ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ডাকাতদের গ্রেফতার চাইলেন ডাকাত সর্দার!

মিনহাজুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৯ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২৩
ডাকাতদের গ্রেফতার চাইলেন ডাকাত সর্দার! দিন-দুপুরে পৌনে ১০ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতার ডাকাতরা।

চট্টগ্রাম: নগরের কোতোয়ালী থানাধীন রিয়াজউদ্দিন বাজারের একটি দোকানের দিন-দুপুরে পৌনে ১০ লাখ টাকা ডাকাতি হয়। এ ঘটনায় রিয়াজউদ্দিন বাজারের একসময়ের ব্যবসায়ী একরামুল আলম ডাকাতদের গ্রেফতার চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট শেয়ার করেন।

পরে পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে দোকানে ডাকাতির ঘটনার মাস্টারমাইন্ড ডাকাতসর্দার এই একরামুল আলম।  

সোমবার (১০ জুলাই) বিকেলে সদরঘাট থানার মাদারবাড়ী রাবেয়া ওয়ার্কশপের সামনে থেকে একরামুল আলমকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ।

পরবর্তীতে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওইদিনই বিকেলে নগরের স্টেশন রোড হোটেল প্যারামাউন্টের একটি কক্ষ থেকে ডাকাতি হওয়া নগদ ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে অভিযান চালিয়ে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত চারজনকে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করা হয়। ডাকাতি হওয়া ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকার মধ্যে ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ।

গ্রেফতার করা হয়েছে পটিয়া থানার দেউরডেঙ্গা ৮ নম্বর ওয়ার্ড খান বাড়ির মৃত জাফর আহমদের ছেলে মো. একরামুল আলম (৩৭), মীরসরাই থানার পূর্ব মায়ানি এলাকার শাহ আলমের বাড়ির শাহ আলমেরে ছেলে সাহেদ হোসেন মনা (২৪), সাতকানিয়া থানার গোয়াজরপাড়া এলাকার দয়াল বাপের বাড়ির মো. ইউনুছের ছেলে মো. ইয়াছিন প্রকাশ মো. এরফান সাব্বির (২৪) ও  কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার আল্লা এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে রবিউল হোসেন মো. ইকবাল হোসেন ইবু (২৩)।  

গত ৯ জুলাই দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রিয়াজউদ্দিন বাজার রয়েল টাওয়ারের সামনে থেকে ব্যবসায়ী নুর মো. ইয়াছিন কবিরের দুই কর্মচারী মোরশেদ আলম ও ত্রিদীপ বড়ুয়াকে মারধর করে নগদ ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় রাতেই ওই ব্যবসায়ী বাদী হয়ে নগরের কোতোয়ালী থানায় অজ্ঞাতনামা ৭ থেকে ৮ জনকে আসামি করে একটি ডাকাতির মামলা করেন।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রিয়াজউদ্দিন বাজারে দিন-দুপুরে মোবাইল ব্যবসায়ীর পৌনে ১০ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা সংঘবদ্ধ একটি ডাকাত চক্র। তারা বড় বড় ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে এবং ব্যাংকিং লেনদেনের বিষয়ে খোঁজখবর রাখতেন।

তিনি বলেন, চক্রটি ব্যবসায়ীদের টাকা নিয়ে কে কখন কোন ব্যাংকে জমা দিতে যায়, কে উত্তোলন করতে যায় তাদের টার্গেট করে তাদের গতিবিধি নজরদারিতে রাখে। একপর্যায়ে যে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে যায় বা উত্তোলন করে তাকে টার্গেট করে পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা স্থানে পৌঁছামাত্রই মারামারির পরিস্থিতি সৃষ্টি করতো। যাতে কোনো পথচারী বাঁচানোর চেষ্টা না করে। মারামারির একপর্যায়ে সুযোগ বুঝে নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যেত।

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবীর বাংলানিউজকে বলেন, এসআর মোরশেদ আলম ও সহকারী ম্যানেজার ত্রিদীব বড়ুয়া প্রায় সময় প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকিং লেনদেনের সব কার্যক্রম করে থাকে। সেই হিসেবে গত ৯ জুলাই দুপুরের দিকে দুজনেই একটি লাল রঙের পুরাতন ব্যাগে নূর এন্টারপ্রাইজের ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা সিটি ব্যাংকে জমা দিতে যাচ্ছিলেন। ওই সময় নগরের রয়েল টাওয়ারের সামনে রাস্তার ওপর পৌঁছামাত্রই অজ্ঞাতনামা সাত বা আটজন আসামি তাদের ধাক্কা দেয়। ত্রিদীব বড়ুয়া ধাক্কা দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে আসামিরা তাদের এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম ও ছুরিকাঘাত করে। এসময় তাদের কাছে থাকা ব্যাগ ভর্তি ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।  

তিনি বলেন, ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে ছিনতাইয়ে জড়িত আসামি মনাকে সোমবার বিকেলে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার রউফাবাদ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। তার তথ্যের ভিত্তিতে একরামকেও গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কর্ণফুলী থানার চরলক্ষ্যা সৈন্যেরটেক এলাকা থেকে মো. ইয়াছিন ও মো. ইকবালকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে তারাও ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।  

কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রুবেল হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, ডাকাতির সঙ্গে জড়িত একসময়ে রিয়াজউদ্দিন বাজারের পলিথিন ব্যবসায়ী ডাকতির মাস্টারমাইন্ড মো. একরামুলকে গ্রেফতার করা হয়। ডাকাতির টাকা আসামিরা ৮ থেকে ১০ জন মিলে ডাকাতি করে একরামুলের কাছে জমা রেখেছিল। তার মধ্যে কিছু টাকা মনাকে এবং আর কিছু টাকা ডাকাত দলের অন্য সদস্যদের দিয়ে বাকি টাকা নিজের কাছে রেখে দিয়ে ছিলেন একরামুল।

তিনি বলেন, একরামুল আলমের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহযোগিতায় ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিল তারা। একরামুলের পরিকল্পনায় আসামিরা প্রতিষ্ঠানের টাকা কে আনা নেওয়া করে বেশ কয়েকদিন যাবৎ অনুসরণ করে। পরে ব্যাংকে টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা জানতে পেরে মারামারির নাটক সাজিয়ে টাকাগুলো ছিনিয়ে নিয়ে যায়। একরামুল আলম ডাকাতির মাস্টারমাইন্ড ও ডাকাত সর্দার। তিনি ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতাদের জন্য নিজের ফেসবুকে পোস্ট শেয়ার দিয়েছিলেন।  

গ্রেফতারকৃতদের অভিযানে থাকা কোতোয়ালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মোমিনুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ডাকাত সর্দার একরামুল বিরুদ্ধে দুইটি চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। মনার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও জখমসহ সাতটি মামলা ও ইয়াছিনের বিরুদ্ধে একটি ছিনতাইয়ের মামলা আছে।

বাংলাদেশ সময়:১৭০৫ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২৩ 
এমআই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।