ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

পারফরম্যান্স দিয়ে নির্বাচকদের আস্থা অর্জন করতে চান ইরফান

রিফাত আনজুম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, (স্পোর্টস) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০২০
পারফরম্যান্স দিয়ে নির্বাচকদের আস্থা অর্জন করতে চান ইরফান ইরফান শুক্কুর/ছবি: শোয়েব মিথুন

করোনার দীর্ঘ বিরতির পর আবার মাঠে গড়িয়েছে দেশের ক্রিকেট। এরইমধ্যে সফলভাবে শেষ হয়েছে বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ।

এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে মাঠে ফিরেছেন ক্রিকেটাররা। যদিও পুরো টুর্নামেন্টে পেসারদের দাপটে ব্যাটসম্যানরা ছিলেন অনুজ্জ্বল।  

তবে ব্যাটসম্যানদের এই ব্যর্থতার মাঝেও এই টুর্নামেন্ট দিয়ে নিজেকে নতুন করে চিনিয়েছেন শুক্কুর। পুরো প্রেসিডেন্টস কাপে ব্যাট হাতে ধারাবাহিক ছিলেন বাঁহাতি এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করেছেন তিনি। ২১৯ রান নিয়ে শীর্ষে মুশফিফুর রহিম। এরপর  ৫ ম্যাচে ২১৪ রান নিয়ে ইরফান। তবে এক দিক দিয়ে মুশফিকের চেয়ে এগিয়ে ইরফান। মুশফিকের গড় যেখানে ৪৩, সেখানে ইরফানের গড় ৭১।

আরেক জায়গায় নিজেকে নতুন করে চিনিয়েছেন ইরফান। নিয়মিত সাত নম্বরে ব্যাট করেছেন তিনি। সাধারণত টপ অর্ডারে ব্যাট করে অভ্যস্থ ইরফান, সেখানে নিয়মিত দলের চাপে হাল ধরেছেন তিনি। দলের উদ্ধারকর্তা হিসেবে হাজির হয়েছেন ২৭ বছর এই ব্যাটসম্যান। সেজন্যই অন্যদের চেয়ে আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন ইরফান।

কীভাবে নিজেকে বদলে ফেলেছেন, কীভাবে পেয়েছেন আত্মবিশ্বাস, নিজের লক্ষ্যটাই বা এখন কি, এসব বিষয় নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন ইরফান শুক্কুর। বলেছেন বারবার ইনজুরির থাবায় পড়েও আবার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পটা। সেই সঙ্গে জানালেন, জাতীয় দলে খেলার চাপটা এখনই নিতে চান না তিনি। শুধু নিজের দায়িত্ব পালন করে যেতে যান।  

ফিরে আসার আত্মবিশ্বাস কোথায় পেয়েছেন এমন প্রশ্নে ইরফান বলেন, 'ক্যারিয়ারের মাঝখানে আমি ইনজুরিতে পড়েছিলাম যার কারণে অনিয়মিত ছিলাম, ২০১৭ সালেও একটা ইনজুরিতে পড়ি। এরপর থেকে আমি আমার ফিটনেস নিয়ে কাজ করা শুরু করি। তারপর বিপিএলটা ভালো খেলার পর আত্মবিশ্বাসটা ফিরে পেতে শুরু করি। '

ঘরোয়া ক্রিকেটে ইরফানে পারফরম্যান্স কখনোই খুব আশা জাগানিয়া ছিল না। তবে আবার খুব খারাপও ছিল না। ৫৮টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ২৭ গড়ে করেছেন ২ হাজার ৩৪৮ রান। আর ৬৬টি লিস্ট 'এ'  ম্যাচে ২৯ গড়ে করেছেন ১ হাজার ৭৭০ রান। ইনজুরির কবলে পড়ে মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়েছিলেন তিনি। তবে নিজের ফিটনেস নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করেছেন। যার ফল পেয়েছেন ২৭ বছর এই ব্যাটসম্যান।   

ইরফান বলেন, 'আমি আসলে খুব বেশি ভালো খেলেছি সেটা না, অ্যাভারেজে ভালো খেলছিলাম। কোনো মৌসুমে ৭০০-৮০০ রান করিনি। তব ধারাবাহিকভাবে খেলে আসছিলাম। এরপর কিছু আপস অ্যান্ড ডাউন ছিল। ২০১৭ সালে যখন ইনজুরিতে পড়ি, তখন জাতীয় লিগের দল থেকে বাদ পড়েছিলাম। এরপর মনের মধ্যে কাজ করলো যে এভাবে হলে তো আমি ক্রিকেট খেলতে পারব না। মনের মধ্যে একটা জেদ কাজ করলো। নিজের মানসিক শক্তি বাড়াতে কাজ করেছি। ডায়েটিং ফিটনেস, নিউট্রিশন নিয়ে কাজ করেছি। কিছু স্কিল নিয়ে কাজ করেছি, কোন কোন জায়গায় দুর্বলতা আছে, সেই দিক নিয়ে কাজ করেছি। সেটারই ফল বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে পেয়েছি। '

বারবার ইনজুরিতে পড়ে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর পথে সিনিয়র ক্রিকেটারদের কাছ থেকে কেমন সহযোগিতা পেয়েছেন বা কি ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন  এমন প্রশ্নে ইরফান বেশ প্রশংসা করেন টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক ও জাতীয় দলের ক্রিকেটার লিটন দাসের। মুমিনুল হক আর লিটনের পরামর্শই বদলে দিয়েছে তাকে।

ইরফান বলেন, 'মুমিমুল ভাই আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন, আমার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি খুব পরিশ্রম করেন। মুমিনুল ভাই যখন জাতীয় দলের বাইরে ছিলেন, ঘরোয়া লিগে খেলতেন, তখন আমি দেখেছি তিনি অনেক পরিশ্রম করতেন। তাকে দেখেই অনুপ্রেরণা পেয়েছি। আর ২০১৭-১৮ মৌসুমে আমি যখন মোহামেডানে খেলেছিলাম, তখন লিটন দাস আমাকে কিছু কথা বলেছিল স্কিল নিয়ে, কোথায় আরো ভালো করতে হবে সেটা দেখিয়ে দিয়েছে। এই জিনিসটাই আমার বেশ কাজে লেগেছে। '

বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে ইরফানের সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের জায়গা ছিল নিয়মিত সাত নম্বরে ব্যাট করা, দলের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যাট করা। সেটা বেশ ভালোভাবেই করেছেন তিনি। টপ অর্ডারে ব্যাট করা ব্যাটসম্যান সাত নম্বরে ব্যাট করাটা বেশ চ্যালেঞ্জের।

সাত নম্বরে ব্যাট করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে ২৭ বছর বয়সী ইরফান বলেন, 'কোচিং স্টাফ যারা ছিলেন সবাই আমকে সাহায্য করেছেন, সবাই অনুপ্রেরণামূলক কথা বলেছেন। কিন্তু আসল কথা হচ্ছে, ২২ গজে যখন খেলতে হবে তখন কিন্তু আমাকেই খেলতে হবে। আর এই বিষয়টা আমার জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। সাত নম্বরে ব্যাট করা আসলেই আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল, কারণ আমি টপ অর্ডারে ব্যাট করে অভ্যস্থ। তবে আমি যে পুরোপুরি সফল সেটা বলব না, মোটামুটি সফল হয়েছি, সাত নম্বরে ব্যাট করে। '

বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের সময়টা কেমন ছিল এমন প্রশ্নে ইরফান বলেন, 'বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে আমি ম্যাচ সিলেকশন যে প্রক্রিয়া ছিল সেখানে ভালোই করেছি। তবে আমার প্রতিযোগিতাটা ছিল বেশি। কারণ বিজয় (এনামুল হক) ছিল, সোহান (নুরুল হাসান) ছিল। ওদের কিপিং তো আমার থেকে ভালো ছিল সেই সময়টাতে। তবে সেই সময়টাতে আমি ওতো ফিট ছিলাম না। অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে বাদ পড়ি। এরপর থেকে ফিটনেস নিয়ে বেশি কাজ করা শুরু করি। তবে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটটা আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। '

জাতীয় দলে খেলতে হলেও বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে ইরফানকে। দলে মুশফিক রয়েছেন, লিটন রয়েছেন, মিঠুনও রয়েছে ব্যাকআপ হিসেবে। তাই কম্বিনেশনের কথা চিন্তা করে উইকেটরক্ষক হিসেবে সুযোগ পাওয়াটা কঠিন। তাই ইরফান শুক্কুরকে ব্যাটসম্যান হিসেবেই চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। তবে ইরফান জাতীয় দলে খেলার চাপটা এখন নিতে চান না। বরং নিজের কাজটাই ভালো করে করতে চান। তার লক্ষ্য ধাপে ধাপে সামনে এগিয়ে যাওয়া।   

তিনি বলেন, 'আমার হাতে যতটুকু আছে, ততটুকু আমি করবো। আমার পরিশ্রম, আমার স্কিল সেটা আমি উন্নতি করতে পারব, পারফর্ম করতে পারব। আমি তো দলের জন্য কিছু করতে পারব না। সেজন্য জাতীয় দলে খেলতে হবে এই চাপটা আমি নিতে চাই না, সবারই তো ইচ্ছা থাকে জাতীয় দলের খেলার। আমার এখন মূল লক্ষ্য হলো স্টেপ বাই স্টেপ সামনে এগিয়ে যাওয়া। সামনে যে টুর্নামেন্ট আছে সেটাতে ফোকাস করতে চাই। '

ফিটনেস ঠিক রেখে খেলাটা চালিয়ে যেতে চান ইরফান। নিজের পারফরম্যান্স দিয়েই নির্বাচকদের আস্থা অর্জন করতে চান ২৭ বছর বয়সী ইরফান শুক্কুর। চ্যালেঞ্জটা নিতে পারবেন কিনা সেটা সময়ই বলে দেবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০২০
আরএআর/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।