ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে আফগানদের হারালো বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৮
শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে আফগানদের হারালো বাংলাদেশ শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে আফগানদের হারালো বাংলাদেশ-ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: বাংলাদেশকে হারাতে শেষ ওভারে আফগানিস্তানের প্রয়োজন ছিলো ৮ রান, উইকেট ছিলো ৬টি। কিন্তু মোস্তাফিজ রহমানের বোলিং জাদু এতেই আটকে দিলো তাদের। ‘দ্য ফিজ’র কৌশলী বোলিংয়ে ৩ রানে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।

এশিয়া কাপে টানা দুই ম্যাচ হারে পুরো টাইগার শিবিরেই যেন বিরাজ করছিলো অস্বস্তি। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে আফগানদের কাছে হারের পর ভারতের বিপক্ষেও মাশরাফিরা হারের বৃত্ত থেকে বেরোতে পারেননি।

অবশেষে রোববার (২৩ সেপ্টেম্বর) নিজেদের ‘বাঁচা-মরার ম্যাচে’ সেই আফগানদের হারিয়েই বিজয়ের আনন্দে মেতে উঠলো এলো লাল-সবুজের দল।

২৪৯ রানের মোটামুটি সংগ্রহ নিয়েও মাশরাফি, মোস্তাফিজদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং আফগানদের বিরুদ্ধে দারুণ এ জয় এনে দিলো। ফাইনালের টিকিট পেতে শেষ ম্যাচে ২৬ সেপ্টেম্বর সুপার ফোরে পাকিস্তানকে হারাতে পারলেই বাজিমাত করবে বাংলাদেশ।

মাশরাফিদের দেওয়া ২৫০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নামা আফগানরা ৭ উইকেটের বিনিময়ে সংগ্রহ করেছে ২৪৬ রান।

স্কোরই বলছে লক্ষ্যটা খুব একটা আহামরি রকমের ছিলো না। কিন্তু তারপরও নিজেদের শেষ রক্ষা করতে পারেনি কাবুলিওয়ালার দেশ আফগানিস্তান। বলার অপেক্ষা রাখে না, ফাইনালের মিশনে দু’দলের জন্যই ম্যাচটি হয়ে উঠেছিলো ‘বাঁচা মরার’। সেই ম্যাচে বল হাতে এসেই উইকেটের দেখা পান টাইগার কাটার স্পেশালিস্ট মোস্তাফিজুর রহমান।  

৫ম ওভারে নিজের প্রথম ডেলিভারিতে নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যাচে পরিণত করেন ইহসানুল্লাহকে। ১১ বল খেলে ২ চারে ৮ রান সংগ্রহ করে দলকে ২০ রান এনে দিয়ে ফেরেন এই ওপেনার।

অবশ্য দলটির প্রথম উইকেটের পতন আগের ওভারেই হতে পারতো। যদি না নাজমুল ইসলাম অপুর বলে মিডঅনে মোহাম্মদ শাহজাদের ক্যাচটি মোহাম্মদ মিঠুন ফেলে না দিতেন।

ইহসানুল্লাহ ফেরার পর দলের সঙ্গে ৬ রান যোগ হতে না হতেই ব্যক্তিগত ১ রানে ফেরেন আফগান টপ অর্ডার রহমত শাহ। ৮ম ওভারে নাজমুল ইসলাম অপুর দ্বিতীয় ডেলিভারিতে প্রথম রান কাভারেরর পর দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে ক্রিজের অপর প্রান্তে থাকা মোহাম্মদ শাহজাদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে সাকিবের সরাসরি থ্রোতে কাটা পড়েন রহমত।

তৃতীয় উইকেটে হাসমতউল্লাহ শহিদিকে সঙ্গে নিয়ে টাইগারদের ওপর ব্যাট হাতে চোখ রাঙাচ্ছিলেন মারকুটে ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদ। কিন্তু খুব বেশিক্ষণ তা স্থায়ী হয়নি। ব্যক্তিগত ৫৩ রানে তাকে বোল্ড আউট করে দলকে ব্রেক থ্রু এনে দেন ব্যাটিংয়ে টাইগারদের পথ দেখানো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শাহজাদ ফিরে যাওয়ার আগে এই জুটি সংগ্রহ করে ৬৩ রান। এ ম্যাচ দিয়েই ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৩তম অর্ধশতকের দেখা পেয়েছেন শাহজাদ।

তারপর চতুর্থ উইকেট জুটিতে অধিনায়ক আসগর আফগানকে সঙ্গে নিয়ে রানের চাকা ঘুরিয়ে যাচ্ছিলেন শহিদি। তাদের সেই যাত্রাও থামিয়ে দেন টাইগার দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজা। ৪০তম ‍ওভারে তার ৪র্থ ডেলিভারিতে ব্যক্তিগত ৩৯ রানে মাহমুদউল্লাহর তালুবন্দি হন আসগর। আবার জেগে ওঠে বাংলাদেশ শিবির।

পঞ্চম উইকেটটিও আসে ওই মাশরাফির কল্যাণে। ৪৪তম ওভারে নিজের ৪র্থ বলে ক্লিন বোল্ড করেন সেট ব্যাটসম্যান শহিদকে। আর এই উইকেট দিয়েই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে ২৫০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন ‘দিন বদলের দলপতি’।

ষষ্ঠ উইকেটেও মোহাম্মদ নবী ও সামিউল্লাহ শেনওয়ারি টাইগারদের ওপর চোখ রাঙাচ্ছিলেন। কিন্তু ৪৮তম   ওভারে সাকিব জাদুতে ব্যক্তিগত ৩৮ রানে নবী নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ধরা পড়লে উল্লাস ফেরে লাল সবুজের দলে।

আফগানদের হারের কফিনের শেষ পেরেকটি ঠোকেন মোস্তাফিজ। ৫০তম ওভারে বল হাতে এসে কাটারের পসরা সাজিয়ে নিজের দ্বিতীয় বলে রশিদ খানকে ৫ রানে কট অ্যান্ড বোল্ড করলে সেই উল্লাস আরও বেড়ে যায়। তবে জয় নিশ্চিত হয়নি। কেননা শেষ ৪ বল থেকে তাদের প্রয়োজন ছিলো ৬ রান।

কিন্তু বিধি বাম। মোস্তাফিজ এমনই কাটার জাদু চালালেন যেন পুরোপুরি পরাস্ত হলেন সামিউল্লাহ শেনওয়ারি ও গুলবাদিন নাইব। ১৯ বলে অপরাজিত ২৩ রান করেও চোখের সামনে মুঠো গলে ম্যাচটি বেরিয়ে যেতে দেখলেন সেট ব্যাটসম্যান শেনওয়ারি।

ফলে ৩ রানের স্বস্তির জয় ধরা দিল মাশরাফি শিবিরে।

এর আগে বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংসের শুরুটাও ভাল হয়নি। ম্যাচের পাওয়ার প্লেতে দুই উইকেট হারানোর পর ১৯ ও ২১তম ওভারে পরপর সাকিব, মুশফিক ও লিটন দাসের উইকেট পড়ার পর ভীষণ চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। দৃঢ় ব্যাটিংয়ে সেখান থেকে দলকে টেনে তুলে ২৪৯ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ এনে দেন দুই অভিজ্ঞ টাইগার ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও ইমরুল কায়েস।

রিয়াদের ব্যাট থেকে এসেছে অমূল্য ৭৪ রান। তবে শেষ পর্যন্ত উইকেটে থাকতে পারেননি তিনি। ৪৭তম ওভারে আফতাব আলমের বলে রশিদ খানের ক্যাচ হয়ে ফিরেছেন তিনি। তবে ইনিংসের শেষ পর্যন্ত ছিলেন ইমরুল। দায়িত্বশীল ব্যাটে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৫তম হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়ে সংগ্রহ করেছেন মহামূল্যবান অপরাজিত ৭২ রান।

দু’জনের এমন দায়িত্বশীল ব্যাটে ৭ উইকেটের বিনিময়ে আফগানদের বিপক্ষে লড়াই করার মতো পুঁজি পায় কোচ স্টিভ রোডসের শিষ্যরা।

তবে এও ঠিক ১৯তম ওভারে রশিদ ঘূর্ণিতে ক্রমাগত বিপদজনক হয়ে ওঠা লিটন ৪১ রানে ফিরে গেলেও তার ওই ওভারে হন্তদন্ত হয়ে ছোটা সাকিব (০) ও একওভার বিরতিতে সেট ব্যাটসম্যান মুশফিকও (৩৩) রান আউট না হলে দলীয় সংগ্রহের ভাণ্ডার আরও সমৃদ্ধ হতে পারতো।

কিন্তু শতক, অর্ধশতক করতে না পারলেও এই ম্যাচটি দিয়েই বাংলাদেশের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫ হাজার রানের ঘরে ঢুকে গেছেন মুশফিকুর রহিম।

আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এ খেলায় ব্যাটিংয়ের সঙ্গে একটি উইকেট ও এক ক্যাচ নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

বাংলাদেশ সময়: ০১৩৭ ঘণ্টা, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
এইচএল/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।