মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। আইসিসি’র এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উঠে এসেছে সাকিবের সঙ্গে সেই জুয়াড়ির বিস্তারিত যোগাযোগের সব তথ্য।
১. ২০১৭ সালের ৪ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) পঞ্চম আসর অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে খেলেছিলেন সাকিব।
২. তারই পরিচিত কোনো এক ব্যক্তি দীপক আগারওয়াল নামে এক ভারতীয় জুয়াড়িকে তার ফোন নম্বর দিয়েছেন যাকে আল হাসান চিনতেন।
৩. নভেম্বর ২০১৭ এর মাঝামাঝি সময়ে হোয়াটসঅ্যাপে আগারওয়ালের সঙ্গে সাকিব কিছু বার্তা আদান-প্রদান করেন। তখনই আগারওয়াল সাকিবের সঙ্গে দেখা করার প্রস্তাব দেন।
আরও পড়ুন>>>দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ সাকিব
৪. ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুয়েকে নিয়ে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজের সময় দলের অনুশীলনে অংশ নেন সাকিব। সিরিজ চলাকালীন দু’জনের মধ্যে আবারও হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা আদান-প্রদান হয়।
৫. ১৯ জানুয়ারি সাকিবকে অভিনন্দন জানিয়ে খুদে বার্তা পাঠান আগারওয়াল, যেখানে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচসেরা হন সাকিব। সেদিনই সাকিবকে একটি বার্তা পাঠান আগারওয়াল, যেখানে লেখা ছিল- ‘কাজটা কি এখনই হবে, নাকি আমি আইপিএল পর্যন্ত অপেক্ষা করব?’
৬. এখানে ‘কাজ’ বলতে মূলত দলের ভেতরের খবর ফাঁস করাকে বুঝিয়েছেন আগারওয়াল।
৭. আগারওয়ালের কাছ থেকে পাওয়া এই প্রস্তাবের কথাই আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিট (আকসু) বা অন্য কোনো দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাকে জানাননি সাকিব।
৮. ঠিক এর চার দিন পর ২৩ জানুয়ারি আগারওয়ালের কাছ থেকে আরও একটি হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা পান সাকিব। যেখানে দলের ভেতরের খবর ফাঁস করার জন্য আবারও সাকিবকে প্রস্তাব দেন তিনি। বার্তায় আগারওয়াল বলেন, ‘এই সিরিজের ব্যাপারে কি কোনো তথ্য পেতে পারি?’
৯. সাকিব তথ্যটি নিশ্চিত করেন যে আগাওয়াল তাকে ত্রিদেশীয় সিরিজের তথ্য দিতে বলেছিলেন।
আরও পড়ুন>>>এমসিসি ক্রিকেট কমিটি থেকে সাকিবের পদত্যাগ
১০. একই প্রস্তাব আবার পেলেও দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাকে এবারও কোনো কিছুই জানাননি সাকিব।
১১. ২৬ এপ্রিল ২০১৮, আইপিএলে সাকিব সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে মাঠে নামেন।
১২. সেদিন হোয়াটসঅ্যাপে পুনরায় সাকিবকে বার্তা পাঠান আগারওয়াল যে, তার (সাকিব) দলের একজন নির্দিষ্ট খেলোয়াড় ওই ম্যাচে খেলবেন কি-না। এছাড়া দলের ভেতরের আরও কিছু তথ্য জানতে চান আগারওয়াল।
১৩. সেদিন আগারওয়ালের সঙ্গে অনেকক্ষণ ধরেই কথা চালিয়ে যান সাকিব। আগারওয়াল সাকিবের কাছে ডলার অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য জানতে চান। সাকিব জবাবে তাকে জানান যে, তিনি আগারওয়ালের সঙ্গে দেখা করতে চান ‘প্রথমে’।
১৪. ২৬ এপ্রিলের সেই ‘চ্যাটিং’য়ের বেশ কিছু অংশ সাকিব ফোন থেকে ডিলিট করে দেন। দলের ভেতরের যে তথ্য জানতে চেয়েছিলেন আগারওয়াল, সেই বার্তাগুলোই ডিলিট করেন সাকিব। দুর্নীতি দমন ইউনিটের কাছে সাকিব এটা স্বীকার করেছেন।
১৫. ওই দিনের কথোপকথনের পরেই আগারওয়ালের বিষয়টা নিয়ে সাকিবের সন্দেহ হয়। আগারওয়াল যে একজন জুয়াড়ি, সেটা বুঝতে পারেন সাকিব।
১৬. এবারও সাকিব আকসুকে ২৬ এপ্রিলের ঘটনার ব্যাপারে কিছুই জানাননি।
আরও পড়ুন>>>এমন অপরাধ করেনি যে নিষিদ্ধ করতে হবে: সাকিবের বাবা
সাকিব আল হাসান আকসুকে জানান, আগারওয়ালের দেওয়া কোনো প্রস্তাবেই তিনি রাজি হননি। আগারওয়ালের দেওয়া প্রস্তাবে দলের অভ্যন্তরীণ কোনো তথ্যই তিনি ফাঁস করেননি। এমনকি আগারওয়ালের কাছ থেকে কোনো ধরনের নগদ অর্থ কিংবা অন্য কোনো উপহারও তিনি নেননি।
শুধু মাত্র আকসুর কাছে তথ্য গোপনের কারণেই সাকিবকে এই শাস্তির মুখে পড়তে হলো।
বাংলাদেশ সময়: ০২২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৯
আরএআর/এসএ