ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

অস্তিত্ব সংকটে চন্দনাইশের পাগলা গারদ 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২৩
অস্তিত্ব সংকটে চন্দনাইশের পাগলা গারদ  ...

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বদুরপাড়া রাস্তার মাথা থেকে এক কিলোমিটার এগুলেই চন্দনাইশের জোয়ারা গ্রাম। এই গ্রামে ১৪২ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত নিশি বৈদ্যের পাগলা গারদ এখন অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে।

জানা যায়, কবিরাজ গিরিন্দ্র চন্দ্র দাশ নিজ বাড়িতে প্রায় ১০ একর জমির ওপর ১৮৮০ সালে আয়ুর্বেদিক প্রতিষ্ঠান ‘কমলা ঔষধালয়’ ও তৎসংলগ্ন পাগলা গারদটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় শাখা স্থাপন করে দেওয়া হতো চিকিৎসা সেবা।

উন্মাদ রোগীদের এখানে এনে সুস্থ করে তোলার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। সেই থেকে এটি নিশি বৈদ্যের বাড়ি হিসেবে পরিচিতি পায়।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এখানে চালানো হয় লুটপাট। ধ্বংস করে দেওয়া হয় কবিরাজি ঔষধখানা ও পাগলা গারদ। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেছিলেন কবিরাজ অনুতোষ দাশ। ধার-দেনা করে পুনরায় পাগলা গারদ চালু করা হলেও সেটি আর পূর্ণাঙ্গ রূপ ফিরে পায়নি। মিলেনি সরকারি-বেসরকারি কোনও সাহায্য সহযোগিতা।

নিশি বৈদ্য তাঁর দুই সন্তান জীব রঞ্জন দাশ ও চিত্ত রঞ্জন দাশের নামে আরও ২টি প্রতিষ্ঠান কমলা ঔষধালয় ও দামোদর ঔষধালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এসব প্রতিষ্ঠান তাঁদের বংশধররা পরিচালনা করছেন।  

সরেজমিন দেখা যায়, ২টি পুরোনো মাটির ঘর নিয়ে চলছে নিশি বৈদ্যের পাগলা গারদ। ঘর দুটিতে রয়েছে ছোট ছোট জানালাবিশিষ্ট ১৬টি কক্ষ। একটি কক্ষে দামোদর ঔষধালয়। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন পটিয়ার চেমন আরা বেগম (৫০), রাঙ্গুনিয়ার রচনা দাশ (৪৫), মো. ইউনুছ (৫৮), রাউজানের ইফতেখার উদ্দিন (৬৫), হাটহাজারীর বাবু ধর (৫০) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রিমেল বনিক (২০)। তাদের সার্বক্ষণিক দেখভালের জন্য রয়েছে পরিচর্যাকারী।

সংশ্লিষ্টরা জানান, স্বাধীনতার পর থেকে এখানে প্রায় ২ সহস্রাধিক মানসিক রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা হয়েছে ৫ হাজার বছরের পুরোনো আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায়। ভেষজ উদ্ভিদের মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত ওষুধ খাইয়ে এই চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে বর্তমানে হারিয়ে গেছে অনেক ভেষজ লতা-গুল্ম। ফলে পাওয়া যায় না উপযুক্ত ওষুধ। কোনও রোগী চিকিৎসা সেবার আওতার বাইরে চলে গেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগে কিংবা পাবনা মানসিক হাসপাতালে। সাধারণত দরিদ্র কিংবা পরিবার থেকে বিতাড়িত মানসিক রোগীদের ঠাঁই হয় এখানে। অনেকে রোগীকে রেখে গিয়ে আর খবর নেয় না, দেয় না ভরণপোষণের খরচ।  আবার কেউ মাসিক ভিত্তিতে খরচ দেয়।

পাগলা গারদের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সুধীর সেন (৫৮) জানান, মানসিক রোগে কোনও জীবাণু খুঁজে পাওয়া যায় না। আর্থিক, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, মহামারি সহ নানা কারণে অসমতার শিকার হলে মানসিক রোগ হতে পারে। জরিপ বলছে,  বয়স্কদের ক্ষেত্রে মানসিক সমস্যায় আক্রান্তের হার ১৬.৮ ভাগ এবং তরুণদের ক্ষেত্রে ১৩ ভাগ। ১৬ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৩ কোটি মানুষ মানসিক রোগে আক্রান্ত।

তিনি বলেন, ‘মানসিক ভারসাম্য হারানো রোগীদের নিয়ে পরিবারের দুখের সীমা থাকে না। আমাদের প্রথা অনুযায়ী কবিরাজি চিকিৎসা দেওয়া হয় রোগীকে। অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবুও টিকে আছি। প্রতিষ্ঠানটি চালু হওয়ার পর থেকে একজন রোগীও মারা যায়নি। সরকারি-বেসরকারি কোনও সংস্থার সাহায্য পাইনি। আর্থিক সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠানের মান উন্নয়ন করা যাচ্ছে না। ঘরগুলো জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। সরকার যদি ঔষধ প্রস্তুত করার আনুষঙ্গিক সামগ্রী এবং রোগী পরিবহনের জন্য অ্যাম্বুলেন্স দিতো, তাহলে অনেক রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হতো’।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২৩
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।