সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের মতে, সাকিব এক বছর ক্রিকেটের বাইরে থাকায় এটি তাকে বড়সড় মানসিক ধাক্কা দেবে। নিষেধাজ্ঞা শেষে আগে সাকিবকে ক্রিকেটে ফিরতে হবে।
যেখানে ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটেও জুয়াড়িদের বিচরণ সেখানে ক্রিকেটারদের লোভের ফাঁদে ফেলা খুব একটা কষ্টকর নয়। তবে এই জুয়াড়িদের মাস্টারমাইন্ডরা থেকে যাচ্ছেন আড়ালে। সাকিবের পিছু নিয়েছিল এক ভারতীয় জুয়াড়ি। দীপক আগারওয়ালের পরিচয় জানা যায়নি। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির মতে, তিনি কালো তালিকাভুক্ত একজন জুয়াড়ি। সাকিবকে তিনি একবার নয়, বেশ কয়েকবার ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন। সাকিব সেটি আইসিসিকে না জানানোয় নিজেই এখন নিষিদ্ধ। তিনটি প্রস্তাবের কথাও গোপন করেন তিনি।
জুয়াড়িরা কতটা বিপদজনক তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক হ্যানসি ক্রনিয়ে, ভারতের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন, অজয় জাদেজা, মনোজ প্রভাকর, নয়ন মোঙ্গিয়া, পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমির, সালমান বাট, মোহাম্মদ আসিফ, বাংলাদেশের সাবেক দলপতি মোহাম্মদ আশরাফুলরা।
একেকজনের ক্যারিয়ার ইতি টেনেছে ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার অপবাদ নিয়ে। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে জাতীয় দলে ফিরেছেন পাকিস্তানি পেসার আমির। সাকিবের ফিরে আসার বড় শক্তি হতে পারেন লর্ডসে ম্যাচ ফিক্সিংয়ে নিষিদ্ধ হওয়া আমির। নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন আশরাফুল। জীবন থেকেই হারিয়ে গেছেন ক্রনিয়ে।
২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ক্রিকেটে নিষিদ্ধ হন টাইগারদের সাবেক দলপতি আশরাফুল। ২০১৩ সালে বিপিএলে ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকায় আশরাফুলকে ৩ বছরের স্থগিত নিষেধাজ্ঞাসহ আট বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে বিসিবির গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। পরে আশরাফুলের স্বীকারোক্তি ও ট্রাইব্যুনালের বিচারে ৫ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ হন দেশের এই সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান।
৬ বছর পর আবারও বাংলাদেশের আরেক দলপতি নিষিদ্ধ হলেন। একজন বাঘা বাঘা দলের বিপক্ষে বাংলাদেশকে জিতিয়েছেন, আরেকজন বাঘা বাঘা দলের বিপক্ষে বাংলাদেশকে কী করে জিততে হয় তা দেখিয়েছেন। আশরাফুল এখন জাতীয় দলের গণনায় নেই। এখনও একই প্রশ্ন বাংলাদেশের জাতীয় দলে কি তিনি ফিরতে পারবেন?
আশরাফুল ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে পাতানো ম্যাচ খেললেও সাকিব খেলেননি। জুয়াড়ির প্রস্তাবের কথা আইসিসির কাছে গোপন রাখাই কাল হয়েছে। আইসিসির কোড অব কন্ডাক্ট ভঙ্গ করে সাকিব এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ।
ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরেই আশরাফুল নিজেকে প্রমাণ করতে থাকেন। কদিন আগেই জাতীয় ক্রিকেট লিগে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। পাকিস্তানের আমিরও একই পথে হেঁটেছিলেন। নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরেই ঘরোয়া ক্রিকেটে ছিলেন উড়ন্ত ছন্দে। জাতীয় দলে ডাক পেতে খুব একটা অপেক্ষায় থাকতে হয়নি। তিনি এখন জাতীয় দলের অটোমেটিক চয়েজ। বরাবরের মতোই সাকিব টাইগার স্কোয়াডে অটোমেটিক চয়েজ। নিষেধাজ্ঞা শেষে জাতীয় দলের জার্সিতে তাকেও উড়ন্ত ছন্দে দেখা যাবে বলেই বিশ্বাস সাকিব ভক্তদের। তাদের প্রত্যাশা ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর নতুন সাকিবকেই হয়তো দেখবে ক্রিকেট বিশ্ব। যে সাকিবের হাত ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেট আরও এগিয়ে যাবে।
বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার শেষ বেলায় নিজেই বলে গেছেন, ‘একটা জিনিস আমি বলতে চাই। যেভাবে আপনারা আমাকে সবসময় সহায়তা করেছেন, বাংলাদেশের সব ক্রিকেটভক্ত, বাংলাদেশের সব মানুষ, মিডিয়া, সরকার থেকে শুরু করে সবাই আমার ভালো ও খারাপ সময়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন, আশা করি সেই সাপোর্ট থাকবে। এমন সমর্থন যদি থাকে তাহলে আমি খুব শিগগিরই আবার ক্রিকেটে ফিরতে পারব। আমি আগের থেকে আরও শক্ত ও ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারব। সেটা বাংলাদেশের জন্য। ’
বল টেম্পারিংয়ের মতো ন্যাক্কারজনক কাণ্ডে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক দলপতি স্টিভেন স্মিথ, সহ-অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ও তরুণ ব্যাটসম্যান ক্যামেরন ব্যানক্রফট। তিনজনই ফিরেছেন আন্তর্জাতিক ময়দানে। স্মিথ আর ওয়ার্নার সাকিবের মতোই এক বছরের নিষেধাজ্ঞা পেয়েছিলেন। বিশ্বকাপে ফিরেই দুর্দান্ত ছন্দে দেখা গেছে ওয়ার্নারকে। আর বিশ্বকাপের পর অ্যাশেজে উড়ন্ত ফর্মে ছিলেন স্মিথ। এক বছরের বিরতি তাদের আরও মজবুত করেছে। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ফিরেছেন আরও দুর্বার গতিতে। স্মিথ-ওয়ার্নার কেঁদেছিলেন, সাকিব না কাঁদলেও নীরব কান্নায় ভিজেছে দেশের ক্রিকেট। এক বছর পর সাকিবের ব্যাটে হাসি আর বলে জাদু দেখতে চাইছে দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৯
এমআরপি/এমএইচএম