয় লাভ করলাম। বাছাই পর্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের সঙ্গে জেতা দরকার ছিল আমাদের। পরের ম্যাচ নেপালের সঙ্গেও ভাল খেললাম। তখন দলের সবাই বেশ নির্ভার ছিল।

কিন্তু হংকংয়ের সঙ্গে হার মানসিকভাবে আমাদের অনেক চাপে ফেলে দিয়েছে। ওদের সঙ্গে হার অপ্রত্যাশিত ছিল। যদিও মনে করি, হারটা আমাদের ওভাবে নেওয়া উচিত হয়নি। কিন্তু সেই হারেই হয়তো টিম মানসিকভাবে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার ছাপই আমার মনে হয় সুপার টেনে পড়েছে।

আমরা চেষ্টা করেছি, শেষ ম্যাচে ভাল পারফর্ম করেছি। সর্বোপরি যদি বলি, আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল সুপার টেনের খেলা। সেটা পূরণ হয়েছে। তবে আমাদের দলীয় পারফরমেন্স একদমই ভাল হয়নি। আরও ভাল খেলার সামর্থ্য ছিল আমাদের পক্ষে। শেষ কথায় বলবো, আসরটা আমাদের জন্য ভাল হয়নি।

বাংলানিউজ: বড় দলগুলোর সঙ্গে খুব বেশি লড়াই দেখা যায়নি। এটাকে কীভাবে দেখছেন।

সাকিব: সত্যি বলতে, আমাদের মূল টার্গেট ছিল সুপার টেনে ওঠা। সেটা যখন হল, তখন আমার লক্ষ্য ছিল চূড়ান্ত পর্বে বড় দলগুলোর সঙ্গে লড়াই করবো। একটা দুইটা ম্যাচ জেতাও সম্ভব হয়তো ছিল। কখনই সেমিফাইনাল খেলব বলে প্রত্যাশা করিনি। তবে আরও ভাল ক্রিকেট খেলা উচিৎ ছিল।

বাংলানিউজ: প্রত্যাশার চাপেই কি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের এমন নড়বড়ে পারফরমেন্স?

সাকিব: প্রথম কথা হলো, দর্শক খেলার প্রাণ। দর্শকের উৎসাহই ব্যক্তি থেকে শুরু করে প্রতিটি দলকে আরও ভাল খেলায় উদ্বুদ্ব করে। আর বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরমেন্স নিয়ে যদি বলি, প্রত্যাশার চাপেই এমন নড়বড়ে পারফরমেন্স কি না তা বলা মুশকিল। তবে প্রত্যাশার চাপে এমনটি মনে হতেও পারে। দর্শক ছাড়া খেলার কোনো মজা থাকে না। তারা মাঠে না এলে খেলার উত্তেজনা অনেক কমে যায়।

দর্শক আসবে, খেলা দেখবে-এমনটাই চাই সবসময়। আমার এই কথার অর্থ, যারা আমাদের সঙ্গে আছে বা ক্রিকেটের সঙ্গে আছে, তারা বললে প্রত্যাশার চাপ অনেক বেড়ে যায়। দর্শক মাঠে আসবে খেলা দেখবে এবং উপভোগ করবে- আমি সবসময় চাই।

বাংলানিউজ: চাপের যে কথা বলছেন, সেটা কি আপনি একাই উপলব্ধি করছেন, নাকি পুরো দলের ?

সাকিব: আমার কাছে তো চাপ বলে তেমন কিছু মনে হয় না। সত্যি বলতে আমার নিজের কাছে কখনই চাপ উপলব্ধি হয়নি। দলের সবাইকে দেখে যেটা আমার মনে হয়েছে সেটাই শেয়ার করেছি।

বাংলানিউজ: আপনি আসলে কোথায় প্রত্যাশার চাপ অনুভব করেন?

সাকিব:  গ্যালারি কখনোই চাপ নয়। বরং উৎসাহের কারণ। দর্শকরা মাঠে এলে একটা চার মারলে বা উইকেট নিলে তাদের উৎসাহ আরও ভাল পারফর্ম করতে উৎসাহ দেয়।

বাংলানিউজ: চাপ নিতে না পারাটা কি পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না?

সাকিব: আসলে সবাই ভাল খেলতে চায়। সবার মধ্যে চাপ উপলব্ধি হতেই পারে। একজন খেলোয়াড় দিনে-দিনে নিজেকে প্রস্তুত করে, ধীরে-ধীরে নিজেকে প্রস্তুত করে তোলে। একজন খেলোয়াড় অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি নিজের মধ্যে পেশাদারিত্ব তৈরি করে। দলের বিপর্যয়ের মুহূর্তেই আসলে বোঝা যায় কে কত চাপ সামলাতে পারে-সেটা নিজের খারাপ সময়েও?

বাংলানিউজ: দু’বছর দেশের বাইরে খেলার কথা বলেছেন আপনি। কিন্তু দেশের বাইরে সাফল্য তো আরও কম। এ ব্যাপারে কী বলবেন?

সাকিব: আসলে কথাটা ওভাবে বলা হয়নি। দেশের মাটিতে খেলার তো বিকল্প নেই। দেশের মাটিতে আমাদের সাফল্যও বেশি। দেশের মাটিতে ভাল খেলা বা আমাদের পারফর্ম করার বেশি সুযোগ থাকে, সে হিসেবে দলীয় পারফর্ম করারও সুযোগ বেশি থাকে।
কিন্তু বিদেশের মাটিতে খেললে নিজেদের পারফরমেন্সে আরও উন্নতি হয়। তখন দেশের মাটিতে খেলাটা আরও সহজ হয়, সব জায়গায়ই ভালো খেলা যাবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো যেখানেই খেলি, আমাদের ভাল খেলতে হবে-এটাই মূল বিষয়।

বাংলানিউজ: যে দলটি ২ বছর আগে দেশের মাটিতে এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছে, তারা টানা এত খারাপ ক্রিকেট খেললো?
 
সাকিব: আমরা সবাই টি-টোয়েন্টি নিয়ে খুব বেশি কথা বলছি। শুরুটা হয়েছে শ্রীলঙ্কা সিরিজ থেকে। আমরা কিন্তু নিউজিল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছি। এশিয়া কাপে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার সঙ্গে খুবই ভাল খেলেছি। অল্পের জন্য জিততে পারিনি। গত ২-৩ বছর দেখলে বুঝবেন, আমরা টেস্ট বা ওয়ান ডে ক্রিকেটে বেশ উন্নতি করেছি। সব দলই তো অনেক বেশি টি-টোয়েন্টি খেলে এসেছে ওয়ার্ল্ড কাপের আগে। আমরাও এ ফরম্যাটের খেলা বেশি খেলতে পারলে আরো ভাল হত। আমাদের টি-টোয়েন্টি উন্নতির জন্য বেশি ম্যাচ খেলা প্রয়োজন।
 
বাংলানিউজ: বোর্ড সভাপতি থেকে অনেকে বলছেন টি-টোয়েন্টি কিংবা টেস্ট ক্রিকেটে আলাদা দল করা উচিত। আপনার কী মনে হয়?

সাকিব: যারা ভাল খেলছে তারা দলে নেই-এমনটা আমার চোখে পড়ছে না। বিপিএল, প্রিমিয়ার লিগে ভাল খেলেছে বলেই ফরহাদ রেজা, জিয়াউর রহমান, সাব্বির রহমানরা দলে এসেছেন। খুব ভাল করেই কিন্তু দলে এসেছেন। তবে এর বাইরে খুব বেশি ভাল খেলোয়াড় থাকলে দলে আসতেই পারে।

বাংলানিউজ: আর ৯ মাস পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এই বিশ্বকাপ ঘিরে বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতি কেমন হওয়া উচিৎ ?
 
সাকিব: সত্যি বলতে ২০১১ সালের বিশ্বকাপের পর সবাই ২০১৪ বিশ্বকাপের টার্গেট করে। বোর্ড থেকে শুরু করে খেলোয়াড়রা সবাই একটা পরিকল্পনা নিয়ে এগোয়। আমি সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় বিগ ব্যাশ খেলে এসেছি। ভালও খেলেছি। আমরা যদি সেরা ক্রিকেট খেলা ধরে রাখতে পারি, তবে আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভাল কিছু করা সম্ভব। ভাল করার জন্য আমাদের সেরা প্রস্তুতিই নিতে হবে।

বাংলানিউজ: আগামীতে যদি আবার অধিনায়কের দায়িত্ব নিতে বলা হয়, কতটা প্রস্তুত?

সাকিব: এখন কিছু বলা সম্ভব নয়। যদি কখনও এমনটা হয়, তবে তখনকার সিদ্ধান্ত তখন নেবো।

বাংলানিউজ: সৌরভ গাঙ্গুলীর মতে, বাংলাদেশের পারফর্ম নিম্নগামী, এটা এখনই থামানো উচিৎ। আপনার মতে কীভাবে থামানো সম্ভব?

সাকিব: গাঙ্গুলী হয়তো সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ বা চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পারফর্ম দিয়ে বিবেচনা করছেন। কিন্তু আমরা বেশ ভাল খেলেছি গত দুই বছর।

আগের আসরগুলোর দিকে তাকালে এমনটা বলা কঠিন হতো। দাদা এই সময়ে বাংলাদেশে ছিলেন, কাছ থেকে দেখেছেন বলে এমনটা মনে হতে পারে।

বাংলানিউজ: ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) এবারের আসরে আপনার টার্গেট কী?

সাকিব: ভাল খেলার লক্ষ্য সবসময়ই থাকে। আমি কখনও টার্গেট নির্ধারণ করে খেলি না। ওখানে গেলে বুঝতে পারব। দলের সঙ্গে অনুশীলন করবো। দলের সবার সঙ্গে বেশ ভাল সময় যাবে আশা করি।
 
বাংলানিউজ: আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
 
সাকিব: আপনাকেও ধন্যবাদ। বাংলানিউজের জন্য শুভ কামনা।
 
বাংলাদেশ সময়: ০০০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০১৪

** মূল লক্ষ্য ছিল সুপার টেনে ওঠা, দর্শকই খেলার প্রাণ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।