আইসিসি’র বর্ষসেরা পুরস্কারের সঙ্গে ‘ইএসপিএন-ক্রিকইনফো অ্যাওয়ার্ড’র এই অংশে কিছু পার্থক্য আছে। এখানে মূলত ওয়ানডে ক্রিকেটের সেরা পারফরম্যান্স হিসেবে ধরা হয়েছে।
দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত গত এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে ১৪৪ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেছিলেন মুশফিকুর রহিম। তার সেই ইনিংস বর্ষসেরা ব্যাটিং পারফরম্যান্সের জন্য মনোনীত হয়েছে। ওই ম্যাচে মাত্র ২ ওভারে ৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ। সেই অবস্থান থেকে দলকে জয় পাওয়ার মতো অবস্থানে পৌঁছে দেওয়া যে ইনিংস মুশফিক উপহার দিয়েছেন, তা অনেকের মতে বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটিং।
মোহাম্মদ মিঠুনকে সঙ্গে নিয়ে দলকে বিপদমুক্ত করার পাশাপাশি ১২৩ বলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েও দায়িত্ব শেষ করেননি তিনি। বরং লোয়ার অর্ডারকে নিয়ে দলকে পথ দেখান। ইনজুরি আক্রান্ত তামিম ইকবালকে নিয়ে দশম উইকেট জুটিতে ১৬ বলে ৩২ রান তোলেন মুশফিক। শেষ ওভারে শেষ উইকেট হিসেবে মুশফিক যখন আউট হলেন ততক্ষণে জেতার মতো রান পেয়ে গেছে বাংলাদেশ।
ওই এশিয়া কাপের ফাইনালে লিটন দাসের দুর্দান্ত ইনিংসটিও পেয়েছে বর্ষসেরা বাটিংয়ের মনোনয়ন। ভারতের বিপক্ষে ওই ম্যাচে তার ব্যাট থেকে আসে ১২১ রানের ঝলমলে এক ইনিংস। ওই ম্যাচে অল্পের জন্য জয় হাতছাড়া হয় টাইগারদের। তবে লিটনের বুক চিতিয়ে লড়াই সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে।
ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি পাওয়ার দিনে লিটন ভারতীয় বোলারদের নাকের জল চোখের জল এক করে ফেলেছিলেন। ম্যাচে দুই দলের আর কোনো ব্যাটসম্যানদের ব্যাট থেকে যেখানে কোনো ফিফটিও আসেনি, সেখানে তার ১১৭ বলে ১২১ রানের ইনিংসটিই সব বুঝিয়ে দিতে যথেষ্ট। যদিও তার সেঞ্চুরি সত্ত্বেও ভারতের সামনে ২২৩ রানের টার্গেট দিতে সক্ষম হয় টাইগাররা। এই টার্গেট পূরণ করতেই অবশ্য শেষ বল পর্যন্ত খেলতে হয়ে ভারতকে। ওই ম্যাচে লিটনের বিতর্কিত স্ট্যাম্পিং অনেক টাইগারভক্তের কাছেই আক্ষেপের নাম। তবে ম্যাচের ফলাফল যাই হোক, তাতে লিটনের ইনিংসের গুরুত্ব কম নয়, যা বর্ষসেরার মনোনয়নেই স্পষ্ট।
বর্ষসেরা ব্যাটিং পারফরম্যান্সের তালিকায় আরও স্থান পেয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জেসন রয়ের ১৮০ রান, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিরাট কোহলির ১৬০ রান, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রস টেইলরের ১৮১ রান, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জস বাটলারের ১১০ রান, ভারতের বিপক্ষে লর্ডসে জো রুটের অপরাজিত ১১৩, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ফখর জামানের অপরাজিত ২১০ রান, অজিদের বিপক্ষে ডেভিড মিলারের ১৩৯ রান ও ভারতের বিপক্ষে শাই হোপের ১২৩ রানের ইনিংস।
অন্যদিকে বর্ষসেরা বোলিং পারফরম্যান্সের তালিকায় স্থান পেয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজে মাশরাফির ম্যাচ জেতানো বোলিং। ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ হেরে আত্মবিশ্বাসের তলানিতে থাকা টাইগাররা স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচেই দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। ওই ম্যাচে দলের সিনিয়র খেলোয়াড়দের প্রায় সবাই দারুণ পারফরম্যান্স উপহার দেন। বিশেষ করে অধিনায়ক মাশরাফি।
প্রভিন্সের ওই ম্যাচে সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের ব্যাটে চড়ে ২৭৯ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। এরপর বল হাতে বাকি কাজটা সারেন মাশরাফি। তার দুর্দান্ত এক স্পেলে খেই হারিয়ে ফেলে ক্যারিবীয়রা। ওপেনার এভিন লুইসকে তুলে নিয়ে উইকেট পতনের শুরু করেন ‘ম্যাশ’। পরে জেসন হোল্ডার, বিধ্বংসী আন্দ্রে রাসেল এবং অ্যাশলে নার্সকে তুলে নিয়ে দলকে জয়ে পাইয়ে দেন। ১০ ওভারে তার বোলিং ফিগার দাঁড়ায় ৩৭ রানে ৪ উইকেট, ইকোনমি রেট ৪-এর কম।
বর্ষসেরা বোলিং পারফরম্যান্সের তালিকায় আরও স্থান পেয়েছে পাকিস্তানের বিপক্ষে ট্রেন্ট বোল্টের ১৭ রানে ৫ উইকেট, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টম কুরানের ৩৫ রানে ৫ উইকেট, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যুজবেন্দ্র চাহালের ২২ রানে ৫ উইকেট, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কুলদিপ যাদবের ২৫ রানে ৬ উইকেট, ভারতের বিপক্ষে আদিল রশিদের ৪৯ রানে ৩ উইকেট, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আকিলা ধনঞ্জয়ার ২৯ রানে ৬ উইকেট, পাকিস্তানের বিপক্ষে ভুবনেশ্বর কুমারের ১৫ রানে ৩ উইকেট ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ট্রেন্ট বোল্টের ৫৪ রানে ৩ উইকেট।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৯
এমএইচএম/এমএমএস