অথচ ক্রিকেটের প্রতি প্রেমই কাল হয়েছে রইসের। যে কারণে অকালে হারাতে হয়েছে দু’টি হাত।
তিন বছর বয়সে বাবা সুন্দর আলীকে হারান রইস। আর ২০১৪ সালের শুরুতে হারান মা রাবেয়া খাতুনকে। পড়ালেখা করতে পারেননি। ছিল না জমানো কোনো টাকা। জায়গা-জমিও নেই।
এতসব নেই টলাতে পারেনি রইসের মনোবল। মনোবল ও আত্মবিশ্বাসের জোরেই চলছে তার সংগ্রামী জীবন। অভাবের কারণে ২০১৪ সালে স্ত্রী সোনিয়া আক্তারকে নিয়ে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় আসেন তিনি। বর্তমানে পরিবার নিয়ে থাকছেন মহাখালীর হাজিরবাড়ি মহল্লায়। একমাত্র ছেলে আল সাবিলকে (৬) ভর্তি করিয়েছেন স্থানীয় একটা স্কুলে।
বিজয় সরণি মোড়ে পণ্য ফেরি করেন রইস। ব্রাশ, পেন্সিল, কলম, নেল কাটার, চাবির রিং, আইডি কার্ড কাভার, ঝুলন্ত আঙুর, কাচি ইত্যাদি পণ্য পাওয়া যায় তার কাছে। সব পণ্যই শরীরে ঝোলানো থাকে। ক্রেতার যদি কোনো পণ্য পছন্দ হয় নিতে হয় নিজ থেকেই। পাশে রাখা থাকে ছোট একটা ব্যাগ। ওখানে টাকা দিতে হয় নিজ দায়িত্বে।
রইস জানান, ফেরি করে সারাদিনে গড়ে এক থেকে দেড় হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হয়। লাভ হয় গড়ে ৫০০ টাকা।
দুই হাত হারানো রইস এখন স্বাবলম্বী। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। অদম্য মনোবলের কারণে থেমে নেই তার জীবন সংগ্রাম। মনে প্রাণে ভিক্ষাবৃত্তি ঘৃণা করা রইস দৃঢ় মনোবলের অধিকারী।
রইস উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, দুই হাত হারিয়েছি সমস্যা নেই। কিন্তু পা দু’টো তো আছে। এমনকি আমি পাগল তো হয়ে যাইনি। দুই পায়ে ভর করে শ্রম দিয়ে ঢাকায় ফেরি করি। আল্লাহ দিলে দৈনিক ৫০০ টাকা আয় হয়। মাসে ১৫ হাজার টাকা আয় করি। সাড়ে তিন হাজার ঘর ভাড়া ও বাচ্চার পড়ালেখার খরচ দিয়ে সংসার চলে যায়।
‘আমি মনে প্রাণে ভিক্ষা করা ঘৃণা করি। যার ভিক্ষা করেন তাদের সবার উচিত ভিক্ষা ছেড়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানো। দুই হাত হারিয়েছি। পথ চলতে সমস্যা হয়। এরপরও সারাদিন ঘুরে ঘুরে ব্রাশ, কলমসহ ১০টি আইটেমের পণ্য ফেরি করি। দুই হাত হারালেও মান সম্মান হারাইনি। তাই ভিক্ষা না করে ঢাকায় ফেরি করি। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৯
এমআইএস/এইচএডি/