ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

ম্যাচ বাঁচানোর চিন্তা বাংলাদেশের

অঘোর মন্ডল, স্পেশালিস্ট স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৫
ম্যাচ বাঁচানোর  চিন্তা বাংলাদেশের ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা থেকে: মুমিনুলের ‘তিনশ রানের তত্ত্ব’ থেকে খুলনা টেস্টের তৃতীয় দিন শেষেও বের হওয়া যাচ্ছে না! প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশ দলের বাঁহাতি  ব্যাটসম্যান ৮০ রানের ইনিংস খেলে এসে বলেছিলেন;‘ এই উইকেটে ৩শ’ রান লিড নেয়ার জন্য যথেষ্ঠ!’ তৃতীয় দিন শেষে এক পাকিস্তানি  ২২৪ রানের ইনিংস খেলে এসেও বলতে পারছেন না; তিনশ’ রানের লিড জয়ের জন্য যথেষ্ট হবে কি না?

 মোহাম্মদ হাফিজের ২২৪ রানের ইনিংসে তৃতীয় দিন শেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ৫৩৭। ২০৫ রানের লিড।

হাতে ৫ উইকেট। ম্যাচের পড়ে আছে দু’দিন। এই অবস্থায় দাঁড়িয়েও  মোহাম্মদ হাফিজ বলার সাহস দেখাননি; প্রথম ইনিংসে কত রানের লিড যথেষ্ট হতে পারে!

বরং ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যায় খুব নিরাপদ একটা বাক্য ব্যবহার করলেন তিনি। ‘ চতুর্থ দিনে আমাদের লক্ষ্য দ্রুত রান তুলে লিডটাকে বাড়িয়ে নেয়া। তিনশ’, সাড়ে তিনশ’ কিংবা চারশ’ নিয়ে আমরা ভাবছি না। ’

অভিজ্ঞতা আর পরিমিতি বোধে মোহাম্মদ হাফিজ কতোটা এগিয়ে তা নিশ্চয়ই খানিকটা টের পাওয়া গেলো তাঁর কথাবার্তায়। এটা যদি হয় মাঠের বাইরের ব্যাপার ,তাহলে মাঠের ভেতরে তিনি যে ইনিংসটা খেললেন সেটা আরো পরিণত। আগে দু’ দুবার ডাবল সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়ে তা পাননি। আউট হয়েছিলেন ১৯৬ এবং ১৯৭ রানে। সেই স্বপ্নভঙ্গের বেদনা  তৃতীয় বার আর বয়ে বেড়াতে চাননি তিনি। তাই ১৯০ এর ঘরে গিয়ে অনেক সর্তক ছিলেন তিনি। ১৯৮ থেকে ২শ’ রানে পৌঁছানোর আগে ১১টা ডট বল খেললেন। তারপর  বাঁহাতি স্পিনার তাইজুলকে সুইপ করে ডাবলস নিয়ে ২শ’ রানে পৌঁছে যান হাফিজ। বাংলাদেশের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি করা তৃতীয় পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান তিনি। আগের দুটো নাম মোহাম্মদ ইউসুফ এবং ইউনিস খান।

ডাবল সেঞ্চুরির পর খুব বেশিক্ষণ  উইকেটে থাকতে পারেননি মোহাম্মদ হাফিজ। শুভাগত হোমকে সুইপ করতে গিয়ে লেগ গালিতে মোহাম্মদউল্ল্যাহর হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি।
চেষ্টা করেছিলেন সুইপ করতে। কিন্তু বল তাঁর গ্লাভস ছুঁয়ে ফিল্ডারের হাতে।

বাংলাদেশ বোলারদের  আরো একটা হতাশার দিনে হাফিজের আউটটা দেখে মনে হয়েছে  এটা বাংলাদেশের একটা পরিকল্পনার ফসল। কিন্তু দিন শেষে মোহাম্মদ হাফিজ কিন্তু হাসতে হাসতে উড়িয়ে দিলেন সেই যুক্তিকে। ‘ না , না। কিসের পরিকল্পনা! আমি ওদের পরিকল্পনার ফাঁদে পা দিতে যাবো কেন? ইচ্ছে ছিল বলটা বাউন্ডারিতে পাঠাবো। কিন্তু ব্যাটে লাগলো না। গ্লাভস ছুঁইয়ে গেলো ফিল্ডারের হাতে। ’

আগের দিন পাকিস্তানের স্পিন বোলিং কোচ মুস্তাক আহম্মেদ ট্যাকটিক্যাল ফিল্ড প্লেসমেন্ট নিয়ে মিসবাহ উল-হক-কে প্রশংসায় ভাসিয়েছিলেন। তাই হাফিজ যাই বলুক না কেন, তাঁকে আউট করার জন্য ওটা ছিল বাংলাদেশের একটা ভাল পরিকল্পনা। কারণ, তার আগে মিসবাহ এবং হাফিজ বার বার সুইপ খেলছিলেন। মুশফিকের অনুপস্থিতিতে সারা দিন যিনি দলকে নেতৃত্ব দিলেন, সেই তামিম ইকবাল তাই কিছুটা প্রশংসা পেতে পারেন, ঐ একটা মুভের জন্য।

কিন্তু বাংলাদেশ দলের বোলাররা যা বল করেছেন এবং ক্যাপ্টেন যেভাবে বোলার পরিবর্তন করেছেন তাতে ‘প্রশংসা’ শব্দটাকে প্রায় নির্বাসনেই পাঠাতে হচ্ছে!

দ্বিতীয় নতুন বল নেয়ার পর রুবেল হোসেনকে চার ওভার বল করিয়ে স্পিনারদের ওপর ভরসা রাখলেন তামিম! অবশ্য তাঁর তিন ফ্রন্ট লাইন স্পিনার সাকিব আল  হাসান, তাইজুল ইসলাম এবং শুভাগত হোম তিনজন কেমন বল করেছেন  সেটা বোঝানোর জন্য তাদের বোলিং ফিগারই যথেষ্ট। রান দেয়ার ক্ষেত্রে সেঞ্চুরি করেছেন তিন জনই!

সাকিব আল হাসান, বাংলাদেশ দলের বোলিং অ্যাটাকের অন্যতম ভরসা। ১২২ রান দিয়ে উইকেট শূন্য তিনি! বাংলাদেশ  দলের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রানও দিয়েছেন তিনি। এ রকম খারাপ বোলিং ফিগার সাকিবের ক্যারিয়ারে খুব কমই আছে। মনে করার মতো বোলিং ফিগার একটাই। ২০১১ সালে এই পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রামে ৪১ দশমিক ৫ ওভারে ১২১ রান দিয়ে উইকেটহীন ছিলেন সাকিব।

মোহাম্মদ হাফিজ অবশ্য সংবাদ সম্মেলনে বলেই বসলেন;‘ আমরা ওকেই নিশানা করেছিলাম। বাংলাদেশকে চাপে রাখতে তাদের সেরা বোলারকে আক্রমণ করার পরিকল্পনা ছিল আমাদের। ’

কিন্তু দিন শেষে প্রশ্নটা উঠে পড়লো, বাংলাদেশ দলের এখন ভাবনাটা কি হতে পারে? তামিম নন, মুশফিক নিজেই বললেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা এখন দ্রুত ওদের অল আউট করা। আর পাঁচটা সেশন ভাল ব্যাট করা। ’

কিন্তু তাহলে কি ম্যাচটা বাঁচানো যাবে? বাংলাদেশ অধিনায়ক খানিকটা আশা আর হতাশার মিশেলে কথাটা আবারও বললেন;‘ পাঁচটা সেশন ভাল ব্যাট করতে পারলে ম্যাচ বাঁচানোর আশা করা যায়। আর সেটা সম্ভব মনে হয়। ’

ম্যাচ বাঁচানোর জন্য বাংলাদেশ ভাবছে পাঁচটা সেশন ভাল ব্যাটিং এর কথা। আর তৃতীয় দিন শেষে পাকিস্তান বুঝিয়ে দিলো তারা, এক ইনিংসের বেশি ব্যাট করার কথা ভাবছে না আপাতত। তবে উইকেটে এখনো প্রচুর রান আছে। টার্ন আছে। বাউন্সও আছে। কে কোনটাকে কতোটা কাজে লাগাতে পারবে, তার উপর নির্ভর করছে ম্যাচের ভাগ্য।

তবে প্রথম ইনিংসে তিনশ’ রান লিড নেয়ার জন্য যে যথেষ্ট নয়, মোহাম্মদ শহীদের বল অফে ঠেলে ইউনিস খান যেভাবে  সিঙ্গেল নিলেন তাতেই তা ভালভাবে টের পেলেন মুমিনুল।

আর লিডটা যে বড় হতে যাচ্ছে সেটা বাংলাদেশ টের পেলো, পাকিস্তানের অধিনায়ক মিসবাহ বাঁহাতি স্পিনার তাইজুলকে ছক্কা মেরে যখন ইনিংস শুরু করলেন।

সেই তাইজুলের বলে রুবেলের হাতে  ক্যাচ দিলেন মিসবাহ ৫৯ রানের ইনিংস খেলে। কিন্তু তাকে ফিরিয়েও লিডটাকে ছোট করা যাবে, তা মনে হচ্ছে না। কারণ, আসাদ শফিক আর সরফরাজ আহম্মেদ দু’জনেই যে  হাফ সেঞ্চুরি পেরিয়ে উইকেটে আছেন। পাকিস্তানের ইনিংসে এখনো পর্যন্ত কারো নামের পাশে সিঙ্গেল ডিজিট নেই। ও রকম চললে পাকিস্তানের লিড তিনশ’ ছাড়িয়ে যেতে পারে। তাহলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষাটা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০,২০১৫
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।