চট্টগ্রাম: দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর ও সবচেয়ে বড় রাজস্ব রাজস্ব আহরণকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস পরিদর্শন করেছেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। এ সময় তিনি দুই প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং সেবার গতিশীলতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন।
বুধবার (২ অক্টোবর) দুই দিনের সফরে চট্টগ্রামে আসেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এবং বিজিএমইএর নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
বন্দরের সভায় কনটেইনার জট, অফডকে খালাসের তালিকায় নতুন পণ্য যুক্ত করা, স্ক্যানার সংকট, বিপজ্জনক পণ্য ধ্বংস, নিলামে ধীরগতি, কাস্টমসের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে সমন্বয় করাসহ নানা বিষয় উঠে আসে।
এনবিআর চেয়ারম্যান এসব সমস্যা নিরসনে বন্দর কাস্টমসের সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি পাঁচটি নতুন স্ক্যানার বসানোর উদ্যোগের কথা বলেন।
কাস্টমসের সভায় এনবিআরের অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সার্ভারের ধীরগতির বিষয়টি উঠে আসে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের প্রফেশনাল হতে হবে। আমাদের ইফিসিয়েন্সি লেভেল বাড়াতে হবে। আমরা যেহেতু ব্যবসায়ীদের সার্ভ করি, তাদের প্রতি আমাদের সহমর্মী হতে হবে। আমরা দ্রুত তাদের সেবা দেবো এবং সেই সেবাটা হবে সিমলেস, কোনোরকমের হয়রানি থাকবে না। তিনি বলেন, পোর্ট যদি সক্ষমতা বাড়ায়, আর কাস্টমস যদি পিছিয়ে থাকে তাহলে হবে না। একইভাবে কাস্টমসও যদি এগিয়ে যায়, পোর্ট পিছিয়ে থাকলে হবে না। সেজন্য আমরা চাই যে, কাস্টমস এবং পোর্ট একত্রে আমাদের ইফিসিয়েন্সিটা বাড়ানোর, এতে রেভিনিউ জেনারেশনটা হবে অনেক বেশি। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাবো।
সম্প্রতি রাজস্ব আদায় কমলেও সরকারের নানা মুখী পদক্ষেপ ও ব্যবসায়ীরা সঠিকভাবে শুল্ক কর দিলে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হবে না বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান।
এ সময় রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. জাকির হোসেনসহ দুই প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিজিএমইএ
বিকেল সাড়ে ৪টায় বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল এনবিআরের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কাস্টম হাউসের সম্মেলন কক্ষে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী, পরিচালক এম এহসানুল হক, মোহাম্মদ মুসা, আমজাদ হোসেন চৌধুরী, মোস্তফা সরওয়ার রিয়াদ, রাকিব আল নাসের, গাজী মো. শহীদউল্লাহ, সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি এরশাদ উল্লাহ, এস এম আবু তৈয়ব, নাসিরউদ্দিন চৌধুরী, মোহাম্মদ আবদুস সালাম, সাবেক পরিচালক এ এম মাহাবুব চৌধুরী ও অঞ্জন শেখর দাশ।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম পোশাক শিল্পের বর্তমান সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মহামন্দার ফলে বিশ্বে তৈরি পোশাক শিল্পের চাহিদা কমে গেছে। দেশে দেশে মুদ্রাস্ফীতির ফলে দর পতন ঘটেছে পণ্যের। পক্ষান্তরে- শিল্পের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে কয়েক গুণ, যার প্রভাব পড়েছে আমাদের রপ্তানিতে। ইতোমধ্যে তৈরি পোশাক খাতের বড় দুই বাজারসহ প্রায় সব দেশেই রপ্তানি কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। তৈরি পোশাক শিল্পের বিশ্বে প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে কাস্টমস প্রক্রিয়াগুলো আরও সহজীকরণ, দ্রুততম ও হয়রানিমুক্ত করার জন্য এনবিআরের সার্বিক সহায়তা দরকার।
আমদানি করা কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি দ্রুত খালাসসহ শুল্ক, ভ্যাট ও বন্ড সংক্রান্ত সমস্যাদি দূর করতে সহযোগিতা চান তিনি।
রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, পোশাক শিল্পের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে কাস্টম সংক্রান্ত প্রক্রিয়াগুলোর যথেষ্ট প্রভাব আছে। এই বিষয়গুলো মোকাবিলা করতে গিয়ে শিল্পের উৎপাদন খরচ অনেকটা বেড়ে যায়। পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় বিলম্বের সৃষ্টি হয়। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা হারায় আমাদের শিল্প। রপ্তানিকারক তৈরি পোশাক শিল্পে লিড টাইম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কম লিড টাইমে আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাক সরবরাহের চাহিদা ক্রমবর্ধমান বাড়ছে। লিড টাইম হারালে বিশ্ব বাজারে আমরা প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়বো। এ ক্ষেত্রে কাস্টম সংক্রান্ত প্রক্রিয়াগুলো আরও আধুনিক, সহজ ও ব্যবসাবান্ধব করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ০১১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০২৪
এআর/আরআইএস