ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ড্রোন ব্যবহারে মশার আবাসস্থল নির্ধারণ সহজ হচ্ছে: মেয়র রেজাউল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৭ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২৩
ড্রোন ব্যবহারে মশার আবাসস্থল নির্ধারণ সহজ হচ্ছে: মেয়র রেজাউল বক্তব্য দেন চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

চট্টগ্রাম: ড্রোন ব্যবহারের মাধ্যমে ছাদ পর্যবেক্ষণ করে মশার আবাসস্থল খুঁজে পাওয়া সহজ হওয়ায় ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন নগরের বিশিষ্টজনেরা।  

মঙ্গলবার (১১ জুলাই) আন্দরকিল্লার কেবি আবদুচ ছত্তার মিলনায়তনে চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের উদ্যোগে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ ও ডেঙ্গু চিকিৎসা সুবিধা সহজীকরণ এবং সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মতবিনিময় সভায় তারা এ পরামর্শ দেন।

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় চসিকের প্যানেল মেয়র আফরোজা কালাম, কাউন্সিলরবৃন্দ, চসিকের বিভিন্ন বিভাগ ও শাখা প্রধানসহ বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসনের কার্যালয়, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা ও প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

পরামর্শের প্রেক্ষিতে সভাপতির বক্তব্যে মেয়র বলেন, ড্রোনের কারণে প্রতিটি বাড়িতে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠতে হচ্ছে না৷ খুব অল্প সময়েই অনেক বাড়ির ছাদে মশা জন্মানোর মতো পানি আছে কি না তা খুঁজে বের করা যাচ্ছে৷ এ সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ভবিষ্যতে মশার আবাসস্থল নির্ধারণে এ ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে।

পাশাপাশি মশা নিধনে ওষুধ ক্রয় ও প্রয়োগে বিশেষজ্ঞ মতামত ও প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে।

জরিমানার মতো শাস্তিমূলক পদক্ষেপের চেয়ে জনসচেতনতায় জোর দিচ্ছেন জানিয়ে মেয়র বলেন, ড্রোন দিয়ে ছাদে পানি দেখলে বাড়িমালিকদের সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে। তবে, যাদের ছাদে খুব বেশি দিন পানি জমে আছে কেবল তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে ১০০ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রাম চলমান আছে। করোনা যেভাবে মোকাবিলা করেছি, সন্ধ্যার মধ্যে যেভাবে কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কার করেছি সেভাবে সবাইকে নিয়ে ডেঙ্গুও প্রতিরোধ করব।  

সভায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মশার জীবনপদ্ধতি বদলে যাচ্ছে, তাই মশানিধনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে।  

তিনি বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করার আহবান জানান।  

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ সাহেনা আক্তার বলেন, জ্বর দেখা দিলে ব্যথানাশক ওষুধ খেলে ডেঙ্গু আরো মারাত্মক রূপ ধারণ করে তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া যাবে না।  

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী চট্টগ্রামের সব স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করার পাশাপাশি বেসরকারি হাদপাতালগুলোকে ডেঙ্গুর জন্য বিশেষায়িত সেবা চালুর আহবান জানান।
 
চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, চসিকের পক্ষে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা সেবা দেওয়া হচ্ছে। আমরা একদিনে ৬০ জনের পরীক্ষা করে মাত্র ৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত পেয়েছি। সুতরাং আতঙ্কিত না হয়ে লক্ষণ দেখা দিলেই টেস্ট করুন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করলে ডেঙ্গু ভালো হয়।

ডেঙ্গু ও মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে চসিকের গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে মেয়রের একান্ত সচিব ও প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম জানান, চট্টগ্রামে মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করতে ম্যালেরিয়া ও মশক নিধন কর্মকর্তা নিয়োগ করে পৃথক শাখা গঠন করা হয়েছে এবং লোকবল নিয়োগ করা হয়েছে। মশক নিধন কাজে নিয়োজিত ২২০ জন স্প্রেম্যান থেকে ৪০০ জনে উন্নীত করা হয়েছে। ৩০০টি স্প্রে মেশিন ও ১২০টি ফগার মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে।

‘বর্তমানে ১০ হাজার লিটার অ্যাডাল্টিসাইড ও ৩ হাজার লিটার লার্ভিসাইড মজুদ রয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা টিমের সুপারিশের আলোকে মসকুবান নামীয় ভেষজ ওষুধ ব্যবহার শুরু করা হয়েছে। ৫ হাজার লিটার ন্যাপথা মজুদ রয়েছে। অ্যাডাল্টিসাইড হিসেবে ইনভেন্ট লিকুইড ইনসেক্টিসাইড, লার্ভিসাইড হিসেবে টেমিফস ৫০ ইসি ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ এলডিও এবং এইচএসডি (কালো তেল) কেনা হচ্ছে।

তিনি বলেন, রেডক্রিসেন্ট ও আরবান ভলান্টিয়ারের যৌথ টিমের মাধ্যমে প্রতিটি ওয়ার্ডে ও নগরের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে প্রতিদিন লিফলেট বিতরণ ও হ্যান্ড মাইকে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানা হচ্ছে। এ ছাড়া ৫টি মাইকের মাধ্যমে নগরবাসীকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন হওয়ার জন্য প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্থানীয় মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিতের মাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধে বাড়ির ছাদ, আঙিনা, নির্মাণাধীন বাড়ির নিচতলা ও ছাদ, এসির পানির ধারক, ডাবের খোসা প্রভৃতিতে পানি জমিয়ে না রাখার জন্য জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে।

মেয়র মহোদয় সব আবাসিক ও মহল্লা কমিটির সভাপতি বা সম্পাদক বরাবর ডিও লেটার পাঠিয়ে মহল্লা ও আবাসিকে বসবাসরত ভবন মালিক ও ভাড়াটিয়াদের ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতন করার পরামর্শ দিয়েছেন। ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণ ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটির মাধ্যমে মহল্লা ভিত্তিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করছেন। সিভিল সার্জনের কাছ থেকে ডেঙ্গু রোগীর তথ্য গ্রহণপূর্বক রোগীর কর্মস্থল ও বসবাসস্থলের আশপাশে বিশেষ মশক নিধন অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। জনগণকে সচেতন করার জন্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় গান তৈরি করে ডেঙ্গুবিরোধী প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

নির্মাণাধীন বাড়ির নিচতলা ও ছাদ, ছাদবাগান কিংবা বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানের পরিত্যক্ত স্থানে পানি জমে থাকায় ৫ জুলাই থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত ৪টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের মাধ্যমে ১৯ জনকে প্রায় ২ লাখ  টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়:১৭০৫ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২৩ 
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।