ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বসন্তের রঙে রঙিন চট্টগ্রাম বইমেলা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩
বসন্তের রঙে রঙিন চট্টগ্রাম বইমেলা ছবি: উজ্জ্বল ধর।

চট্টগ্রাম: সারা দিন বসন্তের রং লেগেই ছিল চট্টগ্রাম বইমেলায়। পাঠক, লেখক থেকে শুরু করে প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীদের মধ্যে বসন্তের ছোঁয়া ছিল দেখার মতো।

পরনে, মননে ফাগুনের আবাহন।  ভ্যালেন্টাইন ডে হওয়ায় যুগলদের আনাগোনাও কম ছিল না।
স্বাভাবিকভাবেই মেলা শুরুর পর থেকে বেচাকেনাও হয়েছে সবচেয়ে বেশি। বরাবরের মতো শিশুতোষ বই বিক্রির শীর্ষে। এরপর গল্প, উপন্যাস, কবিতা আর মুক্তিযুদ্ধের বই। ধর্মীয় বইয়ের যে ৫-৬টি স্টল রয়েছে সেখানেও কৌতূহলী পাঠকের ভিড় ছিল।  

মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) নগরের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের সিজেকেএস জিমনেশিয়াম মাঠের অমর একুশে বইমেলার চিত্র ছিল এমনই।  

প্রজ্ঞালোক প্রকাশনের স্টলে প্রকাশক রেহানা চৌধুরী রীতিমতো টিনের ক্যাশবাক্স নিয়ে বসেছিলেন বই বিক্রির টাকা নিতে। রাত আটটায় তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ভালো বিক্রি হয়েছে আজ। আমাদের প্রত্যাশা আগামী দিনগুলোতে আরও বেশি বিক্রি হবে। বেসরকারি চাকরিজীবীরা বেতন হাতে পেলেই পছন্দের বই কিনতে আসবেন।  

বইমেলা মঞ্চে ছিল বসন্ত উৎসবের আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, বই মানুষের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ ঘটায়। বই পাঠ ছাড়া মানুষের মনোজগৎ আলোকিত হয় না। যে বই পড়ে না তার স্মরণশক্তি, চিন্তাশক্তি কমে যায় মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ ঘটে না। বই নিজের জন্য পড়তে হবে। নিঃসঙ্গ লোকের বড় সঙ্গী হচ্ছে বই।  

সব সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে হচ্ছে বই। বই মানুষকে সুনাগরিক হতে সহায়তা করে। বইমেলা একটি জাতির মনন চর্চার অসাধারণ দিক।  

বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন শাহ আলম নীপুর সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক ছিলেন চসিক প্যানেল মেয়র আফরোজা জহুর (কালাম)। আলোচনা করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন উপ-পুলিশ কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান, উপ- পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) জয়নুল আবেদীন, কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, মোহাম্মদ ইলিয়াস, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সিনিয়ির সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন বই মেলা কমিটির আহবায়ক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দীন আহমেদ মঞ্জু।

আফরোজা জহুর (কালাম) বলেন, বসন্ত মানেই প্রাণ চঞ্চলতা। কচিপাতায় আলোর নাচন। আবার বাঙালি জীবনে বসন্ত যেন অধিকার আদায়ের আওয়াজ নিয়ে হাজির হয়। বসন্ত আর আন্দোলনও মিলেমিশে একাকার। বসন্তের আগমন বার্তা ১৯৫২ সালের সেই ফাল্গুন মনে করিয়ে দেয় যেদিন ‘পিচঢালা রাজপথে লাল ফুল হয়ে’ ভাষা শহীদেরা আত্মাহুতি দিয়েছেন পাকিস্তানি শাসকদের গুলিতে। বসন্তেই বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পথে নেমেছিল। বসন্ত মনে করিয়ে দেয় আশির দশকের স্বৈরাচার প্রতিরোধ আন্দোলনে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের রক্তের কথা। এই বসন্তেই ২০১৩ সালে এই প্রজন্ম জেগে উঠেছিল গণজাগরণে। যুদ্ধাপরাধের বিচার এই বাংলায় হতেই হবে দাবি নিয়ে আবারও এক হয়ে দেখিয়েছিল।

তাই কেবল প্রকৃতি আর মনে নয়, বাঙালির জাতীয় ইতিহাসেও বসন্ত আসে বারবার। বেদনার ইতিহাস দিয়ে হলেও তা এখন উদযাপনে রূপ নিয়েছে। মানুষের ভালোবাসার কথা শোনার ও বলার জন্য সারা বছর বরাদ্দ রাখলেও এই একটি দিনে সেই ভালোবাসার অনুভূতিকে উদযাপন করা যায়। বসন্ত উৎসব আজ সমগ্র বিশ্বব্যাপী খ্যাতি পেয়েছে। আমাদের দেশে যে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য রয়েছে তারই চিত্র ধরা পড়ে বসন্ত উৎসবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩ 
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।