ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

কতটা কঠিন প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া?

সাজ্জাদ খান, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৫
কতটা কঠিন প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া? ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা: ২০০৬ সালে রিকি পন্টিংয়ের অধীনে অস্ট্রেলিয়া দল এসেছিল বাংলাদেশ সফরে। বিশ্ব ক্রিকেট শাসন করা পন্টিংয়ের দলটি ফতুল্লা টেস্টে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর জিতেছিল তিন উইকেটে।

চট্টগ্রামে পরের ম্যাচে অবশ্য জেসন গিলেস্পির আকস্মিক অপরাজিত ডাবল সেঞ্চুরির (২০১*) সুবাদে ইনিংস ও ৮০ রানের বিশাল জয় পায় ব্রেট লি, শেন ওয়ার্ন, মাইক হাসি, হেইডেন, গিলক্রিস্টদের অস্ট্রেলিয়া।

তবে এখনকার প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। ৯ বছর পর তারুণ্য নির্ভর, নতুন চেহারার দল নিয়ে বাংলাদেশে আসছে অজিরা। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে ঢাকায় আসবে অস্ট্রেলিয়া।

র‌্যাংকিংয়ে একধাপ নেমে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান এখন দুই, আর বাংলাদেশ দশ থেকে নয়ে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে পার্থক্যটা যে এতটা নয় এটা মানবেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে চোখ রাখা যে কোনো ক্রিকেট ভক্তই। ঘরের মাঠের বাঘদের স্টিফেন স্মিথরা যে খুব বেশি চোখ রাঙানি দিতে পারবে না সেটা আঁচ করতে পারছে খোদ অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যম।

এবার বাংলাদেশের মাটিতে স্মিথদের কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে বলে মনে করছে সিডনি মর্নিং হেরাল্ড। পত্রিকাটির ক্রীড়া সাংবাদিক জেসে হোগান লিখেছেন, ‘এক দশক আগে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার লড়াই ‘টপ ডগ বনাম আন্ডার ডগ’ হলেও এবার লড়াইটা যেন ‘সমানে-সমানে’র আকার নিতে শুরু করেছে।   বাংলাদেশের বড় সাফল্য মূলত সাদা বলে। এবার তারা সাফল্যের প্রতিফলন ঘটাতে চায় লাল বলেও। ’

মাইকেল ক্লার্ক, শেন ওয়াটসন, ব্র্যাড হাডিন, রায়ান হ্যারিস, ক্রিস রজার্সের অবসরের পর ডেভিড ওয়ার্নারের চোট আর মিচেল জনসন ও হ্যাজেলউডকে বিশ্রাম দেওয়ায় নতুন চেহারার দল নিয়ে বাংলাদেশ আসছে অস্ট্রেলিয়া।

১৫ সদস্যের স্কোয়াডে দু’জন (পেসার অ্যান্ড্রিউ ফেকেতি ও উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান ক্যামেরন ব্যানক্রফ্ট) একেবারেই নতুন। অভিজ্ঞতার বিচারে প্রতিপক্ষের চেয়ে অনেক এগিয়ে সাকিব, তামিম, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকরা।

চলতি বছর ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলা বাংলাদেশের শক্তি তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার মিশেল। অস্ট্রেলিয়ার কেবলই তারুণ্য। ইতিহাস ও ঐতিহ্যে দু’দলের যতই পার্থক্য থাকুক না কেন, বাংলাদেশ যে অজিদের একবিন্দু ছাড় দেবে না তা বোঝা যায় ক্রিকেটারদের শারীরিক ভাষাতেই। অজিদের আগমনের খবরে রোমাঞ্চের চেয়ে লড়াই জমাতেই বেশি আগ্রহী বাংলাদেশের তরুণ টেস্ট ক্রিকেটাররা।

দলের তিন তরুণ ক্রিকেটার সৌম্য-মুস্তাফিজ-লিটনরা ব্যাট-বলের বারুদ নিয়ে অপেক্ষা করছেন। বাংলাদেশের টেস্ট স্কোয়াড ঘোষণার আগে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ নিয়ে কথা বলতে চাইছেন না এই তিন তরুণ ক্রিকেটার। দলে নিশ্চিত হলেই লক্ষ্যের কথা জানাবেন তারা।

দলের সিনিয়র ক্রিকেটার তামিম ইকবাল লড়াই চালাতে চান অজিদের বোলিং আক্রমণের সামনে। চ্যালেঞ্জটা কঠিন হলেও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ভালো খেলতে চান এ বাঁহাতি ওপেনার, ‘টেস্ট ৠাংকিংয়ের দুই নম্বর দলের সঙ্গে আমরা খেলতে যাচ্ছি। দুটি টেস্ট আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের লক্ষ্য থাকবে মাঠে নিজেদের সেরাটা দেয়া। আর এই টেস্ট দুটি জেতার চাইতে ভালো কিছু হতে পারে না। ’

অস্ট্রেলিয়া দল অনভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের নিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসলেও তাদের বিপক্ষে কোনো কিছুই সহজ হবে না-এমন ইঙ্গিতও দেন তামিম, ‘বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে তারা দলে পাচ্ছে না। এটা অবশ্যই আমাদের জন্য ইতিবাচক একটা বিষয়। কিন্তু তারা পেশাদার একটি দল। আর আমি বিশ্বাস করি, তাদেরকে হারানো বা তাদের সঙ্গে লড়াই করতে হলে আমাদেরকে সেরা ক্রিকেটই খেলতে হবে। ’ 

তামিমের মতো টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমও অজিদের মোকাবেলা করাকে কঠিন চ্যালেঞ্জ মানছেন, ‘এমনিতে মনে হতে পারে জনসন-হ্যাজেলউডের মতো দু’জন পেসার না আসায় আমাদের ভালোই হবে। কিন্তু ব্যাপারটা এমন নয়। অস্ট্রেলিয়ার পেস আক্রমণ অনেক শক্তিশালী। আমি তো মনে করি, এখন মিচেল স্টার্ক ওদের সবচেয়ে ভালো বোলার। সে আসবে, বাকি যারা আছে, তাদের মোকাবেলা করাও সহজ হবে না। অস্ট্রেলিয়া তো আর উপমহাদেশের দলগুলোর মতো নয়। ওরা কখনোই হাল ছাড়ে না। ওরা পেশাদার দল। কে আসছে, না আসছে, সেটা তাই গুরুত্বপূর্ণ নয়। ওদের বিপক্ষে ভালো কিছু করতে হলে আমাদেরকে নিজেদের সেরাটাই খেলতে হবে। ’

টাইগার কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে অল্প কথায় বুঝিয়ে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া সিরিজ কতটা চ্যালেঞ্জের বাংলাদেশের জন্য, ‘অস্ট্রেলিয়া সিরিজ সহজ কোনো চ্যালেঞ্জ নয় আমাদের জন্য। আমরা জানি, ওরা যে কোনো দলের জন্যই কঠিন প্রতিপক্ষ। ফলে এটা অবশ্যই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের একটি সিরিজ হতে যাচ্ছে। ’

বাংলাদেশ সফরে কেবল দুটো টেস্ট খেলবে অজিরা। আগামী ৯ অক্টোবর চট্টগ্রামে শুরু হবে প্রথম টেস্ট। ১৭ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় টেস্ট। সিরিজকে সামনে রেখে মিরপুরে অনুশীলন ক্যাম্পে কঠোর অনুশীলন করছেন ক্রিকেটাররা।   ‘এ’ দলের হয়ে সৌম্য, লিটন, রুবেলদের মতো ক্রিকেটাররা আছেন ভারত সফরে। আর সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহরা অংশ নেবেন জাতীয় লিগের প্রথম রাউন্ডে। খেলবেন চার দিনের ম্যাচ। দেশের মাটিতে টানা তিনটি সিরিজ খেলার পর অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগে এর চেয়ে ভালো প্রস্তুতি কী হতে পারে টাইগারদের জন্য?
 
অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট স্কোয়াড: স্টিভেন স্মিথ (অধিনায়ক), অ্যাডাম ভোজেস (সহ-অধিনায়ক), ক্যামেরন ব্যানক্রফ্ট, জো বার্নস, প্যাট্রিক কামিন্স, অ্যান্ড্রিউ ফেকেতি, উসমান খাজা, নাথান লিওন, মিচেল মার্শ, শন মার্শ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, পিটার নেভিল, স্টিফেন ও’কিফি, পিটার সিডল ও মিচেল স্টার্ক।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৭ ঘণ্টা, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫
এসকে/এমআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।