ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

বিকেএসপির আঞ্চলিক কেন্দ্রে ক্রিকেট প্রশিক্ষণের দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০২১
বিকেএসপির আঞ্চলিক কেন্দ্রে ক্রিকেট প্রশিক্ষণের দাবি

ব‌রিশাল: বরিশালের সন্তান শাহরিয়ার নাফিস, কামরুল ইসলাম রাব্বিসহ অনেকেই ক্রিকেটার হিসেবে জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ নিজের সেরাটা দিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচিত হয়েছেন, দেশ ও জন্মস্থানের নামকে উজ্জ্বল করেছেন।

দেশসেরা এসব ক্রিকেটারদের শুরুটা তৃণমূল থেকেই। যেখানে তাদের প্রথমে দলছুট ছোটাছুটি আর কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে যোগত্যার জানান দিয়ে নিজেদের অবস্থান করে নিতে হয়েছে জাতীয় দলে।

সময়ের সাথে সাথে বিভাগের প্রতিটি জেলাতেই বেসরকারি উদ্যোগে ক্রিকেটের প্রাইভেট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে এখন। যেখান থেকে তরুণদের অনেকেই ক্রিকেট খেলার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, তবে অভিভাবক ও খেলোয়াড়রা তার থেকে বেশি আগ্রহী থাকেন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) প্রতি।

তবে বরিশালে বিকেএসপির আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ক্রিকেটের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় হতাশ স্থানীয় খেলোয়াড়রা। তাদের দাবি বরিশাল বিকেএসপিতে ক্রিকেটের মতো আর্ন্তজাতিক চাহিদাসম্পন্ন ক্রীড়া প্রশিক্ষণের অনুমোতি দেওয়া হোক।

জানা গেছে, ২০০৮ সালে বরিশাল নগরের গড়িয়ার পাড় এলাকায় ১৩ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় বিকেএসপির আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। যেখানে ২০১২ সালে ভর্তি ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু হয়। বর্তমানে ১০০ জন শিক্ষার্থীর আবাসিক ও প্রশিক্ষণের সুবিধা থাকলেও, এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি তেমনভাবে আলোচনায় আসতে পারেনি স্থানীয় খেলোয়াড় বা খেলাপ্রেমী মানুষের কাছে।

বিকেএসপি বরিশাল কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার সাভারের কেন্দ্রীয় বিকেএসপিতে ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, শ্যুটিং, আর্চারি, জুডো, উশু, তায়কোয়ান্দো, অ্যাথলেটিকস, বাস্কেটবল, সাঁতার, জিমন্যাস্টিকস, বক্সিং, টেনিস, ভলিবল, কারাতে, টেবিল টেনিস, গলফ, কাবাডি, ব্যাডমিন্টন, ভারোত্তলন, হ্যান্ডবল ও স্কোয়াশসহ ২৩টি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর বাইরে দেশের চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, দিনাজপুর ও বরিশাল বিকেএসপিতে নির্ধারিত কিছু ক্রীড়া প্রশিক্ষণের বিভাগ চালু রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার বাইরের কেন্দ্রগুলোর মধ্যে খুলনা ও দিনাজপুর বিকেএসপিতে ক্রিকেটসহ সবচেয়ে বেশি ক্রীড়া প্রশিক্ষণের বিভাগ রয়েছে। ফলে চাহিদাসম্পন্ন এই ক্রীড়া অঙ্গন থেকে বিগত সময়ে সবচেয়ে বেশি খেলোয়াড় বেরিয়েছে এই দুই জায়গা থেকে। যেখানে বরিশালের চিত্র উল্টোই বলা চলে।

বরিশালের আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বরিশালের উপ-পরিচালক শাহাদত হোসেন জানান, বরিশাল বিকেএসপিতে উশু, কারাতে, তায়কোয়ান্দো ও ফুটবল প্রশিক্ষণের অনুমতি রয়েছে। আর প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই প্রতিষ্ঠানের ২৩ জন শিক্ষার্থী জাতীয়ভাবে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন।

তিনি জানান, ঢাকা, খুলনা, দিনাজপুরের মানুষের মাঝে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ বেশ লক্ষণীয়, তবে বরিশালে তেমনটা নেই। তবে অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায় উৎসাহী করে তোলা।

শাহাদত হোসেনের মতে, বিকেএসপি মানেই প্রশিক্ষণের একটি স্থান। বিকেএসপিতে সুযোগ পেলে বরিশালে না হলেও ঢাকায় খেলার সুযোগ পাবে। ফলে অঞ্চলভিত্তিক ক্রিকেট প্রশিক্ষণের বিভাগ রাখা না রাখার বিষয় বিবেচ্য নয়। বরং অভিভাবক, ক্রীড়াপ্রেমী ও ক্লাবগুলোকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে, বেশি বেশি টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে হবে।

যদিও অভিভাবকরা বলছেন, বর্তমান সিস্টেমে ক্রিকেট প্রশিক্ষণের জন্য ছোট সন্তানকে দিনাজপুর-চট্টগ্রামে পাঠাতে হবে আর অভিভাবক হয়ে থাকতে হবে বরিশালে—এটা কখনও সম্বভব নয়। আবার যাদের আর্থিক অসঙ্গতি রয়েছে কিন্তু সন্তানের ক্রিকেট মেধা আছে তারা কী করবে? তাই বরিশাল বিকেএসপিতে ক্রিকেট চালু করা সময়ের দাবি।

এদিকে স্থানীয় ক্রিকেটাররা বলছেন, বরিশালের তরুণরা ফুটবল ও ক্রিকেটেই আগ্রহী বেশি, ফলে এখানে ক্রিকেট প্রশিক্ষণের সুযোগ রাখা উচিত। তাহলে আরো কিছু আর্ন্তজাতিক পর্যায়ের খেলোয়াড় বেরিয়ে আসার সুযোগ পাবে।

ব্যক্তি উদ্যোগে গড়া বেসিক ক্রিকেট একাডেমির কোচ সুজন আল মাহমুদ সুজন বলেন, বরিশালে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ শুরু না হলেও এখান থেকে ক্রিকেট প্রশিক্ষণে ভর্তির জন্য আবেদন করা যায়। এরপর সুযোগ পাওয়াদের অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়, যেখানে ক্রিকেট প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এটা নিশ্চিত এখানকার কেন্দ্রে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ শুরু হওয়া মানেই স্থানীয় ক্রিকেটের মান উন্নয়ন। ফলে ভালো মানের খেলোয়াড় তৈরির পাশাপাশি, প্রতিযোগিতার আয়োজনও বাড়বে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালে ক্রিকেট প্রশিক্ষণের জন্য অনুমতি পেয়েছিল বিকেএসপি বরিশাল। কিন্তু তৎকালীন কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার কারণে ২০১৯ সালে অনুমতি বাতিল করে কেন্দ্রীয় বিকেএসপি। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, মাঠের অনুপযোগিতার কারণে ক্রিকেট প্রশিক্ষণের অনুমতি বাতিল করা হয়েছিল। বাস্তবের চিত্র বলছে বরিশাল বিকেএসপিতে ফুটবলের খেলার মাঠ ছাড়া সব মাঠই অব্যবহৃত থাকে।

যদিও বর্তমান উপ-পরিচালক শাহাদাত হোসেন জানিয়েছেন, বরিশালে ক্রিকেট প্রশিক্ষণের অনুমতির জন্য চেষ্টা চলছে, আশা করা হচ্ছে দ্রুতই সেই অনুমতি মিলবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৬ ঘন্টা, মার্চ ০৫, ২০২১
এমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।