ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

আনন্দে সমাপ্ত সিলেটের বিশ্বকাপ উৎসব

মাজনুন হোসেন, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১৪
আনন্দে সমাপ্ত সিলেটের বিশ্বকাপ উৎসব ছবি : কাশেম হারুন / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিলেট থেকে: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ঘিরে এক আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছিল পুরো সিলেটবাসী। লাক্কাতুরা চা বাগানের ধারে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম ছিল তার প্রাণকেন্দ্র।

১৪ হাজার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন স্টেডিয়ামটি কানায় কানায় পূর্ণ না হলেও দর্শকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। টিকিটের জন্য হাহাকারও ছিল শুরুতেই। অবশ্য যারা টিকিট পায়নি তাদের জন্য ছিল চা বাগানে সাজানো আলোর ঝলকানি। যত পেরেছে বাইরে ভেতরে ছবি তুলেই তৃপ্ত থেকেছে এসব মানুষেরা। আর যারা বাংলাদেশ দলের টানা জয়ে বিশ্বমঞ্চ ছাড়াটা দেখতে পেরেছে তারা ভাগ্যবানই বটে। আনন্দ মুখর সময়ের স্বাক্ষী হতে পেরেছে তারা।

মূল উৎসব শুরু ১৭ এপ্রিল আয়ারল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে। সিলেটে নিজ দেশের ছেলেদের খেলা ছিল না। তাতে কী, গ্যালারিতে বসে খেলা দেখার মজা লুফে নিতেই চেয়েছিল সিলেটবাসী। আর চার ছক্কা হলে তো লাফঝাপ ছিলই। নেদারল্যান্ডস, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জিম্বাবুয়ে ও আয়ারল্যান্ড দল কী আসে যায়। সমর্থন ঠিকই দিয়ে গেছে দর্শকসারিতে থাকা প্রত্যেকেই। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে দর্শকদের সমর্থনে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছে প্রত্যেক দলের অধিনায়করাই।

আর টি-টোয়েন্টির উত্তেজনা তো ছিল ছড়িয়ে ছিটিয়েই। এই বিভাগীয় স্টেডিয়ামের উদ্বোধনী আন্তর্জাতিক ম্যাচের কথাই ধরা যাক। আয়ারল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের ম্যাচ। ব্রেন্ডন টেলরের ফিফটিতে আইরিশদের ১৬৪ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল তার দল। শেষ ওভারে দুটি উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় থাকা উইলিয়াম পোর্টারফিল্ডের দল শেষ বলের উত্তেজনায় ম্যাচটি জিতে নেয় তিন উইকেটে।

জিম্বাবুয়ের ম্যাচে উত্তেজনা যেন পিছু ছাড়ছিল না। নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে তাদের লড়াইও জমে উঠল। এবারও শেষ বলের উত্তেজনা। ১৪১ রানের টার্গেটে নেমে এবার অবশ্য পাঁচ উইকেটের শ্বাসরুদ্ধকর জয় পায় টেলরের দল।

ছেলেদের প্রথম রাউন্ডের উত্তেজনা এখানেই শেষ নয়। সিলেটে শেষদিনের লড়াইয়ে জিম্বাবুয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দ্বিতীয় জয়ে সুপার টেনে ওঠার অপেক্ষা করছিল। কিন্তু আয়ারল্যান্ড এসে রানের বন্যা বয়ে দিল ডাচদের বিপক্ষে।

১৩ চার ও ১১ ছয়ে তারা করল চার উইকেটে ১৮৯ রানের পাহাড়। কে আর জানত দেখার বাকি আছে আরও। ডাচদের মতো একটা পুঁচকে দল কী পারবে এত রান করতে। শেষবারের মতো সিলেটের বিভাগীয় স্টেডিয়ামের সরাসরি সম্প্রচার করা এই ম্যাচে আনন্দ দিলেন স্টিফেন মাইবুর্গ, টম কুপার ও ওয়েসলে বারেসি।

এক ইনিংসে ১২টি চার ও ১৯টি ছক্কা মেরে আইরিশ ও জিম্বাবুইয়ানদের হটিয়ে কমলা উৎসব করল নেদারল্যান্ডস। ৩০টি ছক্কা বৃষ্টির ম্যাচ শেষে সুপার টেনে উঠল তারা চমক দেখিয়ে।

এরপর শুরু হলো মেয়েদের বিশ্বসেরা হওয়ার লড়াই। সরাসরি সম্প্রচারের ব্যাপার নেই, তবুও গ্যালারিতে হাজার হাজার দর্শক ছিল দেখার মতো। এক উৎসবে মেতেছিল তারা। বিকাল থেকেই প্রখর রোদ সত্ত্বেও হাজির হাজারখানেক দর্শক। গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড থেকে শুরু করে পুরো গ্যালারি ভরে যেত সন্ধ্যা হতে না হতেই।

আর মেয়েরা ম্যাচে কম উত্তেজনা ছড়ায়নি। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক মেগ ল্যানিং খেললেন অসাধারণ ইনিংস। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে দলকে এনে দিলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান। চার উইকেটে ১৯১ রানের সংগ্রহে নিজেও রেকর্ড গড়লেন ল্যানিং। মাত্র ৬৫ বলে ১৮ চার ও চার ছয়ে ১২৬ রানে ছাড়িয়ে গেলেন টি-টোয়েন্টির সর্বোচ্চ ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও ব্যাটার দিয়েন্দ্রা ডটিনকে।

এই ম্যাচে ৭৮ রানে জিতে বিশ্বমঞ্চে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে রেকর্ড গড়েছিল অসি মেয়েরা। কিন্তু এই রেকর্ড পরের তিনদিনে আরও ভেঙেছে তিনবার। ইংল্যান্ড ৭৯ রানে হারায় বাংলাদেশকে। তৃতীয় দিন দুবার এই রেকর্ড ভাঙা গড়ার খেলা চলে। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ৮৬ রানে হার মানে আইরিশরা। আর সন্ধ্যায় দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে ৯৪ রানে হারিয়ে আবারও রেকর্ডটি এককভাবে দখল করে অস্ট্রেলিয়া।

বিভাগীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের ব্যাটিং লজ্জাও কিছুটা হতাশায় ফেলেছিল দর্শকদের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে প্রথম ম্যাচে ৭৯ রানে গুটিয়ে যায়, ৩৬ রানে পরাজয় স্বাগতিকদের। পরে ইংল্যান্ডের কাছে ৯ উইকেটে ৫৮ রানের সংগ্রহ, বড় ব্যবধানে হার। ভারতের বিপক্ষে ৮ উকেটে ৭২ রানের পর ৭৯ রানে টানা তৃতীয় হার।

হতাশা ভুলিয়ে দিতে সময় নেয়নি মেয়েরা। শ্রীলঙ্কাকে পেয়ে ব্যাটে বলে সমান লড়াই সালমা খাতুনদের। তিন রানের শ্বাসরুদ্ধকর জয়ে বিশ্বমঞ্চের প্রথম সুখস্মৃতি আছে এই স্টেডিয়ামে।

আর শেষটা তো হলো আরও সুন্দরভাবে। বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের ম্যাচ দিয়ে পর্দা নামল সিলেটে বিশ্বকাপ উৎসবের। হতাশ করেনি সালমা-পান্নারা। আইরিশদের ১৭ রানে হারিয়ে ১৯ দিনব্যাপী চলা উৎসবকে আরও রঙিন করল বাংলাদেশ। হাসিমুখেই সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়াম ছাড়ল হাজার হাজার দর্শক।

বাংলাদেশ সময়: ০১৫০ ঘণ্টা, ৪ এপ্রিল ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।