ঢাকা, রবিবার, ১৮ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

সোহানের ভুলে নাটক, কষ্ট করে জয় বাংলাদেশের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, স্পোর্টস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২২
সোহানের ভুলে নাটক, কষ্ট করে জয় বাংলাদেশের

ম্যাচের দৃশ্য মোড় বদলালো নাটকীয়ভাবে। শেষদিকে রোমাঞ্চও ছড়ালো বেশ।

 সাকিব আল হাসান দুর্দান্ত ফিল্ডিং করে দলকে ফেরান ম্যাচে, জিম্বাবুয়ের ব্যাটাররা ব্যবধান কমান বাউন্ডারিতে। শেষ ওভারে ৯ নম্বর ব্যাটার হিসেবে ক্রিজে এসে ছক্কা হাঁকিয়ে ভয় ধরান রিচার্ড এনগারাভা। ভালো-মন্দ, চিন্তা, লড়াই, রোমাঞ্চ সবকিছু ছুঁয়ে যাওয়ার পর জয় প্রায় নিশ্চিতই হয়ে যায়। ক্রিকেটার, সমর্থক সবাই শুরু করেন উদযাপন।  

কিন্তু নাটকের শুরু সেখানেই। মোসাদ্দেকের করা শেষ বলে স্টাম্পিং করেন উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান। এতদূর পর্যন্ত ঠিকই ছিল। তবে রিপ্লেতে দেখা গেল সোহান বল ধরেছেন স্টাম্পের সামনে থেকে, নিয়ম অনুযায়ী হলো নো বল। করমর্দন করতে করতে ড্রেসিং রুমের দিকে চলে যাওয়া ক্রিকেটারদের ফিরতে হয় আবার। এরপর ফ্রি হিটে অবশ্য কোন রান করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে।  

রোববার ব্রিসবেন ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের ম্যাচে নানা নাটকীয়তার পর জিম্বাবুয়েকে ৩ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫০ রানের সংগ্রহ পায় টাইগাররা। জবাব দিতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভার ব্যাট করে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৪৭ রানের বেশি করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে।

টস জিতে ব্যাট করতে নামার পর ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলেই আউট হয়ে যান সৌম্য সরকার। ব্লেসিং মুজারাবানির করা অফ স্টাম্প লাইনের বল কাভারে খেলতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ক্যাচ তুলে দেন উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো রেজিস চাকাভার হাতে। ২ বলে শূন্য রান করেন সৌম্য।  

এরপর ক্রিজে আসা লিটন দাস তার স্বভাবমত দারুণ সব টাইমিংয়ের শট করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে মুজারাবানির বলে স্কুপ করতে গিয়ে শর্ট থার্ড ম্যানে দাঁড়ানো চাতারার হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ৩ চারে ১২ বলে ১৪ রান করেন লিটন।  

সাকিব আল হাসান ক্রিজে এসে শান্তর সঙ্গে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন। তাদের জুটিতে আসে ৫৪ রান। ২০ বলে ২৩ রান করার পর সাকিব আউট হন শন উইলিয়ামসের বলে। দুর্দান্ত এক ক্যাচ ধরেন মুজারাবানি।  

ধীরে ধীরে হাত খুলতে থাকেন শান্ত। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নিজের প্রথম হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যান তিনি। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ফিফটিও এটি। হাফ সেঞ্চুরি হয়ে যাওয়ার পর রীতিমতো ঝড় তুলেন শান্ত। ব্র্যাড ইভান্সের করা ১৬তম ওভারে নেন ১৭ রান।  

যদিও বেশিক্ষণ চালিয়ে যেতে পারেননি শান্ত। শেষ অবধি সিকান্দার রাজার বলে ক্যাচ আউট হওয়ার আগে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৫৫ বলে ৭৭ রান করেন তিনি। শেষদিকে ১ চার ও ছক্কায় ১৯ বলে ২৯ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলেন আফিফ হোসেনও। জিম্বাবুয়ের পক্ষে দুই উইকেট করে নেন মুজারাবানি ও এনগারাভা।  

জিম্বাবুয়ে জবাব দিতে নেমে শুরুতেই তাসকিন আহমেদের তোপের মুখে পড়ে। ইনিংসের শুরুতে উইকেট এনে দেওয়া নিয়ম বানিয়ে ফেলেছেন এই পেসার। কাজটা তিনি করলেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও। শুরুতেই আঘাত হানলেন জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং অর্ডারে। ইনিংসের তৃতীয় বলে ডিপ থার্ড ম্যানে দাঁড়ানো মোস্তাফিজের হাতে ক্যাচ দেন ওয়েসলি মাধেভেরে, প্রথম সাফল্য পায় বাংলাদেশ। ৩ বলে ৪ রান করেন তিনি।  

নিজের পরের ওভারে এসে আবার উইকেট নেন তাসকিন। এবার তিনি ৭ বলে ৮ রান করা ক্রেইগ আরভিনকে ফেরান নাসুম আহমেদের ক্যাচ করে। দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচে এমনিতেই নিয়ন্ত্রণ ছিল বাংলাদেশের। সেটা আরও বাড়ান মোস্তাফিজুর রহমান।  

ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে প্রথমবার বোলিংয়ে এসেই তিনি নেন দুই উইকেট। মিল্টন সুম্বা আউট হন সাকিব আল হাসানের ঝাঁপিয়ে পড়ে নেওয়া দারুণ ক্যাচে। এরপর কোন রান না করার আগেই ফর্মের চূড়ায় থাকা সিকান্দার রাজাকে ফেরান মোস্তাফিজ। ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের।  

চার উইকেট হারিয়ে যখন ভীষণ বিপদে জিম্বাবুয়ে। তখন দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন শন উইলিয়ামস ও রেজিস চাকাভা। তাদের জুটি জমে গেলে আবার তাসকিনকে বোলিংয়ে নিয়ে আসেন সাকিব। অধিনায়ককে হতাশ করেননি দারুণ ফর্মে থাকা পেসারও।  

দুজনের ৩৪ রানের জুটি ভাঙেন তিনি। আউট হওয়ার আগে ১৯ বলে ১৫ রান করেন চাকাভা। তিনি ফিরলেও একপ্রান্ত আগলে থাকেন উইলিয়ামস। হাফ সেঞ্চুরিও তুলে নেন। রায়ান বার্লকে সঙ্গী করে দলকে এগিয়েও নিচ্ছিলেন ভালোভাবে। কিন্তু আবারও অসাধারণ নৈপুন্য দেখান সাকিব।  

বোলিংয়ে তিনিই ছিলেন। অফসাইডে ঠেলে দিয়ে এক রান নিতে দৌড়ে শুরু করেন উইলিয়ামস। শরীরের নিয়ন্ত্রণ হারানো অবস্থাতেও সরাসরি থ্রোতে রান আউট করেন তিনি। এরপরও রোমাঞ্চের বাকি অনেকটা। বাংলাদেশের একাদশে একজন বোলারের সংকট আছে এমনিতেই।  

আগেই শেষ করা হয়েছে তিন পেসারের কোটা। শেষ ওভার তাহলে কে করবেন? দেওয়া হলো মোসাদ্দেক হোসেনকে। প্রথম বলে এক রান দেওয়ার পর দ্বিতীয়টিতেই উইকেট নেন তিনি। বাংলাদেশের সহজ জয়ই প্রত্যাশা তখন। কিন্তু তৃতীয় বলে এসে লেগ বাই থেকে হয়ে গেল চার, পরের বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে বসলেন এনগারাভা!

ছক্কার পরের বলেই অবশ্য স্টাম্পিং হলেন তিনি। শেষ বলে জয়ের জন্য জিম্বাবুয়ের দরকার ছিল ৫ রান, চার নিলে হতো সুপার ওভার। কিন্তু বল ব্যাটে লাগাতে পারলেন না মুজারাবানি, হলেন স্টাম্পিং। এরপরই হলো নো বলের ওই নাটক। শেষ অবধি নানা নাটকীয়তার পর ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ।  

বাংলাদেশ সময় : ১২৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২২
এমএইচবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।