ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চবিতে সিন্ডিকেট সভা, এজেন্ডা নিয়ে মুখ খুলছে না কেউ

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০৭ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০২৩
চবিতে সিন্ডিকেট সভা, এজেন্ডা নিয়ে মুখ খুলছে না কেউ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: দুই দফায় শিক্ষক সমিতি চিঠি দেওয়ার পরও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) অনুষ্ঠিত হয়েছে সিন্ডিকেটের ৫৪৩তম সভা। এদিকে সিন্ডিকেট সভা শেষ হলেও সভার আলোচ্যসূচি বা এজেন্ডা কি ছিলো তা জানা যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ খাইরুল ইসলামকে মুঠোফোনে কল দিয়ে এবং বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।  

আরেক সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুরের কাছে সিন্ডিকেটের আলোচ্যসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় ৩০-৪০টা আলোচ্যসূচি ছিলো।

সবগুলো আমার পক্ষে বলা সম্ভব না। এ সময় গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলোচ্যসূচির কথা উল্লেখ করতে বললে তিনি বলেন, আমার কাছে সব আলোচ্যসূচিই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমি আলাদা করে কিছু বলতে পারবো না।  

সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের আগ মূহুর্তে এ সিন্ডিকেট সভা আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা হাস্যকর প্রশ্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনে সিন্ডিকেট সভা হয়। কারও জন্য সিন্ডিকেট সভা আঁটকে থাকবে না। সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী সময়েও সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি ছিলো না, তখন এসব ব্যাপারে কেউ কথা বলেনি। হঠাৎ কেন বিষয়টি এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেলো? যারা এসব স্ট্যানবাজি করছে সময় হলে তাদেরকে এর জবাব দিতে হবে। এসময় তিনি সিন্ডিকেটের সচিব তথা রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে আলোচ্যসূচি জেনে নিতে বলেন।

তবে জানা গেছে, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষকদের পদোন্নতি, বিভিন্ন প্রকল্পের বাজেট, একাডেমিক কাউন্সিলে জমা হওয়া এমফিল, পিএইচডি, শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট অনুমোদন, শিক্ষকদের পারিতোষিক বাড়ানোসহ অনেকগুলো বিষয় অনুমোদন করা হয় এ সিন্ডিকেট সভায়।


এর আগে শনিবার (৪ মার্চ) দুপুর আড়াইটায় অনুষ্ঠিত হয় সিন্ডিকেটের ৫৪৩তম সভা। সভার শুরুতেই চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বরাবর দেওয়া এক চিঠিতে এ সিন্ডিকেট সভাটি ০৪ মার্চের পরিবর্তে আগামী ০৭ মার্চ তথা শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের পরদিন করার আহ্বান জানান শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী। তবে তা উপেক্ষা করে শেষ করা হয় সিন্ডিকেট সভা।

চিঠিতে বলা হয়, গত ০২ মার্চ চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে আহূত সিন্ডিকেটের ৫৪৩তম সভা আগামী ০৪ মার্চের পরিবর্তে ৭ মার্চ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেছিল। আপনি এ অনুরোধকে যৌক্তিক বলে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ০৩ মার্চ সকালে সমিতির সভাপতি মুঠোফোনে এ ব্যাপারে উপাচার্যের সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে তিনি দুপুর আড়াইটার পর সিদ্ধান্ত জানাতে পারবেন বলে জানান। ইতোমধ্যে উপাচার্যকে এ সংক্রান্ত একটি অনুরোধপত্র হোয়াটসঅ্যাপ পাঠানো হয়েছে। যে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত উপাচার্যের পক্ষ থেকে কোন কিছু জানানো হয়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ অবস্থায় বিষয়টিকে এজেন্ডাভুক্ত করে ৪মার্চ অনলাইনে শিক্ষক সমিতি কার্যনির্বাহী পরিষদের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।  

সভার সিদ্ধান্ত: দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সিন্ডিকেটে বিভিন্ন ক্যাটাগরির শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। শিক্ষক প্রতিনিধি ছাড়া সিন্ডিকেটে গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় স্বার্থ পরিপন্থি বিভিন্ন অগ্রহণযোগ্য কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসা ব্যাপক অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের আর কোনো সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেছে চবি শিক্ষক সমিতি। শিক্ষক সমিতির দাবির প্রেক্ষিতে আগামী ৬ মার্চ সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের মাত্র দুইদিন আগে ৪ মার্চ দুপুর আড়াইটায় শিক্ষক প্রতিনিধি ছাড়া আরো একটি সিন্ডিকেট সভা আহ্বান চরম দৃষ্টিকটু, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং দূরভিসন্ধিমূলক বলে মনে করে শিক্ষক সমিতি। তাই সভাটি আগামী ৭ মার্চ কিংবা তার পরবর্তীতে অন্যকোন সময় নবনির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠানের জন্য প্রশাসনের নিকট শিক্ষক সমিতির সভা থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায়, জরুরী ভিত্তিতে কার্যনির্বাহী পরিষদের সভা আহ্বান করে এ ব্যাপারে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত হয়। সভার সিদ্ধান্তসমূহ জরুরি ভিত্তিতে চবি উপাচার্য এবং  শিক্ষকদের অবহিত করার জন্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব দেওয়া হলো।  

শিক্ষক সমিতির সভার এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন ড. আদনান মান্নান, ড. মো. দানেশ মিয়া, ড. মোহাম্মদ ফরিদুল আলম এবং ড. রকিবা নবী।

চবির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ সিন্ডিকেটের ১৭ পদের ৮টি পদই শূন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্ষদের চাপের মুখে গত ৩১ জানুয়ারি ৮টি শূন্য পদের মধ্যে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক ক্যাটাগরিতে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

তবে হঠাৎ শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের ঠিক আগ মূহুর্তে তোড়জোড় করে সিন্ডিকেট সভা আয়োজনকে রহস্যময় বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা। তাদের দাবি, প্রশাসন এমন কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে যা শিক্ষক প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে হয়তো করতে পারবে না।

বাংলাদেশ সময়: ২৩০০ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০২৩
এমএ/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।