ঢাকা: নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে ৭৭ রানে হেরে গেল বাংলাদেশ। ফলে সিরিজে ১-০তে লিড নিল স্বাগতিকরা।
৩৪২ রানে টার্গেটে বাংলাদেশের হয়ে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে নামেন তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। তবে দলীয় সপ্তম ওভারের তৃতীয় বলে টিম সাউদির বলে উইকেটরক্ষক লুক রঞ্চির কাছে ক্যাচ দিয়ে ফেরন ইমরুল। ২১ বলে দুই চার ও এক ছক্কায় ১৬ রান আসে এ ওপেনারের ব্যাট থেকে।
১২তম ওভারের দ্বিতীয় বলে বাজে ফর্মে থাকা সৌম্য সরকার বিদায় নেন। জিমি নিশামের বলে ব্যক্তিগত এক রানে কেন উইলিয়ামসনকে ক্যাচ দেন তিনি। একই ওভারে নিশামের দ্বিতীয় শিকার হন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (০)। ১৩তম ওভারে বাংলাদেশের দলীয় অর্ধশতক আসে। তবে ৩৮ রান করা তামিম ১৮তম ওভারের শেষ বলে নিশামের তৃতীয় শিকার হন। মিচেল স্ট্যান্টনারকে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৫৯ বলে পাঁচ চারে ৩৮ রান করেন তিনি।
২৩তম ওভারে দলীয় শতক পূর্ণ হয় সফরকারী বাংলাদেশের। অবশ্য দুর্দান্ত খেলতে থাকা সাকিব আল হাসান ২৮তম ওভারে বিদায় নেন। লাকি ফার্গুসনের বলে টিম সাউদিকে ক্যাচ দেন তিনি। মাঠ ছাড়ার আগে ৫৪ বলে পাঁচ চার ও দুই ছক্কায় ৫৯ রান আসে তার ব্যাট থেকে। ব্যক্তিগত ১৬ রানে বিদায় নেন সাব্বির রহমান। ফার্গুসনের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ট্রেন্ট বোল্টকে ক্যাচ দেন তিনি। তবে ৩৫তম ওভারে দলীয় দুই’শ রান পূর্ণ করে বাংলাদেশ। কিন্তু পায়ে চোট পেয়ে ব্যক্তিগত ৪২ রানে ৩৯তম ওভারে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন মুশফিকুর রহিম।
৪৪তম ওভারে ফার্গুসনের তৃতীয় শিকার হয়ে ফেরেন তাসকিন আহমেদ। ব্যক্তিগত দুই রানে তিনি উইকেটরক্ষ লুক রঞ্চিকে ক্যাচ দেন। পরের ওভারে সাউদি শূন্য রানে মোস্তাফিজকে ফেরালে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। সফরকারীদের হয়ে অবশ্য অসাধারণ খেলেন তরুণ ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ৪৪ বলে পাঁচ চার ও তিন ছক্কায় ৫০ রানে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন তিনি। কিউইদের হয়ে তিনটি করে উইকেট পান নিশাম ও ফার্গুসন। আর দুটি উইকেট লাভ করেন সাউদি।
এর আগে সফরকারী বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করা স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে তোলে ৩৪১ রান।
টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন স্বাগতিক দলপতি কেন উইলিয়ামসন। ক্রাইস্টচার্চে হ্যাগলি ওভালেসোমবার (২৬ ডিসেম্বর) বক্সিং ডে (ক্রিসমাসের পরদিন) ওয়ানডে দিয়ে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ শুরু হয়। স্বাগতিকদলের হয়ে দুর্দান্ত এক শতক হাঁকান ওপেনার টম ল্যাথাম। টাইগারদের হয়ে সাকিব তিনটি উইকেট দখল করেন। এছাড়া, দুটি করে উইকেট লাভ করেন মোস্তাফিজ এবং তাসকিন। উইকেটশূন্য ছিলেন মাশরাফি, সৌম্য এবং মোসাদ্দেক।
আগে ব্যাটিংয়ে নামা কিউইদের হয়ে ইনিংস শুরু করেন মার্টিন গাপটিল এবং টম ল্যাথাম। টাইগারদের হয়েবল হাতে ইনিংস শুরু করেন মাশরাফি। দ্বিতীয় ওভারেই বোলিংয়ে আসেন মোস্তাফিজুর রহমান। দীর্ঘ ইনজুরিকাটিয়ে চলমান সফরের প্রস্তুতি ম্যাচে নিজেকে ফিট প্রমাণ করলেও এই ম্যাচে মাঠে নামা নিয়ে আশঙ্কা ছিলমোস্তাফিজের। সব জল্পনা-কল্পনা কাটিয়ে চলতি বছরের বর্ষসেরা উদীয়মান এই ক্রিকেটার মাঠে নামেন।
ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারেই উইকেটের দেখা পায় টাইগাররা। দলীয় ৩১ রানের মাথায় বিদায় নেন ১৩৮ ম্যাচখেলা মার্টিন গাপটিল। মোস্তাফিজের দুর্দান্ত এক স্লোয়ারে বোকাবনে যান ঝড় তোলার আভাস দেওয়া এইব্যাটসম্যান। লেগ-স্ট্যাম্পের বাইরের বল পিচ করে ঢোকার সময় উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন ১৯ বলে একচার আর এক ছয়ে ১৫ রান করা গাপটিল। তবে, বলের লাইন বুঝতে না পেরে মিডঅফে সৌম্য সরকারেরতালুবন্দি হন তিনি।
গাপটিলের বিদায়ে মাঠে আসেন কিউই দলপতি কেন উইলিয়ামসন। ব্যাটিংয়ে নেমে ৯৬ ইনিংসে চার হাজাররানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান গর্ডন গ্রিনিজও সমান ইনিংসখেলে চার হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন। এছাড়া, উইলিয়ামসন-গ্রিনিজের থেকে কম ইনিংসেওয়ানডেতে চার হাজার রান ছুঁয়েছেন হাশিম আমলা (৮১), ভিভ রিচার্ডস (৮৮) ও বিরাট কোহলি (৯৩)।
ইনিংসের ১৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে বিদায় নেন উইলিয়ামসন। তাসকিন আহমেদের ব্যক্তিগত তৃতীয়ওভারের দ্বিতীয় বলটি ছিল এক্সট্রা বাউন্সের দারুণ এক ডেলিভারি। ৩৬ বলে ৩১ রান করে কিউই দলপতিউইকেটের পেছনে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হন এই ডেরিভারিতে। তার ইনিংসে ছিল ৫টি চারের মার। দলীয় ৭৯রানের মাথায় বিদায় নেন উইলিয়ামসন। বিদায়ের আগে টম ল্যাথামের সঙ্গে ৪৮ রানের জুটি গড়েন তিনি।
উইলিয়ামসনের বিদায়ে ব্যাট হাতে মাঠে নামেন নেইল ব্রুম। ২০১৩ সালের পর আবারো জাতীয় দলের জার্সিগায়ে তিনি মাঠে নামেন। ব্যক্তিগত ১৭ রানের মাথায় ইনিংসের ২৩তম ওভারে সাকিবের বলে ক্যাচ তুলেদেন ব্রুম। সহজ ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। একবার জীবন পেয়েও নিজের ইনিংস লম্বাকরতে পারেননি ব্রুম। এক ওভার পরেই সেই সাকিবের ঘূর্ণিতে পরাস্ত হন তিনি। এলবির ফাঁদে পড়ার আগেতার ব্যাট থেকে আসে ২২ রান। ব্রুমের ৩২ বলে সাজানো ইনিংসে কোনো বাউন্ডারি ছিল না। তবে,ল্যাথামের সঙ্গে ৫৫ রানের জুটি গড়েন তিনি। দলীয় ১৩৪ রানের মাথায় তৃতীয় উইকেট হারায় স্বাগতিকরা।
নেইল ব্রুমের বিদায়ে ব্যাট হাতে মাঠে নামেন জেমস নিশাম। তবে, নিশাম-ল্যাথাম জুটিটি বড় হতে দেননিবিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। ইনিংসের ২৯তম ওভারে নিশামকে এলবির ফাঁদে ফেলেন তিনি। সাজঘরেফেরার আগে নিশামের ব্যাট থেকে আসে ১২ রান। ল্যাথামের সঙ্গে তার জুটি ছিল ২৪ রানের। দলীয় ১৫৮রানের মাথায় চতুর্থ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড।
নিশামের বিদায়ে নামেন কলিন মুনরো। ইনিংসের ৪০তম ওভারে তাসকিনকে মিড অফের উপর দিয়ে ছক্কাহাঁকিয়ে ওয়ানডেতে নিজের দ্বিতীয় শতক তুলে নেন ওপেনার ল্যাথাম। হ্যাগলি ওভালে এটাই কোনো কিউই ব্যাটসম্যানের প্রথম সেঞ্চুরি। এর আগে আরও তিন ব্যাটসম্যান এই ভেন্যুতে শতক হাঁকালেও কোনো স্বাগতিক ব্যাটসম্যান এখানে শতকের দেখা পাননি। ৪২তম ওভারের শেষ বলে তাসকিনকে ছক্কা হাঁকিয়ে নিজের অর্ধশতকের দেখা পান কলিন মুনরো।
ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠা এই জুটিকে থামান সাকিব। ইনিংসের ৪৭তম ওভারে বিদায় নেন মুনরো। তবে, ততক্ষণে বাংলাদেশের যা সর্বনাশ হওয়ার হয়ে গেছে। সাকিবের প্রথম বলে সহজ ক্যাচ কঠিন করে ছেড়ে দেন মোসাদ্দেক। পরের বলে এলবির জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। তৃতীয় বলে মুনরোকে ফেরান সাকিব। দলীয় ৩১৬ রানের মাথায় পঞ্চম উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। মুনরো-ল্যাথাম জুটিতে উঠে সর্বোচ্চ ১৫৮ রান। ব্যক্তিগত ৮৭ রানে সাজঘরে ফেরেন মুনরো। তার ৬১ বলের ঝড়ো ইনিংসে ছিল ৮টি চার আর ৪টি ছক্কার মার। তাসকিনের তালুবন্দি হয়ে ফেরেন তিনি। মুনরোর বিদায়ে ব্যাট হাতে আসেন লুক রঞ্চি।
ইনিংসের ৪৮তম ওভারে বোলিংয়ে এসে মোস্তাফিজ ফিরিয়ে দেন সেঞ্চুরিয়ান ল্যাথামকে। অফস্ট্যাম্পের বাইরের বল মারতে গিয়ে উইকেটের পেছনে মুশফিককে ক্যাচ দেন ল্যাথাম। বিদায় নেওয়ার আগে ১২১ বলে ৭টি চার আর ৪টি ছক্কায় ১৩৭ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন ল্যাথাম। ৩২৭ রানের মাথায় ষষ্ঠ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা।
৪৯তম ওভারে লুক রঞ্চিকে (৫) কোনো সুযোগ না দিয়ে সরাসরি বোল্ড করেন তাসকিন। টিম সাউদি আর মিচেল স্যান্টনার অপরাজিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬
এমআরপি/এমএমএস