ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

জয়ে ধারাবাহিক বাংলাদেশ

সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৫
জয়ে ধারাবাহিক বাংলাদেশ ছবি: শোয়েব মিথুন/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বিসিবি একাদশের আদলে প্রায় বাংলাদেশ জাতীয় দলকে প্রস্তুতি ম্যাচে হারিয়ে দেওয়ার পর জিম্বাবুইয়ান অধিনায়ক এলটন চিগম্বুরা বলেছিলেন, ‘প্রস্তুতি ম্যাচের জয় আমাদের অনুপ্রেরণা যোগাবে। আমরাও সিরিজ জিততে চাইবো’।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চার মাসের দীর্ঘ বিরতির পর জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া বিসিবি একাদশের পরাজয়ে টাইগার ভক্তদের মনেও কিছুটা শঙ্কা ছিল, ‘এ বিরতিই ছন্দপতনের কারণ হয় কিনা। বিগত সিরিজগুলোতে জয়ে ধারাবাহিক থাকা বাংলাদেশ পথ হারায় কিনা। ’

এলটন চিগম্বুরার কথাও মুখে থেকে গেল, উড়ে গেল সব শঙ্কাও। মিরপুরে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম খেলায় একসময়ের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীদের উড়িয়ে দিল টিম বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়েকে তারা হারিয়েছে ১৪৫ রানের বিশাল ব্যবধানে। বাংলাদেশের গতিপথ সংহতভাবেই থাকলো জয়ের ধারাবাহিকতায়। ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ‘সফরকারীদের হোয়াইটওয়াশ করা সম্ভব’ বলে যে অভয় বাণী দিয়েছিলেন, এ জয় সেই অভয় বাণীকে আরও পোক্ত-সংহত করে দিল।

খেলায় টসকে ‘ম্যাচভাগ্য’ বলে ধরে থাকেন অনেকে। অর্থাৎ টসে জিতলে ম্যাচ জেতার ‘সম্ভাবনা’ বেশি। কিন্তু মাশরাফি বিন মুর্তজার টিমমেটরা খেলে বোঝালেন, ‘ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভাগ্যও বদল করা যায়’।

ম্যাচে প্রথমে টসে জেতার পর বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠান জিম্বাবুইয়ান অধিনায়ক চিগম্বুরা। তার সিদ্ধান্ত যথার্থ ছিল বলে নবম ওভার পর্যন্তও বিবেচনা করা হচ্ছিল। এই সময়ে ৩০ রান সংগ্রহ করতে বাংলাদেশ হারায় ওপেনার লিটন দাস ও গত বিশ্বকাপের নায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের উইকেটটি। টাইগারপ্রেমীদের প্রস্তুতি ম্যাচের ফলাফলের ‘ভয়’ পেয়ে বসে। এই শঙ্কার মধ্যে দল ভরসার জায়গা খুঁজছিল। নামলেন ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ মুশফিকুর রহিম।

লিটন-রিয়াদের বিদায়ে এক পাশ আঁকড়ে রাখা তামিম ইকবালকে নিয়ে তিনি প্রথমে সতর্ক ব্যাটিং করতে থাকলেন। এরপর ধীরে ধীরে ছাড়তে থাকলেন খোলস। দু’জনের ব্যাটে ‍বাংলাদেশ যখন ‘পথ দেখছিল’, তখন ৭০ রানের জুটি ভেঙে দলীয় ১০০ রানের মাথায় বিদায় নেন তামিম ইকবাল (৪০)। এরপর ক্রিজে আসেন সাকিব আল হাসান। সাকিবকে নিয়ে খেলতে থাকেন মুশফিক। ৫২ বলে তার অর্ধশতক পূরণের পর ২৩ রানের ছোট্ট জুটি ভেঙে দলীয় ১২৩ রানের মাথায় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবও (১৬) বিদায় নিলে ফের ‘নিরাপদ’ স্কোর গড়তে না পারার শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ। কিন্তু তখনও যে ক্রিজে ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’।

সাকিবের বিদায়ের পর তরুণ তুর্কি সাব্বির রহমান নামলে তাকে নিয়ে ফের ইনিংস মেরামতে মনোযোগ দেন মুশফিকুর। এরপর দু’জনে মনোযোগ দেন রান তোলায়। এরমধ্যে ১০৪ বলে মুশফিকুর তুলে নেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ অর্ধশতক। সাব্বির তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অর্ধশতক। দু’জনের ব্যাটে ভর করে বাংলাদেশ তখন ‘চ্যালেঞ্জিং’ স্কোরের স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু ১১৯ রানের জুটি ভেঙে দলীয় ২৪২ রানের মাথায় সাব্বির (৫৭) বিদায় নিলে আবারও ‘পথ হারায়’ বাংলাদেশ। ২৪৩ রানেই বিদায় নেন নাসির হোসেন ও সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর।

মুশফিকুর-সাব্বিরের ব্যাট যখন চলছিল, তখন ২৮০ রান বা তারও বেশি সংগ্রহের সম্ভাবনা জাগলেও এ দু’জনের বিদায়ের পর ‘হঠাৎ বিপর্যয়ে’ সে সম্ভাবনা ফিকে হয়ে যায়। তবে, শেষ দিকে মাশরাফি ও আরাফাত সানির যথাক্রমে ১৪ ও ১৫ রানের সুবাদে ২৭৩ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়তে সমর্থ হয় বাংলাদেশ।

এই স্কোর যে জিম্বাবুয়ের জন্য যথেষ্টই চ্যালেঞ্জিং ছিল, সেটা পুরোপুরি স্পষ্ট করে দিলেন মুস্তাফিজুর রহমান, মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, আল আমিন হোসেন, আরাফাত সানি ও নাসির হোসেনরা। বিশেষত সাকিব আল হাসান। ব্যাটিংয়ে রান তুলতে না পারার আক্ষেপ মেটানোর জন্য তিনি যেন বোলিংয়ের অপেক্ষায়ই ছিলেন।

২৭৪ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামা জিম্বাবুয়ে ওপেনিংয়ে ৪০ রান তুলে ফেললে ‘অপেক্ষারত’ সাকিবকে আক্রমণে আনেন টাইগার দলপতি। ব্যক্তিগত প্রথম ওভারে সাকিবের ঝুলিতে কোনো উইকেট না গেলেও তার শিকার শুরু হয় দ্বিতীয় ওভার থেকেই। দলীয় দশম ওভারের প্রথম বলে সাকিব ও দলের প্রথম শিকার হয়ে ফেরেন জিম্বাবুইয়ান ওপেনার চিবাবা। এরপর জিম্বাবুয়ের ৪৮ রানে দ্বিতীয় উইকেটের (আরভিন) পতন ঘটে। এবারও ‘ঘাতক’ সাকিব। তারপর নিয়মিত বিরতিতেই ড্রেসিংরুমে ফেরার মিছিল করতে বাধ্য হন সফরকারী ব্যাটসম্যানরা। উইকেট লুফে লুফে নিতে থাকেন সাকিব (৫)। তার সঙ্গে যোগ দেন মাশরাফি (২), আল আমিনরা (১)। মাঝে কিছুটা সময় লুক জঙ্গো ও অধিনায়ক চিগম্বুরা জুটি (৪০) গড়তে চাইলেও তাদের সে চেষ্টা নস্যাৎ করে দেন নাসির হোসেন। চিগম্বুরাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে জিম্বাবুয়ে দলকে পথ ভুলিয়ে দেন তিনি।

‘পথ হারানো’ জিম্বাবুয়ে শেষ পর্যন্ত থেমে যায় মাত্র ১২৮ রানে। বাংলাদেশের নিশ্চিত হয় ১৪৫ রানের বিশাল জয়।

বিশ্বকাপের সফল মিশনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জয়ের যে ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছিল, পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সিরিজের পর জিম্বাবুইয়ানদের সঙ্গে প্রথম ম্যাচেও সে ধারাবাহিকতা বজায় থাকলো।

টাইগারদের এই বিশাল জয়ের পর ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে অনেকে মন্তব্য করেন, ‘পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো পরাশক্তি দল পাত্তা পায়নি, তোমরা দাঁড়াবে কোন সাহসে!’

বাংলাদেশ সময়: ২২০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৫
এইচএ/

** ১৪৫ রানের বিশাল জয় টাইগারদের
** এক হয়ে গেল মিরপুর-পালেকেল্লে!
** সাকিবের চতুর্থ শিকার, জিম্বাবুয়ে ১২৪/৭
** জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ ১০৭/৬
** জ্বলছেন ম্যাশ, জিম্বাবুয়ের ষষ্ঠ উইকেটের পতন
** মাশরাফির ২০১, জিম্বাবুয়ের ৭৯/৫
** সাকিবের তৃতীয় শিকারের পর জিম্বাবুয়ে ৭২/৪
** আল-আমিনের কামব্যাক উইকেট
** সাকিবের পর উইকেট শিকারে আল আমিন
** চিবাবাকে ফেরালেন সাকিব
** মূল্য তালিকা না মেনেই খাবার বিক্রি
** সফরকারীদের চেপে ধরেছে টাইগার বোলাররা
** জয়ের লক্ষ্যে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ
** মুশফিকের দাপুটে শতক
** টাইগারদের সংগ্রহ ২৭৩
** সাব্বির-নাসির-মুশফিকের বিদায়, বাংলাদেশ ২৪৩/৭
** সাব্বিরকে নিয়ে মুশফিকের ইনিংস সর্বোচ্চ জুটি
** মুশফিক-সাব্বিরের ব্যাটে বাংলাদেশ ২১১/৪
** হাতি পেটানোর মতো ছক্কা মারলেন তামিম!
** মুশফিকের দারুণ ব্যাটিংয়ে টাইগারদের ১৭৫/৪
** ছন্দে মুশফিক, টাইগারদের সংগ্রহ ১৩৬/৪
** তামিমের পর ফিরলেন সাকিব, বাংলাদেশ ১২৩/৪
** দলীয় শতকের পর তামিমের বিদায়
** মুশফিক-তামিমের জুটিতে ৮৪/২
** ক্রিজে তামিম-মুশফিক, বাংলাদেশ ৬২/২
** রিয়াদের বিদায়, স্বাগতিকরা ৩০/২
** ৫ ওভার শেষে টাইগাররা ১৯/১
** শুরুতেই ফিরলেন লিটন
** ব্যাটিংয়ে তামিম-লিটন
** ব্যাটিংয়ে নামবে টাইগাররা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।