ইডেন থেকে: দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টির বিশ্ব শিরোপা ঘরে নিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০১২ সালের পর আবারো এই শিরোপার স্বাদ নিল ক্যারিবীয়রা।
রোববার (৩ এপ্রিল) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে শুরু হয় ক্যারিবীয়-ইংলিশদের মহারণের ম্যাচটি।
টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দলপতি ড্যারেন স্যামি। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ওভার শেষে ৯ উইকেটে ১৫৫ রানের লড়াকু পুঁজি দাঁড় করায় মরগান-বাহিনী। শুরুতে বিপাকে পড়া ইংলিশদের হয়ে দারুণ অর্ধশতক হাঁকান জো রুট। ১৫৬ রানের টার্গেটে শুরুতে বিপাকে পড়ে ক্যারিবীয়রাও। তবে, মারলন স্যামুয়েলসের অপরাজিত ৮৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে আর ব্রাথওয়েইটের ঝড়ো ইনিংসে ১৯.৪ ওভারে জয় তুলে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
টস হেরে আগে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে নামেন ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার জেসন রয় অ্যালেক্স হেলস। তবে, ইনিংসের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই বিদায় নেন জেসন রয়। স্যামুয়েল বদ্রির বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে আন্দ্রে রাসেল ফিরিয়ে দেন আরেক ইংলিশ ওপেনার অ্যালেক্স হেলসকে। শর্ট ফাইন লেগে বদ্রির তালুবন্দি হওয়ার আগে ৩ বলে এক রান করেন হেলস। এরপর ইনিংসের হাল ধরে সতর্ক থেকে ব্যাট চালানোর ইঙ্গিত দেন দলপতি ইয়ন মরগান ও ইনফর্ম ব্যাটসম্যান জো রুট। কিন্তু, উইকেটে থিতু হওয়ার আগেই স্কোরবোর্ডে আরও ১৫ রান তুলে বিদায় নেন মরগান। স্যামুয়েল বদ্রির বলে গেইলের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ১২ বলে ৫ রান করা মরগান।
পাওয়ার প্লে’র ছয় ওভারে ইংলিশরা তিন উইকেট হারিয়ে তোলে ৩৩ রান। আর ৫২ বলে তাদের আসে দলীয় অর্ধশতক। দলীয় শতক আসে ৭৭ বলে।
ইনিংসের ১২তম ওভারে ব্যক্তিগত ৩৬ রান করে বিদায় নেন জস বাটলার। ২২ বলে একটি চার আর তিনটি ছক্কা হাঁকিয়ে বাটলার তার ইনিংসটি সাজান। ব্রাথওয়েইটের বলে ব্রাভোর তালুবন্দি হন তিনি। এর আগে রুটকে সঙ্গে নিয়ে ৪০ বলে ৬১ রান তোলেন বাটলার।
৮ বলে ১৩ রান করে ইনিংসের ১৪তম ওভারে সাজঘরে ফেরেন বেন স্টোকস। ব্রাভোর বলে সিমন্সের হাতে ধরা পড়েন তিনি। দলীয় ১১০ রানের মাথায় পঞ্চম উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। একই ওভারে ব্রাভো ফিরিয়ে দেন মঈন আলিকে। উইকেটের পেছনে রামদিনের গ্লাভসবন্দি হন তিনি।
পুরো বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা জো রুটকে ব্রাথওয়েইট ফিরিয়ে দেন ইনিংসের ১৫তম ওভারে। ৩৬ বলে ৭টি বাউন্ডারির সাহায্যে রুট করেন ৫৪ রান। ইনিংসের ১৮তম ওভারে একটি চার আর দুটি ছক্কা হাঁকানো ডেভিড উইলিকে বিদায় করেন ব্রাথওয়েইট। জনসন চার্লসের দারুণ ক্যাচে ফেরার আগে উইলি ১৪ বলে করেন ২১ রান।
১৯তম ওভারে ব্রাভো তার তৃতীয় উইকেট তুলে নিতে ফেরান ৪ রান করা লিয়াম প্লাংকেটকে।
ক্যারিবীয়দের হয়ে তিনটি করে উইকেট নেন ব্রাভো এবং ব্রাথওয়েইট। দুটি উইকেট পান ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রান খরচ করা স্যামুয়েল বদ্রি। এছাড়া ৪ ওভারে ২১ রানের বিনিময়ে আন্দ্রে রাসেল তুলে নেন একটি উইকেট।
ইংল্যান্ডের ছুঁড়ে দেওয়া ১৫৬ রানের টার্গেটে শুরুতে ব্যাটিং উদ্বোধনে নামেন ক্রিস গেইল ও জনসন চার্লস। তবে, ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই জোড়া আঘাত হানেন জো রুট। দ্বিতীয় ওভারেই বিদায় নেন দুই ক্যারিবীয় ওপেনার। ব্যক্তিগত এক রানে বেন স্টোকসের হাতে ধরা পড়েন চার্লস। আর এই স্টোকসের তালুবন্দি হয়েই ফেরেন দেশের হয়ে ক্যারিয়ারের ৫০তম ম্যাচ খেলতে নামা গেইল (৪)।
পরের ওভারে ডেভিড উইলি ফিরিয়ে দেন সেমিফাইনালের নায়ক লেন্ডল সিমন্সকে। এলবির ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরেন সিমন্স।
পাওয়ার প্লে’র ছয় ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তিন উইকেট হারিয়ে তোলে ৩৭ রান। ৫৩ বলে তাদের দলীয় অর্ধশতক আসে। ৯০ বলে দলীয় ১০০ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ইনিংসের ১৪তম ওভারের শেষ বলে ব্রাভো বিদায় নেন। আদিল রশিদের বল তুলে মারতে গিয়ে রুটের হাতে ধরা পড়েন তিনি। বিদায় নেওয়ার আগে স্যামুয়েলসের সঙ্গে ৭৫ রানের জুটি গড়েন তিনি। ২৭ বলে ব্রাভোর ব্যাট থেকে একটি চার ও ছক্কায় আসে ২৫ রান।
ইনিংসের ১৬তম ওভারে এক রান করা আন্দ্রে রাসেলকে ফিরিয়ে দিয়ে ক্যারিবীয়দের পঞ্চম উইকেট তুলে নেয় ইংল্যান্ড। ডেভিড উইলির বলে স্টোকসের হাতে ডিপ মিডেউইকেটে বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন রাসেল। একই ওভারে বিদায় নেন দলপতি ড্যারেন স্যামি। অ্যালেক্স হেলসের তালুবন্দি হন ২ রান করা স্যামি।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার হয় ১৯ রানের। বেন স্টোকসের করা সে ওভারের প্রথম চার বলেই চারটি ছক্কা হাঁকান ব্রাথওয়েইট। দুই বল বাকি থাকতেই জয় পায় ক্যারিবীয়রা।
মারলন স্যামুয়েলস ৬৬ বলে ৯টি চার আর দুটি ছক্কায় করেন অপরাজিত ৮৫ রান। ব্রাথওয়েইট ১০ বলে চারটি ছক্কা আর একটি চারের সাহায্যে ৩৪ রান করে অপরাজিত থাকেন।
২০১০ সালে কেনসিংটন ওভালে বিশ্বকাপের তৃতীয় আসরের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে প্রথম শিরোপা ঘরে তুলেছিলো ইংল্যান্ড। ঠিক এর পরের আসরে ২০১২ সালে কলম্বোয় স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৬ রানের জয় নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজও প্রথম টি-টোয়েন্টি শিরোপার দেখা পায়।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এবারের আসরের শুরুটা অনেকটা উড়ন্তই করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৬ মার্চ মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে এই ইংল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারিয়ে মিশন শুরু করে ক্যারিবীয়রা। পরের দুই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও জয় পায় স্যামি বাহিনী। তবে ২৭ মার্চ নাগপুরে শেষ দশে নিজেদের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে ৬ রানে হেরে বসে তারা। তবে, প্রথম তিন ম্যাচে টানা জয়ে সেমিফাইনালে উঠে যায় ২০১২’র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। আর সেমিফাইনালে ৩১ মার্চ মুম্বাইয়ে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে বিরাট কোহলির ব্যাটে উড়তে থাকা স্বাগতিক ভারতকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে আকাশ থেকে মাটিতে টেনে নামায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ইংলিশদের বিপক্ষে এই ফাইনালের আগে ১৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মুখামুখি হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যেখানে ৯টিতেই জিতেছিল তারা আর বাকি ৪টিতে জয় পায় ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপে চারবারের দেখায় একটিতেও জয় পায়নি ইংল্যান্ড।
ক্যারিবীয়দের মতো বিশ্বকাপের এবারের আসরে ইংলিশরাও কম যায়নি। শেষ দশে নিজেদের চার ম্যাচে একমাত্র ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছাড়া কারও বিপক্ষেই হারেনি ইয়ন মর্গানরা। টি-টোয়েন্টিতে সব সময়ের শক্তিশালী দুই দল দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কাকে হারায় ইংলিশরা। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে অন্য ম্যাচে আইসিসির সহযোগী দেশ আফগানিস্তানকেও হারায় তারা। সেমিফাইনালে ফেভারিট নিউজিল্যান্ডকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারায় ইংলিশরা।
ইংল্যান্ড একাদশ: ইয়ন মরগান, মঈন আলি, জস বাটলার, অ্যালেক্স হেলস, ক্রিস জর্ডান, লিয়াম প্লাংকেট, আদিল রশিদ, জো রুট, জেসন রয়, বেন স্টোকস এবং ডেভিড উইলি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ: ড্যারেন স্যামি, স্যামুয়েল বদ্রি, সুলেমান বেন, কার্লোস ব্রাথওয়েইট, ডোয়াইন ব্রাভো, জনসন চার্লস, ক্রিস গেইল, দিনেশ রামদিন, আন্দ্রে রাসেল, মারলন স্যামুয়েলস এবং লেন্ডল সিমন্স।
বাংলাদেশ সময়: ২৩১০ ঘণ্টা, ০৩ এপ্রিল ২০১৬
এমআর