চট্টগ্রাম: মাদকের রাজ্যে ডুবে ছিল পুলিশের দুই সোর্স। চাকরি-বাকরি না করে পুলিশকে তথ্য দিয়ে বেড়ানো ছিল তাদের কাজ।
গত ২১ জানুয়ারি কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জারটেক এলাকার পাশে সিডিএ আবাসিক এলাকা থেকে কায়েসের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) মহানগর গোয়েন্দা (বন্দর ও পশ্চিম) উপ কমিশনার মুহাম্মদ আলী হোসেন বাংলানিউজকে এসব কথা বলেন। কায়েস হত্যায় জড়িত ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন- মো. হুমায়ূন কবির প্রকাশ মাসুদ তালুকদার (৪৫), মো. খোকন প্রকাশ সোনা মিয়া (৩১), মো. রফিকুজ্জামান সানি মিয়া প্রকাশ আফরান (২২), মো. নজরুল ইসলাম (২৩), মো. রায়হান (২১) ও আব্দুল কাদের জীবন (২২)।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, কয়েক মাস আগে মো. কায়েস ও হুমায়ূন কবির মাদক সরবরাহ করার জন্য রাঙামাটির পাহাড়ি এক মাদক ব্যবসায়ীর কাছে গিয়েছিলেন। তার সঙ্গে কথা বলে মো. কায়েস ও হুমায়ুন কবির চট্টগ্রামে চলে আসে। পরে মো. কায়েস রাঙামাটি গিয়ে হুমায়ুন কবির পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করে, তিনি চট্টগ্রামে মাদক নিয়ে আসার সময় পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করে দেবে। এ ধরনের নানা কথা রাঙামাটির পাহাড়ি মাদক ব্যবসায়ীকে বলে কায়েস। যখন ১৫ কেজি আইস কেনার জন্য হুমায়ুন যায়, সেখানে হুমায়ুন কবিরকে অণ্ডকোষে ইট দিয়ে আঘাত করে হত্যাচেষ্টা করে। কোনো রকম তিনি সেখান থেকে পালিয়ে চলে আসে।
তিনি বলেন, হুমায়ুন মো. কায়েসের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে চার মাস আগে হত্যার পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা অনুসারে জাহেদ নামে একজনকে ১ লাখ টাকার চুক্তি করে। সে অনুযায়ী কায়েসকে কয়েকবার হত্যার চেষ্টা করে। ইয়াবার কথা বলে কায়েসকে গত ২০ জানুয়ারি বিকেল মোবাইলে ফোন দিয়ে মইজ্জারটেক আসতে বলে হুমায়ূন। সেখানে আসার পরে সন্ধ্যার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে সিডিএ আবাসিক এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে রাস্তায় সিএনজি অটোরিকশাতে কায়েসকে বসিয়ে রেখে হুমায়ূন নেমে যায়। পুনরায় ফিরে আসা পর্যন্ত কায়েসকে থাকতে বলে মইজ্জারটেক চলে যায়। পূর্বপরিকল্পনা মতো কায়েসকে দু’দিক থেকে উপর্যুপরি ছুরি দিয়ে আঘাত করতে থাকে। চুরির আঘাতে কায়েস চিৎকার দিয়ে রাস্তার পশ্চিম পাশে সিডিএ আবাসিক ড্রেনের দিকে দৌড় দেয়। সেখানেও হত্যাকারীরা পুনরায় তাকে ধরে ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। কায়েসকে হত্যা করার জন্য জাহেদ নামে একজনের সঙ্গে ১ লাখ টাকার চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী হুমায়ুন টাকাগুলো জাহেদকে দেওয়ার কথা থাকলেও দিয়েছে মাত্র ২ হাজার টাকা। যেটা কায়েসকে হত্যা করতে গিয়ে আহত হয়ে তারা চিকিৎসা নিয়েছিল। হত্যায় সরাসরি জড়িত ৬ জনকে গ্রেফতার করা হলেও জাহেদকে গ্রেফতার করা যায়নি।
অভিযানে থাকা মহানগর গোয়েন্দা (বন্দর ও পশ্চিম) বিভাগের উপপরির্দশক (এসআই) রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, হুমায়ুন পুলিশ সোর্সের কাজ করাতে পুলিশের প্রযুক্তি সম্পর্কে আইডিয়া ছিল। যার কারণে তিনি মোবাইল ও সিম বন্ধ করে দেন। হুমায়ুনের গ্রামের বাড়িতে বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা বলে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা হয়। তার ছেলে শহরে গেছে বলে আমাদের জানান, সেটার সূত্রে ধরে ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। হুমায়ুনের ছেলে হুমায়ুনকে কল দিলে তিনি নির্দিষ্ট স্থানের কথা বলে না। এর কিছুক্ষণ আগে ছেলে কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ৫ হাজার টাকা নেন হুমায়ুন। প্রযুক্তির মাধ্যমে বিকাশের দোকানের স্থান ছিল কোতোয়ালী। সেখানে হোটেল ও বোডিংয়ে একাধিক স্থানে অভিযান চালিয়ে হুয়ায়ুনকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি জানান, হুমায়ুনের তথ্যের ভিত্তিতে হত্যার সঙ্গে জড়িত বাকি ৫ জনকে নগরের ও জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার ৬ জনের মধ্যে ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। তার মধ্যে হুমায়ুনের বিরুদ্ধে খুন, অস্ত্র ও মাদকসহ ৫টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতার হুমায়ূন, খোকন, রফিকুজ্জামান, নজরুল ইসলাম, রায়হান ও আব্দুল কাদেরকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়।
ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় হুমায়ুন, মো.নজরুল ইসলাম ও মো.রায়হান স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে গ্রেফতার ৬ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২৩
এমআই/টিসি